ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রানসিসকো ভ্রমণ – সুপ্রিয় রায়

ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রানসিসকো ভ্রমণ – সুপ্রিয় রায়

আমরা তিনজন – আমি, আমার স্ত্রী লিপিকা আর আমাদের ছোট ছেলে স্বস্তিক – ৬ই সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল সকাল সিয়াটেল থেকে আকাশপথে রওনা দিয়ে প্রায় সকাল ১০টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রানসিসকো।

সানফ্রানসিসকো বিমানবন্দরে পৌঁছে প্রথমেই আমরা আমেরিকান ফুড বিখ্যাত চাউডার খেয়ে নিলাম। চাউডার মূলত ফ্রান্স থেকে উদ্ভূত হলেও আজকের দিনে এটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত আমেরিকার খাবার হিসেবে। তারপর ট্রেনে করে পৌঁছে গেলাম রেন্টাল কার সেন্টারে। সেখান থেকে একটি গাড়ি ভাড়া নিয়ে আমরা রওনা দিলাম আমাদের হোটেলের উদ্দেশ্যে।আমাদের ভাগ্যে পড়লো একটা প্রায় নতুন মার্সিডিজ বেঞ্জ ।

পাহাড়ের অনেকটা ওপর থেকে যখন সোজা রাস্তা দিয়ে নীচে নামছিলাম, দু’পাশের পরিবেশ যেন ছবি আঁকা ক্যানভাসের মতো লাগছিল। সমান উচ্চতায় দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দর সুন্দর বাড়িঘর চোখে যেন শান্তির পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিল।

শহরের ভেতর দিয়ে না গিয়ে ছেলে আমাদের নিয়ে চলল  প্রশান্ত মহাসাগরের পাশ দিয়ে । পথে এক মনোরম সৈকত আমাদের আহ্বান জানালো। কিছুটা সময় সেখানে কাটিয়ে অবশেষে পৌঁছে গেলাম লম্বার্ড স্ট্রিটের পাশে আমাদের হোটেলে। দ্রুত ফর্মালিটি সেরে হোটেল রুমে জিনিসপত্র রেখে বেড়িয়ে আসলাম সানফ্রানসিসকো ঘুরে দেখার জন্য।

প্রথমেই গিয়ে পৌঁছলাম শহরের প্রতীক, বিশ্ববিখ্যাত গোল্ডেন গেট ব্রিজে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আকর্ষণীয় এই সেতু সত্যিই সানফ্রানসিসকোর সোনালী দুয়ার। বিশাল সমুদ্রের ওপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এই সেতু আমাদের মুগ্ধ করলো।

এরপর গেলাম টুইন পিকসে। পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা যাচ্ছিল অন্তহীন নীল সমুদ্র, শহরের ব্যস্ত ডাউনটাউন আর জীবনের মতোই ওঠানামা করা রাস্তা। উপরের হাওয়া, ভিউ আর নীরব সৌন্দর্য আমাদের মন ভরে দিল।

টুইন পিকস ঘুরে আমরা চলে গেলাম পাহাড়ের ওপরের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মুইর উডস ন্যাশনাল মনুমেন্টে। এখানে রয়েছে প্রাচীন উপকূলীয় লম্বা লম্বা লাল কাঠের গাছ – যেন সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক স্বর্গ।

সেখান থেকে আমরা গেলাম গোল্ডেন গেট পার্কে। তারপর শেষ গন্তব্য ছিল ভিস্তা পয়েন্ট। সমুদ্রের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা গোল্ডেন গেট ব্রিজের মহিমা আর প্রশান্ত মহাসাগরের বিশালতা এখান থেকে এককথায় অতুলনীয়।

আমরা বেশ কিছুটা হেঁটে উঠে পৌঁছলাম ভিস্তা পয়েন্টে। চারপাশের দৃশ্য হৃদয়ে গেঁথে রাখার মতো, কিন্তু হঠাৎ করেই কুয়াশা নেমে এসে সব ঢেকে দিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরও কুয়াশা সরলো না, তাই বাধ্য হয়ে শহরে নেমে আসতে হলো।

এ দিনের ভ্রমণ শেষ হলো এক অন্যরকম মুগ্ধতা নিয়ে। সানফ্রানসিসকো সত্যিই এমন এক শহর, যেখানে প্রকৃতি, ইতিহাস, সংস্কৃতি আর আধুনিকতা একসাথে মিলেমিশে এক রঙিন অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

রাত্রে ভারতীয় খাবার খেতে যাওয়ার সময় যে দারুন অভিজ্ঞতা হোল সেটা আগের লেখাতে জানিয়েছি । হ্যাঁ , ড্রাইভার বিহীন ট্যাক্সিতে চড়ার অভিজ্ঞতা ।তাই আর লেখাটাকে অহেতুক বড় করছি না । 

আগামীকাল যাবো সিলিকন ভ্যালির গুরুত্বপূর্ণ শহর সানিভেলে, যেখানে কাজে এসেছে আমাদের ছেলে।

16 thoughts on “ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রানসিসকো ভ্রমণ – সুপ্রিয় রায়

  1. Naru Mahato

    শুভ সকাল।

    সুন্দর সুন্দর ছবি সহ ভ্রমণ বৃত্তান্ত খুব ভালো লাগলো।

    এই বয়সে এতো উদ্যম আর প্রাণ শক্তি আমাদেরকে উদীপ্ত করে।

    ভালো থাকুন সবাই।

    Like

  2. Partha Pratim Dasgupta

    “সানফ্রান্সিস্কো” এই নামটাই এত সুন্দর যে বোঝাই যায় যে শহরটাও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আধুনিকতায় মোড়া। খুব ভালো ভালো ছবি দেখলাম তবে ন্যাশনাল মনুমেন্টয়ে ‘লাল কাঠের গাছে’র ছবিটা পরিষ্কার দেখলাম না।

    Like

  3. Probodh Pal

    তোমার ভ্রমণ কাহিনী পড়ে San francisco সম্বন্ধে জানতে। পারলাম। বেশ ভালো লাগলো। 👍আগামীর জন্য অপেক্ষায় রইলাম

    Like

Leave a comment