গত শুক্রবার ০৮/০৮/২০২৫ ঘড়িতে তখন বিকেল পাঁচটা বাজে , আকাশে তখনও উজ্জ্বল সোনালি আলো , আমরা চারজন মানে আমি , লিপিকা , সায়ক আর মধুপর্ণা গাড়িতে চেপে রওনা হলাম—হেলসিঙ্কি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের সাস্থমেলার( Sastamala ) এক ছোট্ট গ্রামে। শহরের উঁচু দালান আর ব্যস্ত রাস্তাগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে লাগল, আর তার জায়গা নিল অসীম সবুজ। শহরের বাড়িঘর পেরোতেই রাস্তার দু’পাশে সাজানো অগুনতি গাছের সারি, যেন সবুজের দেওয়াল ঘিরে রেখেছে পথকে। মনে হচ্ছিল, কোনো ছবির দৃশ্যের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি—সবুজ জঙ্গলের বুক চিরে মসৃণ রাস্তার ওপর দিয়ে গাড়ি ছুটছে ঘণ্টায় একশ কিলোমিটার বেগে। মাঝে মাঝে চোখে পড়ছিল সুবিস্তৃত শস্যক্ষেত, ছোট নদী আর আকাশের সাথে মিশে যাওয়া নীল লেক। রাস্তার ধারে যেখানে পেট্রোল পাম্প, সেখানেই রয়েছে সুপারমার্কেট আর রেস্তোরাঁ—যেন পথিকদের জন্য ক্ষণিকের আশ্রয় আর পথের ক্লান্তি ও ক্ষুধা মেটানোর ছোট্ট স্বর্গ।
যেহেতু এখানকার মানুষজন রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে নেয়, তাই আমরা পথে থেমে হালকা ডিনার সেরে নিলাম—নইলে গ্রামে গিয়ে রাতে খেতে অসুবিধা হতে পারে এই চিন্তা করে ।
বিকেলের রোদ ঢলে পড়ার আগেই আমরা পৌঁছে গেলাম সেই গ্রামের গেস্টহাউসে। বিশাল এক খেতের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা সেই গেস্টহাউস যেন ছবির মতো সুন্দর। সময় তখন রাত আটটা কিন্তু আকাশে যথেষ্ট আলো । আকাশের সোনালী আলোয় আমাদের গেস্টহাউসটাকে যেন স্বপ্নের মতো লাগছিল। অবাক হয়ে দেখলাম বাইরে গ্রামীণ নিস্তব্ধতা হলেও, ভেতরে শহরের মতো সব আধুনিক সুবিধা—বাজারের প্রায় সব গ্যাজেট এখানে আছে। আরাম আর সৌন্দর্যের এমন মিশ্রণ সত্যিই বিরল।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খেতের সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম নদীর ধারে। নদী দেখে মনে পড়ে গেল কবিগুরুর সেই চিরন্তন লাইন—
“আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে…”
ঘাটে নৌকা বাঁধা ছিল। ইচ্ছে করলে মাছ ধরা যেত, কিংবা নৌকায় চড়ে নদী ভ্রমণ, কিন্তু সেদিন আমাদের ছিল অন্য পরিকল্পনা – মনে তখন অন্য উত্তেজনা— সমুদ্রসৈকতে যাব।
সকালের জলখাবার সেরে আমরা রওনা হলাম Yyteri Beach-এর পথে। নয় বছর আগে এখানে এসেছিলাম, তবে এবার এসে দেখলাম অনেক পরিবর্তন। গ্রীষ্মের রোদে বিচ যেন উৎসবের মাঠ—লোকজন রোদ পোহাচ্ছে, কেউ ঢেউয়ের সাথে খেলছে, কেউ আবার বালুর ওপর হেঁটে বেড়াচ্ছে। দূরে সমুদ্রের নীল জল আর আকাশ একাকার হয়ে গেছে। অনেকক্ষণ সেখানে সময় কাটিয়ে আমরা ওর খুব কাছেই সমুদ্রের ধারে পোরিতেই ফিনল্যান্ডের যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বেশ কিছু স্থান এবং স্মৃতিস্তম্ভ দেখতে গেলাম । এর মধ্যে রয়েছে ভাহারাউমায় একটি সোভিয়েত যুদ্ধ স্মারক, একটি রেপোসারি দুর্গ এবং কেন্দ্রীয় লুথেরান ক্যাথেড্রালের কাছে একটি যুদ্ধ স্মারক। এই শহরটির যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার ইতিহাসও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমা হামলা এবং জার্মান বিমান ঘাঁটি হিসেবে পোরি বিমানবন্দরের ব্যবহার।তারপর ওখান থেকে পোরি শহর প্রদক্ষিণ করে দিনের শেষে আবার ফিরে এলাম গ্রামের সেই শান্ত গেস্টহাউসে।
