ঘরে অফিস Work from home – সুপ্রিয় রায়

বাড়ির দোতলার ছোট্ট ঘরে সারাক্ষণ দরজা বন্ধ। ভেতরে বসে আছে সার্থক সকাল আটটা থেকে রাত আটটা—সবাই জানে, ভেতরে চলছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম।
মা হাঁটতে হাঁটতে ফিসফিস করে বলেন,
– চুপ! মিটিং আছে নাকি।
বাবা হাঁচি আটকাতে গিয়ে কাশতে শুরু করেন। তবু জোরে কাশি দিতে সাহস পান না, ভয় হয়—ল্যাপটপের মাইক্রোফোনে না ঢুকে যায় শব্দটা।
এদিকে বান্ধবী সাথী এসেছে দরকারে, একটা ফর্ম ভরার জন্য। সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে টোকা দিলো,
– সার্থক , একটু কথা আছে…
ভেতর থেকে উত্তর আসে,
– এখন নয়, আমি জুম কল-এ আছি।
সাথী বিরক্ত হয়ে বলে,
– তোমার সাথে দেখা করতে হলে আমাকেও কি ল্যাপটপ কিনে জুম করতে হবে?
বাড়ির অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে রান্নাঘর থেকে কড়াইয়ের ছ্যাঁক ছ্যাঁক শব্দ এলেও সবাই আতঙ্কে চুপ করিয়ে দেয়।
হঠাৎ একদিন দুপুরে মা দরজা খুলে ঢুকে পড়লেন। দেখলেন, ল্যাপটপে মিটিং স্ক্রিন খোলা, কিন্তু ক্যামেরা অফ। আর সার্থক কি করছে? মাথার ওপর বালিশ চাপা দিয়ে দিব্যি ঘুম!
মা হেসে ফেললেন,
– বাহ! এই তো ভালো অফিস! খাটে শুয়ে মিটিং, চেয়ারে বসে ঘুম।
বাবা বললেন,
– এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে ওকে সত্যি সত্যি অফিসে পাঠাতে হবে। না হলে আমাদের পুরো বাড়িটাকেই চুপচাপ অফিস বানিয়ে ফেলবে।
সাথী ততদিনে ঠিক করে ফেলেছে,
– সার্থককে ডেট করতে হলে কফি শপে নয়, লগ-ইন রুমেই যেতে হবে!

35 thoughts on “ঘরে অফিস Work from home – সুপ্রিয় রায়

  1. Arpita Sengupta

    সব বাড়িতেই একই অবস্থা। মিটিং চলছে, কোনো আওয়াজ নয়। এক এক সময় মনে হয়, কিছু ডিসকাস করতে হলে আমাকেও মিটিং এর টাইম ফিক্সড করতে হবে।

    Like

  2. Pratap Chatterjee

    গল্প হলেও সত্যি। এখনকার চাকুরীজীবিদের এই সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে বাড়ীর বাচ্ছারাও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তারা ছোটোবেলা থেকেই শিখে যাচ্ছে চুপ চুপ বলা। চুপ চুপ দাদু দিন্না বাবা মা অপিচ করছে। এটা আমাদের অভিজ্ঞতার কথা বললাম।

    Like

  3. Aparajita Sengupta

    ফটো র সাথে লেখা টা দারুণ যাচ্ছে, খুব মজা লাগল পড়ে।একটা গান মনে পড়ে গেল- কথা বোলো না, কেউ শব্দ কোরোনা ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন।…….👌👌🧡❤

    Like

  4. Probodh Pal

    একদম সঠিক বর্ণনা। আমার ছেলেও কিছু দিন ওয়াক ফ্রম হোম কাজ করেছে বাড়ির থেকে। ওকে কিছু বলতে গেলেই মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ এখন মিটিংয়ে আছি। আবার মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পরতো. 👍। সত্যি তুমি টপিক গুলো খুব সুন্দর সুন্দর নিয়ে আসো। পড়ে বেশ মজা লাগলো ভালো থেকো।

    Like

  5. Goutam Choudhury

    আমার একটা ঘর(ছেলের অফিস ) এরজন্য সাউন্ড প্রুফ করাতে বাধ্য হয়েছি। বাড়ি থেকে একটু দূরে আবার একটা মন্দির আছে, সেখানে রাত্রে মনসা মঙ্গল পালা হয়।

    Like

  6. Sumita Chatterjee

    এখন সব বাড়িতে এক ই অবস্থা, work from home হ ওয়াতে এখন অনেক সুবিধা হয়েছে যেমন অসুবিধা ও অনেক, আপনি যেগুলো বলেছেন।

    Like

  7. Partha Pratim Dasgupta

    যতগুল কর্মচারী ততগুলো অফিস। কর্তৃপক্ষের এস্টাব্লিশমেন্ট কস্ট – নীল।

    সবকিছু নিয়ে গল্প হলেও সত্যি, আবার মিথ্যা হলেও গল্প। পরিবর্তনের বাস্তবতাটা বেশ টক-ঝাল-মিষ্টি।

    Like

Leave a reply to supriyoroy Cancel reply