সমস্ত পূজা হোক আনন্দ, ভক্তি আর পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা – সুপ্রিয় রায়

শুধু দুর্গাপূজা কেন সমস্ত পুজাই আমাদের জীবনের এক বিশাল আনন্দ উৎসব। এটা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি আবেগ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু এই আনন্দ যেন প্রকৃতির ক্ষতির কারণ না হয়। ভক্তি আর পরিবেশ—দুটিকে পাশাপাশি রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। সমস্ত দেব দেবীকে আমরা মনে করি তারা শক্তির প্রতীক, সেই শক্তি যেন আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়।

বিদেশের পূজোর একটি বড় দিক হলো—সেখানে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় না। পূজা শেষ হলে প্রতিমাকে সযত্নে বাক্সে রেখে দেওয়া হয়, যেন পরের বছর আবার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে পূজা করা যায়। এভাবেই একই প্রতিমা কয়েক বছর ভক্তি ও আনন্দের সঙ্গে পূজিত হয়।

• এতে ধর্মীয় আবেগ অক্ষুণ্ণ থাকে।

• প্রতিমা বছরের পর বছর ব্যবহারযোগ্য হয়।

• পরিবেশ দূষণও ঘটে না।

কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত বিসর্জনের প্রথা ভিন্ন। দুর্গা প্রতিমাই শুধু নয়, সারা বছর সারা দেশে অসংখ্য পূজার প্রতিমা নদী, পুকুর বা সমুদ্রে বিসর্জন দেওয়া হয়। কাঠামো অনেক সময় জল থেকে তোলা হলেও, রং, মাটি, কাপড়, সাজসজ্জা—সবই জলে মিশে যায়। এর ফলে জলদূষণ ক্রমশ বাড়তে থাকে আর পরিবেশ ও প্রাণিকূলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

আজকের দিনে আমাদের ভাবলে ভাল — কীভাবে আনন্দ, ভক্তি ও পরিবেশ রক্ষাকে একসঙ্গে রাখা যায়। সব প্রতিমাই শুধু শক্তির প্রতীক নন, প্রকৃতিরও প্রতীক। তাই তাঁর পূজা যেন কোনভাবেই প্রকৃতিকে ক্ষতি না করতে পারে ।

সময়, পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সমাজের মাথারা সঠিক চিন্তা ভাবনা করে যদি আচারের কিছুটা পরিবর্তন করতে সম্ভব হন যাতে ধর্মীয় আবেগের কোনো ঘাটতি না হয় আবার পরিবেশবান্ধবও হয় । তাহলে এই পরিবর্তিত ভাবনা শুধু জল দূষণ কমাবে না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন করতেও সাহায্য করবে। ভক্তি কখনোই পরিবেশবিরোধী হতে পারে না—বরং দেবীর পূজা হোক প্রকৃতির রক্ষাকর্ত্রী রূপে।

সমাজের মঙ্গল যেখানে আছে, ধর্মীয় আবেগও সেখানেই মানিয়ে নেয়।

আজ থেকে একশো বছর আগে পূজার ধরন যেমন ছিল, আজ তা অনেক বদলেছে। ভবিষ্যতেও বদলাবে। আমাদের সংস্কৃতিকে অটুট রেখে যদি পরিবেশকে রক্ষা করা যায়, তবে সেটাই হবে সত্যিকারের পূজা।

8 thoughts on “সমস্ত পূজা হোক আনন্দ, ভক্তি আর পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা – সুপ্রিয় রায়

  1. Anita Sengupta

    শুভ বিজয়া তোমার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো এই ভাবনাটা আমাদের সবার থাকতে হবে তবেই সব কিছু ঠিক হবে!

    Like

  2. Dalia Deb

    Akdom thik kotha bolechis lalda….ekhon to protita school e environmental science poray….eta akhon syllabus er ontorvukto….kintu pore ki hobe?…jodi na amra sei pora ba vabna ba upolobdhike kaje na lagai?????? Jor kore kichu hoyna…..each & everybody egiye aslei poribesh bachano somvob….tobei amra Nirmal poribesh e aktu niswas nite parbo❤️❤️❤️🎉🎉🎉🎉☘️☘️☘️☘️☘️

    Like

  3. Ratnabali Chatterjee

    খুব সুন্দর ও সুচিন্তিত প্রতিবেদন। ছবিগুলিও ভারি সুন্দর মূহুর্তের। বিদেশে যে মাতৃমূর্তিগুলি পুজিত হন সেগুলি সংরক্ষণ করা সুবিধাজনক। কিন্তু এদেশে মাটির বিশাল ও ভারি মূর্তি সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় ,স্থান সংকুলান করা অসম্ভব।তাই বহু যুগ ধরে জলে মূর্তি বিসর্জনের রীতি চলে আসছে।এতে জল দূষণের সমূহ সম্ভাবনা ।আবার বছরের পর বছর যদি একই মূর্তি পূজিত হন তবে মৃৎশিল্পীদের রুজি রোজগারে টান পড়ার সম্ভবনা।

    Like

  4. Supriyo Roy

    Ratnabali Chatterjee আমি মনে করি সুন্দর পরিকল্পনা যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারে । অনেক রকম ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় যাতে মৃৎশিল্পীদের রুজি রোজগারে টান পড়ার সম্ভবনা থাকবে না , আবার সংরক্ষণে স্থান সংকুলানও হবে না । লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে তাই আর একসাথে লিখলাম না । এমনিই বেশীরভাগ মানুষ লেখা পড়তে চায় না , শুধু ছবি দেখতে চায় । তাই আর লেখাটাকে বড় করতে চাইলাম না ।

    Like

Leave a reply to supriyoroy Cancel reply