আমাদের চোখে ইতালির রাজধানী রোম

আমাদের চোখে ইতালির রাজধানী রোম

এর আগের লেখা ‘আমাদের চোখে ভ্যাটিকান সিটি’তে লিখেছি যে  07/04/2023 তারিখ আমরা ভেনিস থেকে ভোরে রোমে এসে পৌঁছেছিলাম । রোম হল ইতালির রাজধানী শহর এবং বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ এবং সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য শহরগুলির মধ্যে একটি। প্রথমে চলে গেছিলাম ভ্যাটিকান সিটি দেখতে । ভ্যাটিকান সিটির সুন্দর স্মৃতি নিয়ে দুপুরবেলা ভ্যাটিকান সিটি থেকে বেড়িয়ে আহার সেরে আমরা হেটে হেটে চলে গেলাম তিবের নদীর পাশে ক্যাস্টেল সান্ট'অ্যাঞ্জেলো (Castel Sant'Angelo)দেখতে । একসময় পোপরা এটাকে দুর্গ হিসাবে ব্যবহার করেছিল । এখন এটি একটি জাদুঘর । কাঠামোটি একসময় রোমের সবচেয়ে উঁচু ভবন ছিল। তারপর নদীর পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে পৌঁছে গেলাম Piazza del Popolo যার  আধুনিক ইতালীয় ভাষায় নামটির আক্ষরিক অর্থ "পিপলস স্কোয়ার" । এটি রোমের একটি বড় শহুরে চত্বর । তারপর রোমের প্রধান শপিং স্ট্রিট যা সমগ্র ইতালি জুড়ে কেনাকাটার জন্য সেরা জায়গা হিসাবে বিবেচিত হয়, সেই রাস্তা ধরে আমরা গিয়ে পৌছালাম বিখ্যাত ট্র্যাভি ফাউন্টেন ( Trevi fountain) । ট্র্যাভি ফাউন্টেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত ঝর্ণাগুলোর একটি। এটি 1762 সালে সম্পন্ন হয়েছিল। এর কেন্দ্রে সমুদ্রের রোমান দেবতা নেপচুনের একটি বড় মূর্তি রয়েছে। ট্র্যাভি ফাউন্টেন তার জাঁকজমক এবং সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত তাই  ট্র্যাভি ফাউন্টেন ঘিরে বিভিন্ন দেশের লোক এসে ভিড় করে । কর্ণাটক থেকে আসা এক পরিবারের সাথে পরিচয় হল এই ট্র্যাভি ফাউন্টেনে ।  যেহেতু রোমান সাম্রাজ্যের অনেকগুলি স্মৃতিসৌধ দেখা আমাদের এখনও বাকি আছে  তাই আবার বেড়িয়ে পড়লাম ট্র্যাভি ফাউন্টেনকে পিছনে রেখে । সারা শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক রোমান স্থাপত্য । এরপর আমরা গিয়ে পৌছালাম স্প্যানিশ স্টেপসে (Spanish Steps)। স্প্যানিশ স্টেপস  হল রোমের একটি জনপ্রিয় গন্তব্য যেখানে একটি অনিয়মিত প্রজাপতির মতো প্যাটার্নে সাজানো 135-পদক্ষেপের সিঁড়ি। স্প্যানিশ স্টেপস স্থানীয় সঙ্গীতজ্ঞ, ফটোগ্রাফার এবং শিল্পীদের সাথে একত্রিত হওয়ার এবং মিশে যাওয়ার জন্য একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট।এবার ডিনার করার পালা এবং লিপিকার খুব ভারতীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছা । ছেলে ও বৌমা খুজে নিল ভারতীয় রেস্তোরাঁ ‘ গান্ধী ২’। রাতের আহার ওখানে সেরে ফিরে আসলাম হোটেলে ।   

