তখন আমরা ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে । যেহেতু ছেলের শনি ও রবিবার ছুটি ,তাই আমরাও প্রতি শনিবার পাড়ি দিচ্ছিলাম অজানার উদ্দেশ্যে । ছেলেই প্রস্তাব দিল এই শনিবার চলো যাই সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম । মাত্র ৪৭৩ কিলোমিটার । আমাদের যেহেতু ফিনল্যান্ডের ভিসা ছিল তাই ইউ.কে ছাড়া সেনজেন এলাকার ২৬ টা দেশে যেতে কোনো বাঁধাই ছিল না কারণ এই ২৬ টা দেশের মধ্যে যে কোনো একটা দেশের ভিসা থাকলেই হলো । ফিনল্যান্ড ,সুইডেন , নরওয়ে , তালিন আর ল্যাপল্যান্ড কমসময়ে একসাথে ঘুরে আসার প্রোগ্রাম বানানো যায় ।পাশাপাশি সব দেশ ।কোনো একটা দেশের ভিসা নিয়ে রওনা হলেই হলো । স্টকহোম থেকে জলপথেও যাওয়া যায় ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি ও তুর্কু , এস্তোনিয়ার তালিন , রিগা , লাতভিয়া, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ । কোনো অসুবিধা ছাড়াই ভালভাবে সব ঘোরা যাবে ।কারণ এদিককার লোকজন একদমই ঠকবাজ নয় আর সব ব্যাপারে ভাল পরামর্শ দেয় । আজকাল বিভিন্ন টুর অপারেটরা নিয়ে যাচ্ছে বা সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছে । যেকোন দেশে বসে অন লাইনেও ব্যবস্থা করা যায় । শুধু চাই পাসপোর্ট । স্টকহোমের কথা হতে প্রথমেই মাথায় আসে নোবেল প্রাইজের জনক আলফ্রেড নোবেলের জন্মস্থান এই স্টকহোম । প্রতি বছর ১০ ই ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে এই স্টকহোমে নোবেল পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয় । বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত মানুষজনের পদধুলি পরে এই স্টকহোমের মাটিতে । ‘শান্তি’ পুরস্কার প্রদান করা হয় নরওয়ে থেকে আর বাকি সব বিষয়ের পুরস্কার দেওয়া হয় স্টকহোম থেকে । ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রতি বছর চলছে এই অনুষ্ঠান । বাদ ছিল মাঝের দুটি বছর ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ । কারণ নরওয়ে ছিল সেইসময়ে জার্মানদের অধীনে । ১৪/১১/১৫ বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে রওনা হলাম বাল্টিক সি ধরে জাহাজে স্টকহোম , সুইডেনের রাজধানী । জাহাজতো নয় মনে হয় একটা বড় মল । ভিতরটা পাঁচতারা হোটেল । যে জাহাজে তালিন গেছিলাম এটা তার থেকেও অনেক বড়। ফিনল্যান্ডের সকাল ৯টা মানে সুইডেনের সকাল ১০টায় জাহাজ পৌঁছাল স্টকহোমের বন্দরে । জাহাজেই সকালের জল খাবার করে নিয়েছিলাম । সুইডিস বা ফিনিস খাওয়ারের খুব ভাল ধারণা না থাকায় ‘বুফে ব্রেক ফাস্ট’ ই আমরা পছন্দ করলাম। এক, সব খাবারের স্বাদ নেওয়া যাবে তারপর যেটা পছন্দ পেটপুরে খাওয়া যাবে। টাকাতে হিসাব করলেও দাম ন্যায্যই বলা যায় । আমাদের এখানকার ভালো হোটেলে এর থেকে বেশি দাম ।
কেউ না বললে ফিনল্যান্ড আর সুইডেন একই রকম লাগে। আমাদের চোখে মানুষের রঙ এক । ভাষাও মনে হয় এক যেহেতু বুঝিনা । রাস্তাঘাট একইরকমের । আবহাওয়ার সামান্য তারতম্য । দুদেশের হরফ অনেকটাই ইংরেজির হরফ । ফিনল্যান্ডের মতো কোন রাস্তায় পুলিশ নেই , কিন্তু সবাই সব কিছু মেনে চলছে । দুদেশের কাকের রঙ এক । আমাদের দেশের মতই শুধু গলার কাছের রঙটা সাদা । জাহাজে আসতে আসতে অনেকগুলো ছোট ছোট দ্বীপ দেখলাম । জাহাজ থেকে স্টকহোম শহরটাকে খুব সুন্দর লাগছিল যেমন লাগছিল হেলসিঙ্কিকে । ফিনল্যান্ড আর সুইডেন দুজায়গাতেই দেখলাম ছেলে ও মেয়েরা বেশ লম্বা লম্বা । স্টকহোম শহরের মধ্যে দিয়ে সমুদ্রের জল অনেকটাই ভিতরে চলে গেছে । নৌকা এবং স্টিমার চলছে তার উপর । ‘হপ অন হপ বোট’এ করেও এখানে দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা যায় । এছাড়া আছে ‘হপ অন হপ’ বাস । যেটা ইউরোপের সব শহরেই দেখতে পারছি । এছাড়া এখানকার মেট্রো রেল বেশ সাজানো গোছানো । এখানে মেট্রো রেলের পরিষেবা শুরু হয় ১৯৫০ সাল থেকে । পর্যটকদের যাতে কোনরকম অসুবিধা না হয় তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা আছে । আমরা গুগল ম্যাপ নিয়ে হেঁটেই ঘুরছি । একটু হেঁটে পৌছেগেলাম রাজবাড়িতে ।

