সময়কে হার মানানো ভ্রমণ – সুপ্রিয় রায়

২৬ আগস্ট, ২০২৫। বিকেল তিনটের ঘন্টা বাজতেই আমরা দুজন আকাশপথে যাত্রা শুরু করলাম ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কি থেকে, গন্তব্য আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিক।

আইসল্যান্ড—ইউরোপের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এক অনন্য দ্বীপ রাষ্ট্র। আগুন আর বরফের মিলনক্ষেত্র—যেখানে গর্জে ওঠা আগ্নেয়গিরি আর অনন্ত বিস্তৃত হিমবাহ একইসাথে বুকে ধারণ করে আছে প্রকৃতির বিস্ময়। উষ্ণ প্রস্রবণ, লাভাক্ষেত্র আর গর্জনময় জলপ্রপাতের সমাহার যেন প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রূপকথার স্বর্গরাজ্য। তাই গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই আমাদের মনে উত্তেজনার ঝড় বইছিল।

হেলসিঙ্কি থেকে বিকেল তিনটেয় রওনা দিয়ে তিন ঘণ্টা দশ মিনিটের আকাশ ভ্রমণ  শেষে যখন আমরা রেইকিয়াভিকে নামলাম, তখন স্থানীয় সময় দেখাল বিকাল ৩টা ১০ মিনিট। মনে হলো, যেন আকাশ আমাদের উপহার দিয়েছে তিনটি অতিরিক্ত ঘণ্টা। আসল রহস্য সময়ের পার্থক্য—হেলসিঙ্কি আর আইসল্যান্ডের ফারাক ঠিক তিন ঘণ্টার।

ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত সেরে আমরা আবার প্লেনে উঠলাম। ঘড়ি তখন বিকাল ৪টা ৫৬ মিনিট। বিমান ছাড়ল বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে। এবার সামনে বিশাল আটলান্টিক মহাসাগর, আর লক্ষ্য—আমেরিকার সিয়াটেল।

আবার আইসল্যান্ড থেকে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে রওনা দিয়ে সাত ঘণ্টার সেই দীর্ঘ যাত্রার পরও যখন আমরা সিয়াটেলে নামলাম, ঘড়ি তখনও ২৬ আগস্ট, আর সময়—বিকাল ৫টা ১৫ মিনিট। মনে হলো, যেন সময়ের স্রোত উল্টো দিকে বয়ে গেছে, আমাদের জীবনে আবার সাত ঘণ্টা ফিরে এসেছে। পৃথিবীর পশ্চিমমুখী ঘূর্ণনই এর আসল রহস্য—একই সূর্যের আলো, অথচ ভিন্ন ভিন্ন ঘড়ির কাঁটা। ঠিক তেমনি কলকাতা  থেকে আমেরিকার সিয়াটেল 12 ঘণ্টা এবং 30 মিনিট এগিয়ে রয়েছে । যখন সিয়াটেল, ওয়াশিংটন এ ১:১৮PM বুধবার হলে কলকাতা, ওয়েস্ট বেঙ্গল, ভারত এ ১:৪৮ AM বৃহস্পতিবার ।

এবার যাত্রার শেষ প্রান্তে আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক নিয়েই আমরা বেরিয়ে এলাম। আর বাইরে এসে যে দৃশ্যটা চোখে পড়ল, তাতেই সব ক্লান্তি উধাও—আমাদের ছোট ছেলে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। সেই মুহূর্তে ভ্রমণের সব অনিশ্চয়তা, দীর্ঘ যাত্রার সমস্ত ক্লান্তি মিলিয়ে গেল এক নিখাদ আনন্দে।

32 thoughts on “সময়কে হার মানানো ভ্রমণ – সুপ্রিয় রায়

  1. Abhijit Samadder

    অনেক অজানা তথ্য দিলে। তোমার লেখনী এত সুন্দর।এখন ছোট ছেলের সান্নিধ্য উপভোগ কর। ভালো থেকো এবং ছবি পাঠানো।

    Like

  2. Krishnasis Chatterjee

    খুবই ভালো লাগলো তোদের আকাশ পথের ভ্রমণ বৃত্তান্ত. Reykjavik এর নাম প্রথম শুনি Bobby Fisher এবং Boris Spasky এই দুজনের দাবা খেলার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার অসাধারণ এক যুদ্ধের জন্য.

    তোদের আমেরিকা সফর খুবই আনন্দে কাটুক এই কামনা করি.

    Like

  3. Sudhir Bagchi

    দারুন দারুন তোমার বর্ণনা সত্যি অসাধারণ। তোমার বৌদিকে পড়ে শুনালাম, তার মন্তব্য, সত্যি সুপ্রিয়র লেখার হাত চমৎকার। খুব ভাল লাগল ভাই সাবধানে থাক ছেলেদের নিয়ে খুব আনন্দ কর।

    Like

  4. Aparajita Sengupta

    আকাশপথে ভ্রমণের বর্ণনা খুব ভালো লাগল, তোমাদের সাথে আমরাও ঘুরছি, টুবাই এর সাথে এবার খুব ভালো সময় কাটাও। আমরা ছবি দেখা ও লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থেকো তোমরা সকলে। ❤🧡

    Like

  5. Ratnabali Chatterjee

    সুপ্রিয়দার লেখাটা পড়ে মনে হল,বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি? সত্যি কত অজানা তথ্য জানতে পারলাম। এত বৈচিত্র্যময় আর বিস্ময়কর আমাদের ধরিত্রী মার রূপ যে তার থৈ পাওয়া কঠিন। আপনাদের আগামী দিনগুলো আনন্দে কাটুক এই কামনা রইল।

    Like

  6. Lipika Roy

    বর্ণময় পৃথিবী সত্যি বিস্ময়কর সেইজন্যই বিস্ময় তাই জাগে জাগে আমার প্রান। আধো ধরণী আলো আধো আঁধার।

    Like

  7. Partha Pratim Dasgupta

    ফিনল্যান্ড থেকে আইসল্যান্ডে আসার ভ্রমণ বৃত্তান্তের মাঝে আগ্নেয়গিরি আর হিমগিরির সহাবস্থানের প্রা কৃতিক বিস্ময় উপলব্ধি করার চেষ্টা করলাম। এবার সেই আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোত আর হিমবাহের জলপ্রপাতের দৃশ্য পরবর্তী এপিসোড-এ দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

    Like

  8. Dipanwita Ganguly

    দাদা ও লিপি তোরা ভালোভাবে ছোট ছেলের কাছে পৌঁছে গেছিস ভালো থাকিস এনজয় করিস নমস্কার ছোট ছেলেকে আনন্দ দিস। আমি এখানে জুডানে আছি চারিদিকে পাহাড় জায়গা এক সপ্তাহ থাকবো।

    Like

Leave a comment