পরের দিন অর্থাৎ ০৮/০৪/২০২৩ ব্রেকফাস্ট সেরে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম রোমান ফোরাম ( Roman forum ) দেখতে । টিকিট দেখিয়ে সিকিউরিটি চেক করিয়ে ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল প্রাচীন রোমের অনেক সরকারি স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ । এটি তদানীন্তন রোমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম। এর অবস্থান কাপিতোলিনো পর্বত এবং পালাতিনোর মাঝামাঝি একটি নিম্নভূমিতে। ভিতরে জাদুঘরও আছে । অনেকটা নালন্দার মতো। ভালভাবে দেখতে বেশ অনেকটা সময় লাগে । ওর পাশেই পাহাড়ের ওপরে রয়েছে বিখ্যাত ‘সেভেন হিলস অফ রোমের’ মধ্যে সবচেয়ে উঁচু প্যালাটাইন হিল( Palatine Hill ) । এখানে প্রাচীনকালে উচ্চ রোমান সমাজের জন্য তৈরি করা প্রাসাদ এবং স্থানগুলির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায় । প্যালাটাইন হিল থেকে নামতেই পৌঁছে গেলাম রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত আকর্ষণীয় ল্যান্ডমার্কগুলির মধ্যে একটি, কলোসিয়ামে (Colosseum )। কলোসিয়াম হল  একটি বৃহৎ উপবৃত্তাকার ছাদবিহীন মঞ্চ যা বিশ্বের সবচেয়ে স্বীকৃত কাঠামোগুলির মধ্যে একটি। ৬৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুই হাজার বছর আগে নির্মিত হয়েছিল এই মঞ্চ। এখানে  গ্ল্যাডিয়েটরদের একে অপরের সঙ্গে বা বন্য প্রাণীদের সাথে লড়াই করতে হত যেটা অন্যরা উপভোগ করতো । কলোসিয়াম দেখতে দেখতে মনে পড়ে যাচ্ছিল স্পার্টাকাস নামে একজন থ্রেসিয়ান গ্ল্যাডিয়েটর কথা যিনি রোমে দাস বিদ্রোহের সময় হাজার হাজার ক্রীতদাসের একটি সেনাবাহিনীকে কমান্ড করেছিলেন।

এরপর একটু হেটে পৌঁছে গেলাম নাম পিয়াজা ভেনেজিয়া বা ভেনিস স্কোয়ার যেটা রোমের একটি স্কোয়ার যেখানে চারটি প্রধান রাস্তা এসে মিশেছে । পিয়াজা ভেনেজিয়া ক্যাপিটোলিন পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। 1455 সালে এর নির্মাণ শুরু হয় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালীয় সরকার এই প্রাসাদটি দখল করে নেয়। এর উল্টোদিকে দেখলাম রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন ও জুলিয়াস সিজারের মূর্তি । এরপর আরেকটু হেটে পৌঁছে গেলাম প্যানথিয়ন( Pantheon )যেটা 126 খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি চিত্তাকর্ষক গম্বুজের জন্য পরিচিত যা এখনও বিশ্বের বৃহত্তম অনাবৃত কংক্রিট গম্বুজ। এটি এখন একটি ক্যাথলিক গির্জা এর ভিতরে পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পী রাফেলের কবর রয়েছে । এর পর আমরা গেলাম পিয়াজা নাভোনা ( Piazza Navona)  যেটা রোমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাণবন্ত স্কোয়ার যেখানে অনেক স্ট্রিট পারফর্মার, ক্যাফে এবং টেরেস রয়েছে। আজকের মতো পর্যটনে ইতি টানার আগে চলে গেলাম রাত্রের আহার করতে সারাভানাতে দক্ষিণ ভারতীয়
খাবার খেতে । যদিও রোমান সাম্রাজ্যের বিকাশের হাজার হাজার বছর হয়ে গেছে, তবুও আমরা আমাদের শিল্প, স্থাপত্য, প্রযুক্তি, সাহিত্য, ভাষা এবং আইনে এর প্রমাণ এখনও দেখতে পাই। তাই বোধহয় এই শহরকে বলে চিরন্তন শহর ।এই ইতালির ভ্রমনে আমাদের Super-fast ট্রেনে চড়ার এক অপূর্ব  অভিজ্ঞতা হল যার স্পীড ছিল ৩০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা । 




One thought on “আমাদের চোখে ইতালির রাজধানী রোম

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s