পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে, প্রতিটি রান্নাঘরে একটি সবজির নাম বারবার শোনা যায়— তা হোল আলু। ভাত-রুটি থেকে শুরু করে স্যুপ, ফ্রাই, কারি, এমনকি পাউরুটির ফিলিং—সব কিছুর মধ্যেই আলু জায়গা করে নিয়েছে অত্যন্ত সহজে।
ইতিহাস ঘেঁটে আমরা জানতে পারি আলুর শুরু আজ থেকে প্রায় ৭,০০০ বছর আগে, দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বত অঞ্চলে। ইনকা সভ্যতার মানুষ আলুকে “পাপা” নামেই চিনত। সেখান থেকে এটি ছড়িয়ে গেল ইউরোপে, তারপর সারা বিশ্বে।আজ বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশে আলুর চাষ হয়—যা অন্য কোনও সবজির ক্ষেত্রে খুব কম দেখা যায়।
আলুর এই বিশ্বজনীন জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কারণ যেমন —
- পর্বত, সমতল, ঠান্ডা অঞ্চল, উষ্ণ অঞ্চল—বিভিন্ন পরিবেশে আলুচাষ সফলভাবে হয়।
- একই জমিতে ধান বা গমের তুলনায় আলুর উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি।
- সঠিক পরিবেশে রাখা হলে দীর্ঘদিন নষ্ট হয় না।
- সেদ্ধ, ভাজা, বেক, গ্রিল—প্রায় ১০০টিরও বেশি ধরণের রান্নায় আলু ব্যবহার করা যায়।
- উৎপাদন বেশি হওয়ায় দামও কম—বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তায় এটি বিশাল ভূমিকা রাখে।
বাজারে আলুর নানারকম রঙ দেখা যায়। এর প্রতিটি রঙের পেছনে আছে আলাদা বিজ্ঞান।
- লাল আলু – খোসায় অ্যান্থোসায়ানিন—এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- হলুদ আলু – বেটা-ক্যারোটিন
- সাদা আলু – স্টার্চ বেশি
- বেগুনি আলু – অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, বেশ স্বাস্থ্যকর
রঙ আলাদা হলেও আলু শুধু স্বাদের জন্য নয়—পুষ্টিগুণের কারণেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজপাচ্য হওয়ায় শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সীর জন্য উপযুক্ত। আমরা জানি আলুর মধ্যে আছে স্টার্চ (শর্করা) যা শক্তির প্রধান উৎস, ভিটামিন C যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, ফাইবার যা হজমে সাহায্য করে আর অল্প পরিমাণে হলেও আছে প্রোটিন ।
একটা জিনিস শুধু সবার মাথায় রাখা উচিৎ তা হোল আলুতে হালকা অঙ্কুর থাকলে সেই অংশটা কেটে ফেলে রান্না করা উচিৎ , কিন্তু যে আলু সবুজ হয়ে যায় বা অঙ্কুর গভীর, তা খাওয়া ঠিক নয়।কারন এ ধরনের আলুতে সলানিন নামক বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয়, যা বেশি পরিমাণে খেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
আচ্ছা আলু কি মোটা করে, বিজ্ঞান কি বলে ? – স্বাভাবিকভাবে আলু নিজে মোটা করে না।যা মোটা করে, তা হলো তেলে ভাজা ও অতিরিক্ত মশলা।সেদ্ধ বা বেক করা আলু বরং হজমে ভালো ও স্বাস্থ্যকর।
তাই আলু শুধু একটি সবজি নয় , এটি পৃথিবীর খাদ্য-নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ। এমনকি মহাকাশে মানববসতির সম্ভাবনা নিয়ে যে গবেষণা হচ্ছে, সেখানে আলু হতে পারে প্রধান খাদ্য উৎস। জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে আলু হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খাদ্য।NASA এমনকি মহাকাশ গবেষণায়ও আলুকে সম্ভাব্য প্রধান খাদ্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে, কারণ এটি কম জায়গায় জন্মে, অল্প আলোতে বেড়ে ওঠে, এবং পুষ্টিকর। তাই আজ পৃথিবীর সব মানুষের চোখে –
আলু শুধু সবজি নয়—
সে পৃথিবীর মানুষের শক্তির উৎস,
ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সৈনিক,
আর বিজ্ঞানের এক নীরব বিস্ময়।
পৃথিবীর মাটিতে জন্ম নেওয়া ছোট্ট কন্দটির গল্প বলতে গেলে—
এটা আসলে মানব সভ্যতার গল্প,
অভিযানের গল্প,
আর বিজ্ঞানের সৌন্দর্যের গল্প।
Santwana Bhattacharyya
Khub sundor akta darun jinis janlam tomar lekha theke. Khub valo

LikeLike
Samarendra Nath Sarkar
Khub sundor protibedon pore khub valo laglo
LikeLike
Tanima Goswami
Akta darun jinis jante parlam tomar lekha ta pore. Khub sundor.
LikeLike
Anindita Majumdar
Darun…apnar lekha pore amra kotokichu jante pari.
LikeLike
Ananda Ghosh
দারুন সুন্দর ইতিহাস জানতে পারলাম কবে থেকে কিভাবে আলু ব্যবহার করতে শিখলো মানুষ এটা জানতে পারলাম আর আলু সত্যিকারে এমন একটি সবজি যা দিয়ে একবেলা কি একটা দিন ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়া যায় আলু সেদ্ধ ভাজা দিয়ে একদিন চালিয়ে নেওয়া যায়
LikeLike
Sanjoy Das
দাদা, খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানা গেলো।
LikeLike
Abani Banerjee
ভালো লিখেছ!
LikeLike
Swapna Sen Gupta
ভালো লাগলো পড়ে।আমি ভীষণ আলু ভালো বাসি।এখনতো সবাই বারণ করে।
LikeLike
Naru Mahato
Good morning
খুব সুন্দর আর জরুরি একটা নিবন্ধ।
অনেক জিনিস জানা গেল।
LikeLike
Ratnabali Chatterjee
আপনার লেখার বিষয়বস্তু যে কত বিচিত্রগামী এই প্রতিবেদনটি তার প্রমাণ।কত যে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারি আপনার লেখা থেকে,তার ইয়াত্তা নেই।আপনার সেজন্য প্রশংসা প্রাপ্য।
LikeLike
Prokash Bhowmick
Sundar sathik shironam saha Aloo niye tathyapurna asaadharan barnana
LikeLike