২৬/০৭/২০১৬ সকাল ১১.৪০ মিনিটে দমদম এয়ারপোর্ট থেকে রওনা হয়ে দিল্লী পৌছালাম দুপুর ২.২০ মিনিটে । বাইরে বেরোনোর সময় জানতে পারলাম ট্যাক্সি আর অটো দুটোই স্ট্রাইক । ওলা আর উবেরের বিরুদ্ধে । পরদিন সকাল সাড়ে দশটায় আমাদের প্লেন ছাড়বে দিল্লী থেকে । সোজা হেলসিঙ্কি । এবার ফিনল্যান্ডের ভিসার জন্য আর দিল্লী আসতে হয়নি , কোলকাতা থেকেই হয়ে গেছে । আর ফিনল্যান্ডের ভিসা থাকা মানে ইউ .কে ছাড়া ইউরোপের ২৬ টা দেশে যেতে কোনো অসুবিধা রইলো না । কোনো একটা দেশের ভিসা থাকলেই হলো । দুঘন্টার একটু আগেই পৌছে গেলাম এয়ারপোর্ট । বোর্ডিং পাস নিয়ে , লাগেজ জমা করে এগোলাম ইমিগ্রেশনের জন্য । তারপর সিকিউরিটি চেক সেরে অনেকটা হেঁটে ১০ নম্বর গেটের কাছে গিয়ে অপেক্ষায় রইলাম । ঠিক সাড়ে দশটায় রওনা হলাম দিল্লী থেকে হেলসিঙ্কি । পৌছালাম ওদের সময় অনুসারে ঠিক তিনটে পাঁচ মিনিটে অর্থাৎ আমাদের সময় অনুসারে বিকাল ৫ টা ৩৫ মিনিট । প্লেনে বসেই শুনতে পেলাম আমাদের যাত্রাপথ হবে ৫৬০০ কিলোমিটার । দিল্লি থেকে আফগানিস্থান ও মস্কোর আকাশপথ ধরে সোজা হেলসিঙ্কি । একসময় টিভিতে দেখতে পেলাম আমরা ৩৮০০০ ফিট ওপর দিয়ে যাচ্ছি । বাইরের তাপমাত্রা তখন -৫২ডিগ্রী সেন্ট্রিগ্রেড । আমাদের প্লেনের গতি ছিল ঘন্টায় ৮৭৮ কিলোমিটার । এক লাইনে ৮ জন করে বসার জায়গা । চারশোর ওপরে যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় । এয়ারপোর্টে ছেলে অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য । গাড়ি নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে দেখি ঝকঝকে আকাশ । যেদিকে তাকাই নীল আর নীল । সূর্যের আলো দেখে মনে হচ্ছে দুপুর দুটো ।গতবার ২/১১/২০১৫ তারিখ লন্ডন থেকে ফিনল্যান্ড এসেছিলাম তখন শীতকাল ।দেখেছি বিকাল ৩ টার মধ্যেই সূর্যদেব ঘুমিয়ে পড়তেন কিন্তু এখন শুনলাম ভোর ৪ টা থেকে রাত ১১ টা অবধি ওনি জেগে থাকেন ।আর ১১ টা থেকে ৪ টাও পুরো অন্ধকার হয়না , গ্রহনের সময়কার মত আলো থাকে । গতবার শীতের সময় গাছের পাতা সব ঝরে গেছিল , গাছের রঙ ছিল সাদা , প্রচুর বরফ পেয়েছিলাম ।এবার সবুজ রঙের আস্তরণে সারা শহর ঢাকা পরেছে । সত্যি সত্যিই নানা রঙের ফুল বলছে- ধন্য আমি মাটির পরে । গতবার ঘাসের রঙ ছিল সাদা আর এবার ঘাস তার নিজের রঙ ফিরে পেয়েছে ।যেহেতু এখানে এখন সামার চলছে , সবাই যেন বাঁধন হারা পক্ষী । ঘরে থাকতে কারো মন চাইছে না ।রাস্তায় প্রচুর লোকজন দেখা যাচ্ছে । মনে হচ্ছে , কি আনন্দ আকাশে বাতাসে । সবাই প্রাণ ভরে উপভোগ করছে সময়টাকে । এখানকার সামার আমাদের বসন্ত ও শীত কাল ।কাছেই বাড়ি । তাই পৌছে গেলাম তাড়াতাড়ি ।
