বেলভিউ ডাউনটাউন পার্ক: শহরের ভেতর এক টুকরো প্রশান্তির জঙ্গল

বেলভিউ ডাউনটাউন পার্ক: শহরের ভেতর এক টুকরো প্রশান্তির জঙ্গল

বেলভিউতে পা রাখার পর ছেলের কাছে শুনেছিলাম যে ওখানে কাছেই একটা খুব ভাল পার্ক আছে । দুদিন পরই ছুটলাম সেই পার্ক দেখতে । দেখলাম পার্কের বাইরে বড় করে লেখা আছে বেলভিউ ডাউনটাউন পার্ক। নামটা বেশ গম্ভীর, মনে হচ্ছিল শহরের মাঝখানে ছোটখাটো একটা বাগান হবে। কিন্তু গিয়ে দেখি, ওরে বাবা ! একেবারে সবুজ সমুদ্র! “ওয়াও!” বলে হাঁ করে দাঁড়িয়ে গেলাম!
ভাবো তো — একদম শহরের বুকের ভেতরে, কাঁচের বিল্ডিং ঘেরা জায়গায়, এত বড় একটা সবুজ মাঠ! যেন শহরের মাঝখানে কেউ বিশাল এক টুকরো প্রকৃতি রেখে দিয়েছে, যাতে সবাই প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে।

মাঠটা এত বড় যে, একবার হেঁটে পার হতে গেলে মনে হয় ফ্রি ফিটনেস ট্রেনিং চলছে! মাঝখানে একটা সুন্দর কৃত্রিম লেক, চারপাশে ঘিরে আছে ছোট্ট ক্যানেল যেন পার্কটা জল দিয়ে বেষ্টিত একটা সবুজ রাজ্য। সেই ক্যানেল আর লেকের জলে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাসেরা — কেউ ডুব দিচ্ছে, কেউ প্রেমালাপে মত্ত, কেউ নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ভাবছে, “আজ বেশ লাগছে!”

ক্যানেলের চারপাশে আছে হাঁটার রাস্তা, দৌড়ানোর রাস্তা, এমনকি “হাঁটতে হাঁটতে হাফিয়ে গেলে একটু বিশ্রামের রাস্তা” — মানে বেঞ্চ!
যেগুলোতে বসে বিশ্রাম নেওয়ার চেয়ে বেশি কাজে লাগে ‘ভাবার জায়গা’ হিসেবে।

বসে থেকে দেখি, কেউ জগিং করছে, কেউ দৌড়ে এসে বেঞ্চে বসে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, মুখে একচিলতে হাসি!

বেলভিউ পার্কে গেলে একটা জিনিস চোখে পড়ে  — এখানে কুকুররা মানুষদের থেকেও খুশি! প্রত্যেকেই পোষা, রাস্তার কোন কুকুর নেই ।
ওরা খেলছে, দৌড়াচ্ছে, ঝাঁপাচ্ছে… মনে হয় যেন ওরাই পার্কের ম্যানেজার!
আর সবচেয়ে অবাক লাগে — কুকুর যদি রাস্তায় একটু “দুষ্টুমি” করে ফেলে, তখন মালিকরা নিজে হাতে প্লাস্টিক ব্যাগে সেটা পরিষ্কার করে।আবার এখানে কেউ রাস্তার ওপর কুকুরকে খেতে দিয়ে রাস্তা নোংরা করে না ।

এছাড়া পার্কের একপাশ জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে একটা বড় চিলড্রেন পার্ক যেন আনন্দের এক ছোট্ট স্বর্গ। বাচ্চাদের বিনোদন ও শারীরিক বিকাশের জন্য সেখানে সাজানো আছে নানান রঙিন খেলার সরঞ্জাম। বিকেল হলেই হাসি-খুশির কলরবে মুখর হয়ে ওঠে পুরো পার্ক। দোলনা, স্লাইড আর দৌড়ঝাঁপের ভিড়ে বাচ্চাদের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। পাশে বসে থাকা বয়স্কদের মুখেও তখন ফুটে ওঠে প্রশান্তির হাসি—তারা উপভোগ করেন শিশুদের সেই নির্মল আনন্দের দৃশ্য।

পার্কের চারপাশে যত গাছ, তত ফুল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় — কেউ ফুল ছিঁড়ে নেয় না। এখানে “ফুল ভালোবাসা মানে ছিঁড়ে নেওয়া নয়, রক্ষা করা।”

সেই প্রথম দিন থেকে বিকেলে পার্কে যাওয়া আমাদের একরকম অভ্যাস হয়ে গেছে। একদিনও দেখিনি পার্কে কোথাও খাবারের প্যাকেট, কাগজ, প্লাস্টিক পড়ে আছে। যেন সবাই বুঝে গেছে — সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। কেবল প্রয়োজন একটু সচেতনতা আর একটু ভালোবাসা ।

তাই বলি, বেলভিউ ডাউনটাউন পার্ক শুধু একটা পার্ক নয় —
এটা আসলে একটা “ভদ্রতা শেখার স্কুল”, যেখানে শৃঙ্খলা জোর করে নয়, স্বভাবত আসে। যেখানে থেকে আমরা শিখতে পারি  —
পরিচ্ছন্নতা শুধু দায়িত্ব নয়, এটা সৌন্দর্যের ভাষা।”

21 thoughts on “বেলভিউ ডাউনটাউন পার্ক: শহরের ভেতর এক টুকরো প্রশান্তির জঙ্গল

  1. Ratnabali Chatterjee

    কি সুন্দর করে বেলভিউ পার্কের বর্ণনা দিয়েছেন।মনে হল আমিও যেন মনের হাত ধরে পৌঁছে গেছি বেলভিউ পার্কের ভিউ দর্শনে। সত্যি আমাদের দেশে এই পরিস্কার বিষয়ক সচেতনতা বড় কম।যা বড় কষ্ট দেয়।পার্কের ছবিগুলো একেবারে লাজবাব। কয়েক টুকরো সৌন্দর্য চোখকে ভারি আনন্দ আর আরাম দিল।

    Like

  2. Surajit Das Gupta

    এ শুধু দেখার নয়, শেখার। আমরা চাইলেই আমার বাড়ি, আমার পাড়া, আমার শহর সুন্দর করে সাজাতে পারি। শুধু অর্থ নয়, চাই সুন্দরের বোধ, চাই মানসিকতা। চমৎকার লাগলো লেখা ও ছবিগুলো।

    Like

  3. Gautam Chaki

    সুন্দর ছবিগুলো সুন্দর লেখা, আমরা খালি আমাদের নিজেদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখি বাইরের পরিবেশের ব্যাপারে একদম খেয়ালই রাখি না, অ্যাকচুয়ালি আমাদের সচেতনতার খুবই অভাব আছে

    Like

Leave a reply to supriyoroy Cancel reply