Seattle থেকে Long Beach Peninsula – এক দিনের সমুদ্রভ্রমণ- সুপ্রিয় রায়

গতকাল অর্থাৎ এখানকার রবিবার ৩১/০৮/২০২৫ তারিখ সকালবেলা প্রাতরাশ সেরে আমরা তিনজন – আমি , আমার স্ত্রী লিপিকা আর আমাদের ছোট ছেলে স্বস্তিক গাড়ি নিয়ে সিয়াটেলের বেলভিউ থেকে রওনা দিলাম – উদ্দেশ্য Astoria  আর ১৭০ মাইল দূরে পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা বিচ Long Beach Peninsula ভ্রমনে । বেলভিউ হল সিয়াটল থেকে ওয়াশিংটন লেক জুড়ে অবস্থিত ওয়াশিংটনের পঞ্চম বৃহত্তম শহর । সকালের হালকা কুয়াশা আর কফির গন্ধ নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে চললাম এখানকার টাকোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ডান পাশে রেখে । গাড়ির জানালার ওপারে শহরের কোলাহল ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল, আর তার জায়গা নিল সবুজ অরণ্য আর নদীর পাশের ফাঁকা রাস্তা। মাঝে মাঝে Columbia River-এর ঝলমলে জলরাশি চোখে পড়ল—সূর্যের আলোয় যেন রূপালি ঝিলিক খেলছে।

দেড় ঘণ্টা ভ্রমণ করার পর রাস্তার পাশে অনেক মানুষের ভিড় দেখে হালকা স্ন্যাক্স নেওয়ার জন্য সবেমাত্র একটা পেট্রোল পাম্পের লাগোয়া ডিপারমেনটাল স্টোরে দাঁড়িয়েছি , সামনের রাস্তায় গাড়ি যাতায়াত বন্ধ করে দিল। শুনলাম আগামীকাল লেবার ডে উপলক্ষে আজ বড় একটা শোভাযাত্রা বেড়িয়েছে , সেটা এখনি এই পথ দিয়ে যাবে । তাই এই রাস্তা আধ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে । ছেলে বলল প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকদের অধিকার, শ্রম আন্দোলন এবং শ্রমজীবীদের অবদানের সম্মানে লেবার ডে উদযাপন করা হয় এবং আমেরিকায় ছুটি থাকে ।

আধ ঘণ্টা পরে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে গাড়ি ছুটিয়ে প্রায় চল্লিশ মিনিট  পর পৌছালাম Oregon এর Astoria তেColumbia River-এর ওপর দিয়ে ৪.১ মাইল লম্বা অ্যাস্টোরিয়া-মেগলার ব্রিজ পার হওয়ার অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। অ্যাস্টোরিয়া-মেগলার ব্রিজ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের একটি স্টিলের ক্যান্টিলিভার থ্রু-ট্রাস ব্রিজ যা নিম্ন কলম্বিয়া নদীকে বিস্তৃত করে।

দারুন সুন্দর লাগছিল ঐ পরিবেশ । একদিকে পাহাড় আরেক দিকে অ্যাস্টোরিয়া শহর আর মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে বিশাল Columbia River । অ্যাস্টোরিয়ার ছোট্ট শহরটা যেন ইতিহাস  আর আধুনিকতার মিশেল—Astoria Column থেকে চারপাশের দৃশ্য দেখে মনে হলো, এই ভ্রমণ সত্যিই পূর্ণতা পেল।ঘড়িতে তখন প্রায় তিনটে বাজে , তাই দুপুরের আহার ওখানেই একটা চাইনিজ রেস্তরাঁতে সেরে নিলাম ।

ক্লান্তি কাটল, আর সামনের পথের উত্তেজনা আরও বাড়ল। বিকেল নাগাদ যখন Long Beach Peninsula-য় পৌঁছালাম, তখন আকাশে মেঘের ফাঁক দিয়ে আলো খেলছে—একেবারে সমুদ্র দেখার উপযুক্ত সময়।

প্রথম গন্তব্য Long Beach Boardwalk কাঠের ওই সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের গর্জন আর ঠান্ডা বাতাস যেন পুরো শরীর জুড়ে ভরে গেল। চোখের সামনে শুধু বিশাল জলরাশি—যেন পৃথিবীর শেষ সীমা এখানেই।

তারপর পা রাখলাম World’s Longest Beach-এ। সত্যিই সৈকতের শেষ নেই—২৮ মাইল লম্বা এই সমুদ্রতটে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল, আমরা যেন এক অনন্ত যাত্রায় নেমে পড়েছি। দূরে দূরে ঘুড়ি উড়ছে, শিশুরা বালুর ওপর দৌড়াচ্ছে, আর ঢেউ এসে বারবার ভিজিয়ে দিচ্ছে পা। সোনালি আলোয় ভেজা ভেজা বালুর ওপর হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল, শহরের সব চাপ-পীড়া যেন গলে গেছে।

তারপর গেলাম Cape Disappointment State Park-এ। নামটা শুনতে কেমন যেন হতাশার মতো, কিন্তু জায়গাটা একেবারে উল্টো—অপূর্ব। উঁচু পাথুরে ক্লিফের ওপর দাঁড়িয়ে North Head Lighthouse-এর দিকে তাকালে মনে হয়, এই সমুদ্র আর আকাশই পৃথিবীর আসল বিস্ময়। বাতাসের আওয়াজে মনে হচ্ছিল যেন সমুদ্র নিজেই গান গাইছে।

রাতে ফেরত এলাম বেলভিউতে । মনে হলো, এক দিনের হলেও Long Beach Peninsula আমাদের ভেতর নতুন এক শান্তি আর আনন্দের স্মৃতি দিয়ে গেল।

21 thoughts on “Seattle থেকে Long Beach Peninsula – এক দিনের সমুদ্রভ্রমণ- সুপ্রিয় রায়

  1. Partha Pratim Dasgupta

    বিদেশের মাটিতে দুরন্ত গতিতে অসাধারন সৌন্দর্য্য বেষ্টিত ভ্রমণের বৃত্তান্ত তোমার

    লেখনীতে পড়তে পড়তে দেশের মাটিতে শুয়ে-বসে শুধু কল্পনার বিমানে ভর করে চ’লে যাই তোমার পাশে তোমার হাত ধরতে।

    Like

  2. Uttam Dey

    অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য, তোমার লেখনীর মধ্য দিয়ে যেন চোখের সামনে ভাসছে। খুব ভালো লাগলো সুপ্রিয়দা, খুব খুব আনন্দ করো 💐💐💐

    Like

  3. Ratnabali Chatterjee

    এই ভ্রমণের অংশীদার হয়ে খুব আনন্দ পেলাম।”কত অজানারে জানাইলে তুমি” — না বলে পারলাম না। অনবদ্য প্রকৃতির অসামান্য আলোকচিত্র।

    Like

Leave a reply to supriyoroy Cancel reply