তৃতীয় দিনের সকালে, দুপুর ১২ টা নাগাদ আমরা যাত্রা শুরু করলাম Hämeenlinna-এর দিকে। গন্তব্য—একটি মধ্যযুগীয় দুর্গ, Häme Castle বা Tavastia Castle। লাল ইটের প্রাচীর, উঁচু টাওয়ার আর বিশাল আঙিনা— late 13th century থেকে ভানাজাভেসি হ্রদের তীরে দাঁড়িয়ে থাকা এই দুর্গ আজও গর্বের সাথে ইতিহাসের গল্প বলে যাচ্ছে। হ্রদের জলে দুর্গের প্রতিবিম্বের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যেন সময়কে স্থির করে রেখেছে।তারপর রাতে ফিরে আসলাম হেলসিঙ্কি নিজেদের বাড়িতে ।
দু দিনের এই ছোট্ট সফর আমাদের মনে রেখে গেল সবুজের শান্তি, সোনালি বালুর উষ্ণতা আর লাল ইটের দেয়ালের গাম্ভীর্য—যা কোনোদিন ভোলার নয়।
Sudhir Bagchi
দারুন দারুন। খুব সুন্দর লাগল ছবি গুলো আর তোমার লেখা পড়ে খুব ভাল লাগল।
LikeLike
Rinki Sen
Chobigulo khub bhalo hoeche tar opor upri paona Helshinki r sobuje ghera gram er golpo
LikeLike
Tapashi Banerjee
খুব সুন্দর বর্ননা। খুব ভালো লাগলো।
LikeLike
Mohan Lal Ghose
Very beautiful things you have seen such as golden sand, river,green forest,blue lake, Yyteri Beach of Baltic sea ,Port city and guesthouse in village also! Enjoy.
LikeLike
Tapasi Sengupta
Enjoy with family
LikeLike
Apurba Neogi
Superbly described the beauty of beautiful Finland.
LikeLike
Sampa Gupta
Pictures r lekha khub bhalo laglo
LikeLike
Sanjoy Das
দাদা, খুব সুন্দর ভ্রমণ বৃত্তান্ত। আমারও তোমার লেখা ও ছবির মাধ্যমে ফিনল্যান্ডের ভ্রমণ হয়ে গেলো।
LikeLike
Samarendra Nath Sarkar
Great picture
memories are always precious 
LikeLike
Anjushree Ghosh
Lekhata darun hoaychay ,tora khub valo thakish
LikeLike
Gautam Chaki
ছবিগুলো আর বর্ণনা তো অতুলনীয়।
LikeLike
Aparna Mukherjee
Apurbo vromon er barnona. Mone holo jano nijer chokhe shab dekhchhi. Chhobi gulo khub shundar. Enjoy.
LikeLike
Naru Mahato
দারুন ভ্রমণ বৃত্তান্ত।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই সুন্দর।
LikeLike
Anita Sengupta
খুব সুন্দর তোমার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো
LikeLike
Ratnabali Chatterjee
সুপ্রিয়দার মনোরম বর্ণনা আর তার সঙ্গে মনোমুগ্ধকর ছবি,দু এর যুগলবন্দীতে যেন অল্প সময়েই আমার মানসভ্রমণ হয়ে গেল। খুব আনন্দ পেলাম।
LikeLike
Papia Kargupta
লালদা, তোর লেখা গুলো পড়ি আর দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই
সুন্দর হয়েছে ছবি গুলো

LikeLike
Prokash Bhowmick
Sundar chhabigulo saha sundar bhraman brityanta o prakritik soundarya er barnana mon bhoriye dilo
LikeLike
Dalia Deb
সৌন্দর্যের অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ…..এক কথায় অনবদ্য….. তার সাথে ছবিগুলো যেনো তাসের রং মিলতি খেলছে….. অপূর্ব



LikeLike