বিশালাকার এই রাজবাড়ি ভাল করে দেখতে অনেকটা সময়ের দরকার । রাজারানীদের মুকুট ও অলঙ্কার আমাদের দেশের নবাবদের কথা মনে পরিয়ে দেয় । কত নামী দামী অলঙ্কার আমাদের দেশে ছিল । বিভিন্ন সময়ে বাইরে থেকে আসা লুঠেরাদের দল ঐ অলঙ্কার যদি লুট না করতো তাহলে আমরাও আমাদের জাদুঘরে সব দেখাতে পারতাম । লন্ডনের রাজবাড়ির ভিতরে ঢুকতে না পারার আফসোস এই রাজবাড়ি পুষিয়ে দিল । উপরি পাওনা লন্ডনের রাজবাড়ির মত একদল সৈন্য যখন রীতিমত কুজকায়াজ করে আগের সৈন্যদের জায়গা নেয় সেটা দেখার । পর্যটকদের কাছে এটা খুবই আকর্ষনীয় । একটা জমকালো ব্যাপার । রাজবাড়ি অনেক দেখেছি কিন্তু এরকম জীবন্ত রাজবাড়ি আগে দেখিনি । তারপর একটু হেঁটে পৌছে গেলাম জাতীয় জাদুঘরে। ওখান থেকে বেড়িয়ে সোজা চললাম শহর দেখতে । ধীরে ধীরে শহর সেজে উঠছে কারন সামনের মাসেই বড়দিন, এখানকার সবচেয়ে বড় উৎসব । সুইডেনের জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়াম দেখার মত । মনে পরে যায় বিশ্বকাপের কথা । রাত জেগে কত সুইডেনের ফুটবল খেলা দেখেছি । পর্যটকদের কাছে দুটি জায়গার আকর্ষণ খুবই তীব্র । এক স্টকহোম কনসার্ট হল, আরেকটি স্টকহোম সিটি হল । নোবেল পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান এই দুই জায়গাতে অনুষ্ঠিত হয় ।

বাচ্চারা বরফে স্কেটিং-এ খুব আনন্দ করছে এবং বড়রাও ওদের এই আনন্দকে খুব উপভোগ করছে । সব জায়গার মানুষের মন বোধহয় একইরকম , শুধু ভাষা আলাদা । সময় হয়ে আসছে । আমরা তিনজন আবার ঐ জাহাজেই মানে যেটাতে এসেছিলাম সেটাতেই ঐ কেবিনেই ফিরবো । তাই ঐ কেবিনে কিছু জিনিষ রেখে এসেছি হাল্কাভাবেই ঘুরে বেড়াবো বলে।সুইডেনের সাড়ে ৪ টা আমরা রওনা হলাম হেলসিঙ্কি । যতক্ষন স্টকহোম দেখা যাচ্ছিল ততক্ষন আমরা জাহজের ডেকে দাঁড়িয়ে । তারপর সহযাএিদের সাথে এগিয়ে চললাম ফিনল্যান্ড।


Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos
Reblogged this on Supriryo Roy – Blog.
LikeLike
Tapasi Sarkar
খুব সুন্দর লেখা।আমাদের ও ঘোরা হয়ে যাচ্ছে লেখা টা পড়ে।অনেক ধন্যবাদ।
Manatosh Baroi
Khub sundar
Apurba Neogi
Very nice description and it seems that we are also having a nice view about these excellent places.
Abhijit Samadder
আমরা কি সুন্দর পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই সুন্দর দেশগুলো ঘুরে নিচ্ছি বিনা পয়সায়।ছবির মতন বর্ণনা।তোমার লেখা পড়ে অনেক ভ্রমণের শ্বাদ পেলাম।
Swapan Dattaray
awesome . thank u .
Tapash Banerjee
Khub sundar
Badal Deb
Tumi shudhu Tumi ee !! Kono kotha hobe na !!!
Dipanta Bhattacharyya
You and doing a favour to us, we are touring the Scandinavian countries through you.
Shankar Banerjee
Supriyo, tomar lekhar haath eto chamotkar amar bhishon bhalo laaglo. Ebela te erokom lekha prayosoi beroy, tumio pathiye dao. Chheler sathe khub enjoy karo, tomar chheletikeo besh bhalo laagchhe. Happy journey.
Jaba Sengupta Roy
khub bhalo laglo
Surajit Das Gupta
ek kathay..darooon…
Dibakar Das
Khub Bhalo Lagolo , Bhalo theko,
Saila Roy
darun laglo dhekte
LikeLiked by 1 person
THANKS TO ALL
LikeLike