গতবার ছিলাম হেলসিঙ্কি এবার আছি এসপো । হেলসিঙ্কির গায়ে লাগানো এই শহর । একটা দিন শুধু ঘরে বসেই কাটিয়ে দিলাম শরীরটাকে এখানকার মত মানিয়ে নেবার জন্য । বিকালে ১৫মিনিট হেঁটে পৌছে গেলাম সমুদ্রের ধারে ।এখানকার সৈকত খুব একটা বড় না । বাচ্চারা সমুদ্রের জলে লাফালাফি করছে কারণ ঢেউ নেই বললেই চলে । বালিতে রোদের মধ্যে অনেকেই শুয়ে আছে । এই সময়টা এখানকার সবাই যতটা পারে শরীরকে রোদের মধ্যে রাখে কারণ শীতকালে সূর্যের আলো খুব কম সময়ের জন্য থাকে এবং তেজও থাকে অনেকটা কম । সমুদ্রের ধারের রাস্তায় জগিং করতে দেখলাম অনেককেই ।এমনি করেই সময় বয়ে যাচ্ছিল । চমকে উঠলাম ঘড়ি দেখে । রাত দশটা বাজে অথচ বোঝার উপায় নেই সূর্যের আলো দেখে । মনে হচ্ছে পড়ন্ত বিকেল ।
গতবারের মত এবারেও ছেলে আমাদের জন্য পাস নিয়ে এলো যাতে আমরা ট্রেনে, বাসে,মেট্রোতে,ট্রামে অনায়াসে ঘুরতে পারি । আলাদা করে টিকিট কাটতে হবেনা । এক পাসেই সব । মনে পড়ে যাচ্ছিল গত ৭/১১/২০১৫ সকাল সকাল আমরা মেট্রো ধরে, তারপর ট্রামে করে গেছিলাম সমুদ্র সৈকতে । বাল্টিক সি বা সমুদ্র , খুবই শান্ত । স্টিমারে করে সোজা চলে গেছিলাম ‘সৌমেনলিনা দ্বীপ’ । মুম্বাইয়ের ‘গেট অফ ইন্ডিয়া’ থেকে ‘এলিফান্টা’ যাওয়ার মতো । স্টিমারে কুড়ি মিনিট মতো লাগে । ছোট্ট একটা দ্বীপ । ইউনেস্কোর হেরিটেজ লিস্টে এই জায়গাটার নাম আছে । ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অনেক নিদর্শন এখানে দেখা যায় । যুদ্ধের জন্য বানানো দূর্গ । ঐ সময়কার দুটো কামানও এখানে রাখা আছে ।

চারিদিকে সমুদ্র । অপূর্ব সুন্দর একটা জায়গা । পিকনিক করার পক্ষে আদর্শ । গরমের সময় এখানকার লোকেরা পিকনিক করে ,আমাদের উল্টো । কারণ এখানকার গরমকালে অনেকক্ষণ সূর্য থাকে এবং ঠান্ডা বেশ কিছুটা কম । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ফিনল্যান্ড বা জার্মানির লড়াইয়ের ইতিহাসে এই জায়গা ও ল্যাপল্যান্ডের অনেক ঘটনা আছে । মস্কো মাত্র ১০২০ কি.মি দূর । যাইহোক ইতিহাসের আলোচনায় যাচ্ছিনা । এখানে একটা সুন্দর চার্চ আছে । বেশ কয়েকটা রেস্তরাঁ ও একটা ছোট জাদুঘর আছে । যানবহনে ফিনল্যান্ডে আমাদের দেশের মতো অত শ্রেনী বা ক্লাস নেই । ট্রামে , ট্রেনে একটাই শ্রেনী । যাত্রী সংখ্যা আমাদের দেশের থেকে অবশ্যই অনেক কম । ট্রামে , বাসে , ট্রেনে জিনিষ তুলতে বা পেরাম্বুলেটারে একদম ছোট বাচ্চাকে নিয়ে উঠতে এখানে কোন কষ্টই হয়না, কারন সিড়িটা রাস্তার বা স্টেশনের প্লাটফর্মের সমান হয়ে যায় । বয়স্কদের উঠতেও কোন কষ্ট নেই । খোঁজ নিয়ে যেটুকু জানলাম তাতে এখানকার মানুষের মাসের মাহিনার তারতম্য আমাদের দেশের মতো নয় । কম আর বেশির মধ্যে পার্থক্য বেশিনা । শিক্ষা এবং স্বাস্থের জন্য এখানকার নাগরিকদের কোনো দাম দিতে হয় না । সব জায়গাতে হাসপাতাল ,স্কুল এবং খেলাধুলা করার ব্যবস্থা আছে । রাস্তাঘাটে কোথাও পুলিশ নেই অথচ সব কিছু নিয়ম ধরে চলছে । রাস্তায় কোন কুকুর নেই । রাস্তায় কেউ কিছু ফেলেনা সবাই পরিস্কার রাখে । থুথু নৈব নৈবচ । এখানে বাইরে ঠান্ডা থাকলেও বাসে,ট্রেনে,ট্রামে,দোকানে, ঘরে সর্বত্র সাধারণ তাপমাত্রা মানে ২১ থেকে ২২ ডিগ্রী । দারুনভাবে এরা বজায় রাখে । আর