সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি নগরী সানিভেল ভ্রমণ  – সুপ্রিয় রায়  

সানফ্রানসিসকো থেকে রবিবার সকাল সকাল আমরা চলে আসলাম সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি নগরী সানিভেলে , যেখানে ছেলে কাজে এসেছে । আর আমরা এসেছি ওর লেজুর হয়ে । ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালির কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অনন্ত প্রযুক্তি-রাজ্য, আর সেই রাজ্যেরই প্রাণকেন্দ্র সানিভেল। আমেরিকার এই ছোট্ট শহরটি ঘুরতে এসে মনে হলো, এখানে প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি ভবন যেন ভবিষ্যতের গল্প বলে।

আমরা যখন সানিভেলে পৌঁছালাম, প্রথমেই চোখে পড়ল ঝকঝকে আবাসিক এলাকা আর সবুজ পার্ক। শহরের আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক—না খুব গরম, না খুব ঠান্ডা। অথচ এই শান্ত পরিবেশের মাঝেই লুকিয়ে আছে প্রযুক্তির তুঙ্গশিখর।

ছেলে অফিস বেড়োতেই আমরা দুজন বেড়িয়ে পরতাম সানিভেল ঘুরতে । ঘুরতে ঘুরতে মনে হতো যেন আমরা এক বিশাল কর্মশালার মধ্যে এসে  পড়েছি। এখানে ইয়াহু, লিংকডইন, জুনিপার নেটওয়ার্কসের মতো বড় বড় সংস্থার সদর দপ্তর চোখে পড়ল। কিন্তু এর বাইরেও আশেপাশেই দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেক জায়ান্টদের আস্তানা।

উত্তরে মাউন্টেন ভিউতে গুগলের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টার, যেন এক শহরই নিজের মধ্যে তৈরি করে ফেলেছে। কুপারটিনোর অ্যাপেল পার্ক—“স্পেসশিপ” আকৃতির সেই ভবন, যা শুধু অফিস নয়, এক স্থাপত্যের বিস্ময়। মেনলো পার্কে মেটার বিশাল ক্যাম্পাস, যেখানে নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল পৃথিবী গড়ে উঠছে প্রতিদিন। অ্যামাজনের গবেষণা কেন্দ্রগুলো ছড়িয়ে আছে সানিভেল ও আশেপাশের এলাকায়। আর মাউন্টেন ভিউয়ের নাসা Ames Research Centre তো একেবারে স্বপ্নের জায়গা — মহাকাশ গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্স নিয়ে এখানকার গবেষণা সিলিকন ভ্যালির উদ্ভাবন সংস্কৃতিকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

দিন শেষে যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল, সানিভেলের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল — সানিভেল শুধু একটি শহর নয়, এটি ভবিষ্যতের কর্মশালা যেখানে তরুণ উদ্যোক্তারা স্বপ্ন দেখে , গবেষকরা ভবিষ্যতের প্রযুক্তির খোঁজে মগ্ন থাকে, আর সাধারণ মানুষ এক উজ্জ্বল জীবনের সন্ধানে এগিয়ে চলে।। গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপেল, মেটা ও নাসার মতো প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে এই শহর প্রতিদিন নতুন নতুন স্বপ্ন গড়ে তোলে এবং মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

রবিবার সন্ধ্যায় সানিভেল থেকে সিয়াটেল ফেরার পথে বিমানের জানলা দিয়ে যেন এক জাদুর খেলা দেখলাম। বিমানের বাম পাশের জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি রঙিন আলোয় ঝলমল করছে পৃথিবী, আর ডান পাশ দিয়ে উঁকি দিলে দেখি অন্ধকারে ঢেকে গেছে সবকিছু। যেন কেউ বিশাল ক্যানভাসে একই সঙ্গে বিকাল আর রাত এঁকে দিয়েছে। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আমরা দু’টি জগতের মাঝ বরাবর বসে আছি আর আকাশ নিজেই বিখ্যাত নজরুল গীতি  গাইছে—‘আধো ধরণী আলো আধো আঁধার ।’

15 thoughts on “সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি নগরী সানিভেল ভ্রমণ  – সুপ্রিয় রায়  

  1. Partha Pratim Dasgupta

    ক্যালিফোর্নিয়া, সানফ্রান্সিস্কো, সিলিকন ভ্যালি এই নামগুলো এত শ্রুতিমধুর যে শুনলেই মনেহয় অনেক উন্নত অনেক সুন্দর পরিবেশ সমৃদ্ধ। এরসাথে তোমার চোখে দেখা আর তার বর্ণনা আমাদের মুগ্ধ করে।

    Like

  2. Ratnabali Chatterjee

    খুব ভাল লাগল সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি নগরী সানিভেল ভ্রমণ কাহিনী।

    লিপি,তোদের সঙ্গে সঙ্গে এই মানসভ্রমণ সত্যি বড় উপভোগ্য।

    Like

Leave a reply to supriyoroy Cancel reply