খাওয়ার জল সর্বত্রই একইরকম । যেখান থেকে খুশী জল খাওয়া যায় । লন্ডনের হোটেলে তো বাথরূম থেকেই খাবার জল নিচ্ছিলাম । বাথরূম এত পরিস্কার যে কোন ঘেন্না হয়না । কোন দেশেই জলের জন্য আলাদা কোনো ফিল্টার দেখলাম না । রাস্তাঘাটে গাড়ী,ট্রাম,বাস,মানুষের ভিড় সবই দেখলাম কিন্তু কোন গাড়ীর হর্ন শুনতে পেলাম না । যেকোন দূষণের ব্যাপারে এরা খুবই সচেতন । সচেতনতা সাধারন মানুষের রক্তে মিশে গেছে বলে আমার মনে হয় ।
গতবার ১৯/১১/২০১৫ মানে যেদিন অনেক রাত্রে স্পেন থেকে ফিরলাম , সেদিনই রাত্রে হেলসিঙ্কিতে প্রচুর বরফ পড়েছিলো । চারিদিক ছিল সাদা । তাপমাত্রা ছিল -৭ ডিগ্রী । ছবি তোলার জন্য বাইরে বেড়িয়ে পড়েছিলাম । মন আনন্দে উড়তে লাগছিলো । অনেক ছবি তুলেছিলাম । তার ঠিক দুদিন পরে আবার বরফ পরা দেখেছিলাম দুপুরবেলা । অনেকদিন আগে বরফ পড়তে দেখেছিলাম কেদারনাথে আর ঐদিন পেলাম । পাজা তুলার মতো বরফ নাচতে নাচতে নীচে নেমে আসছিল । সবকিছুকে সাদা আস্তরণে ঢেকে দিচ্ছিল ।

বিভিন্ন রঙের গাড়ি যেগুলো পার্কিংয়ে দাড়িয়ে ছিল ,সবার রঙ ধীরে ধীরে সাদা হয়ে গেছিল ।এতো পাহাড় নয় , শহর ।মুহুর্তের মধ্যে রাস্তা থেকে বরফ পরিস্কার করার গাড়ি এসে গেছিল । কিছুক্ষণ পরেই আবার সব কিছু আগের মতন । নরওয়ে , সুইডেন ,তালিন , ল্যাপল্যান্ড , ডেনমার্ক সবকটা জায়গাই কাছাকাছি । একসাথেই ঘুরে আসা যায় ।আজকাল অনেক টুর অপেরাটের এইসব জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বা ঘোরার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ।
ইউরোপ খুব ভাল লাগলো । প্রতিটা জায়গাই ভালবেসে ফেলেছি । এখানে প্রায় সবকটা বড় বড় মলেই ঘুরলাম । মলে কোথাও কোন সিকিউরিটির লোক চোখে পড়লো না । প্যাকেট বা ব্যাগ কোন কিছুই মলের বাইরে জমা রাখতে হয়না । মানুষের প্রতি বিশ্বাস ,এটা খুব ভাল লাগছিল । এখানে সবাই স্বাবলম্বী । সব কিছু নিজেদেরকে করতে হয় । আমাদের দেশের মতো অত কাজের লোকের উপর নির্ভর করে এখানে চলা যাবেনা । বয়স্করা নিজেরাই নিজেদের জিনিষ বহন করে । তার জন্য ট্রলি ব্যাগ আছে । যাদের হাঁটতে অসুবিধা তাদের জন্য ছোট্ট অথচ চালানো সহজ ব্যাটারী চালিত গাড়ীর ব্যবস্থা আছে । ছোট ঐ গাড়ী নিয়ে সর্বত্র যাওয়া যায় । ভারতীয় শাক সব না পাওয়া গেলেও সবজি প্রায় সবই পাওয়া যায় । দেখতে কোন কোনটা একটু আলাদা । যেমন শশা প্রথমে আমরা কিনতে গিয়ে চিনতেই পারিনি । মাছ পাওয়া যায় অন্য ধরনের । মাংস সবই পাওয়া যায় । ফলও প্রায় সবই । মিষ্টির দোকান দেখিনি । শুধু জিলিপি পাওয়া যায় । ইরানীদের দোকানে । যদিও জানি জিলিপির উদ্ভব ভারতবর্ষ নয় । বেশ কয়েকটি ভারতীয় দোকান এখানে আছে যেখানে ভারতীয় মশলা সব পাওয়া যায় । যত জায়গা ঘুরলাম সব জায়গাতে পুলিশ আর ট্যাক্সি র উচ্চারণ এক । বানান আলাদা হতে পারে । আরেকটা ব্যপার আমাদের নজরে এসেছে । এখানে জানলায় , বারান্দায় কাচ লাগানো কিন্তু কোন গ্রিল বা লোহার শিক নেই । আমরা ভাবতেই পারিনা । অনেক আগে সিকিমে দেখেছিলাম । কিন্তু সেটাতো পাহাড় । চুরি , ছেনতাইয়ের কোন গল্প এখানে নেই । মিশে দেখলাম সব ব্যাপারে এনারা ভালই খবর রাখে । ব্যবহার সুন্দর । অহেতুক কৌতুহল নেই । কাউকে আঘাত করে মজা করে না । সোজাসুজি কথা বলতে পছন্দ করে । শুনলাম এখানে দুটো দূর্গাপূজা হয় । একটা ভারতীয়দের আর একটা বাংলাদেশীয়দের । গতবার পার্ভো ঘুরে এসেছি তাই এবার আর যাচ্ছিনা । পার্ভো , ফিনল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর । এই শহর অতি প্রাচীন । ১৩০০ খৃষ্টাব্দে এই শহরের পত্তন হয় । শহরের মধ্য দিয়ে সমুদ্রের জল প্রবেশ করাতে জায়গাটা অনেকটা ভেনিসের মত লাগে । মধ্যযুগীয় এই শহর আবার অনেকটা তালিনের মতো দেখতে । তালিনের বাড়ীঘর ছিল পাথরের তৈরি আর এখানকার বাড়ীঘর কাঠের । এছাড়া দেখতে একইরকম ।

পার্ভো ঘুরে আমরা নোকিয়ার অফিস মানে এখন যেটা মাইক্রোসফটের অফিস, দেখতে এস্পো গেছিলাম । ‘নোকিয়ানভিরতা’ নদীর পাশে মাইক্রোসফটের বা নোকিয়ার বিশাল অফিস । জায়গাটা সত্যিই খুব সুন্দর । গতবারই পার্লামেন্ট , স্টেডিয়াম , জাদুঘর সবই দেখা হয়ে গেছিল । তাই এবার বেছে বেছে প্রোগ্রাম করা হচ্ছে । এখান থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে একটা দারুন পিকনিকের জায়গা আছে শুনলাম । জঙ্গল , লেক এবং ছোট পাহাড় , সবই আছে । জায়গাটার নাম নুউক্সিও । ঘুরে আসলাম । দারুন লাগলো জায়গাটা । আরো অনেক প্রোগ্রাম হচ্ছে , লেখতে গেলে একটা বই হয়ে যাবে । ইউরোপের কয়েকটা দেশ দেখার পর ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় যে প্রযুক্তিবিদ্যাতে আমরা খুব একটা পিছিয়ে নেই । কিন্তু প্রযোগ করে আমাদের দেশে কম সংখ্যক মানুষ । পরিকাঠামোতে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে । যদিও আমাদের পিছিয়ে থাকার কথা নয় । আমাদের দেশের বেশিরভাগ জায়গায় শহর আর গ্রামের মধ্যে সুযোগ সুবিধার পার্থক্য অনেক । এখানে সেটা নেই বললেই চলে । সমস্যার কথা বলতে গেলে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা চলে আসতে বাধ্য । তাই এখানে ইতি টানছি ।


Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos
Alok Kumar Saha
Khub sundar likhechen. Khub vlo laglo.
Tapan Kumar Sarkar
Apurba ✅
Priyanka Barman
Your words truly depict the beauty.. thanks for sharing sir.
Kanti S
Khub sundar lekhecho
Naru Mahato
Good morning
Apurba Neogi
Superbly described writing with wonderful video and fantastic made for each other photograph. It was so brilliant writing that I liked and enjoyed it very much.
Bharati Banerjee
Bhishon bhishon sundor pic gulo
Mita Sengupta
Khub bhalo laglo.
Chitra Paul
Tomader chokhe dia amar thakbe nilm
Banya Basu
Darun photography
LikeLike