পথের গল্প – কলকাতা থেকে হেলসিঙ্কি- উদ্বেগ, অভিজ্ঞতা আর অপেক্ষার কাহিনি

১৯শে জুলাই, বিকেল সাড়ে পাঁচটা। আমি আর আমার স্ত্রী লিপিকা কলকাতা এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। সামনে এক লম্বা যাত্রা—Air India তে কলকাতা থেকে দিল্লি, সেখান থেকে Lufthansa এয়ারলাইন্সে দিল্লি হয়ে মিউনিখ, এবং তারপর মিউনিখ থেকে হেলসিঙ্কি।

Air India-র চেক-ইন কাউন্টারে গিয়ে আমাদের বড় দুটি সুটকেস চেক-ইন করে দিলাম। স্পষ্ট বললাম—লাগেজ যেন সরাসরি হেলসিঙ্কিতে যায়, মাঝপথে যেন আর কিছু করতে না হয়। অফিসার আমাদের নিশ্চিত করলেন—“Go through baggage”—হয়েই যাবে। আমরা নিশ্চিন্ত।

সিকিউরিটি পেরিয়ে হাতে থাকা কেবিন ব্যাগ আর মনের আনন্দ নিয়ে ঢুকে পড়লাম ট্রাভেল লাউঞ্জে। সস্তায় কিছু খাবার খেলাম, তারপর ২০ নম্বর গেট দিয়ে বোর্ডিংয়ের জন্য এগোচ্ছি, এমন সময় বড় ছেলের ফোন।

কণ্ঠে উদ্বেগ—“তোমাদের দিল্লি থেকে মিউনিখের Lufthansa ফ্লাইটটা ক্যান্সেল হয়ে গেছে!”।

হতচকিত আমরা। এই তো কিছুক্ষণ আগে সব ঠিক ছিল, এখন কী হবে? দ্রুত Air India-র প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, আরও কয়েকজনকে ফোন করে ওরা খবরটা নিশ্চিত করলো । প্রতিনিধি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন—

“আপনারা যেতে চান তো?”

এদিকে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, মন অস্থির। ছেলে বলল, “দিল্লি পর্যন্ত গিয়ে দেখো, দরকার হলে বিকল্প পথ পাওয়া যাবে।”

চিন্তা থাকলেও একরকম সাহস সঞ্চয় করে প্লেনে উঠে পড়লাম। রাত্রি সাড়ে নটা নাগাদ দিল্লি এসে পৌঁছলাম।

তারপর শুরু হলো এক নতুন দৌড়ঝাঁপ। Air India আর Lufthansa র প্রতিনিধিরা আমাদের ব্যাগ গুলো কনফার্ম করার জন্য একটু থাকতে বললো । সেই একটু থাকাটাই চলতে রাখল অনেক রাত অবধি । আমরা কত করে বললাম যে আমরা sr citizen একটু তাড়াতাড়ি আমাদের ব্যাগ দুটো খুঁজে দাও । দুই Air lines ই চুপ করে থাকলো , আমরাও টেনশনে আরও অনেক যাত্রীদের সঙ্গে সারারাত Air port এই থাকলাম ।

Air India আর Lufthansa-র এয়ারপোর্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, আমাদের জন্য একটা নতুন ফ্লাইট বুক করা হয়েছে—সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে, Finner-এর সরাসরি ফ্লাইট দিল্লি থেকে হেলসিঙ্কি।

এতটুকু শুনে যেন মনে একটু আশার আলো জ্বলে উঠল। বলা হলো, রাত ৪টা নাগাদ কাউন্টার খুলবে। আমরা অপেক্ষা করলাম। সকালবেলায় আমাদের আগের চেক-ইন ট্যাগ, ফ্লাইট নম্বর, সব তথ্য ও ছবি দেখিয়ে নতুন করে চেক-ইন করালাম।

অবশেষে, নির্ধারিত সময়েই Finner ফ্লাইট ছেড়ে দিল। দীর্ঘ ঘণ্টা কয়েকের বিমানযাত্রা শেষে আমরা যখন ফিনল্যান্ডে পৌঁছলাম, তখন মনে হলো—সব ঠিকঠাকই তো হলো!

কিন্তু…

বেল্টের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে একে একে সবার লাগেজ আসতে লাগল। আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর চারপাশ খালি হয়ে গেল। আমাদের লাগেজ নেই।

হতাশ হয়ে গিয়ে Finner ডেস্কে কমপ্লেইন জানালাম। দরকারি সব তথ্য জমা দিয়ে ফর্ম পূরণ করলাম। লাগেজ “মিসপ্লেসড” হয়েছে—বলা হলো তদন্ত করে জানাবে।

বাইরে এসে দেখি, আমাদের ছেলে অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষা করছে। তাকে দেখে মনে হলো, সব কষ্ট যেন কিছুটা কমে গেল।

হ্যাঁ, এই যাত্রায় আনন্দ যেমন ছিল, তেমনি ছিল উদ্বেগ, চিন্তা, অনিশ্চয়তা—তবে সবটাই এক সুন্দর অভিজ্ঞতায় পরিণত হলো। এখন অপেক্ষা, কবে আমাদের প্রিয় সুটকেস দুটো আবার আমাদের কাছে ফিরে আসবে।

সবাই সরকারী কর্মচারীদের দোষ দেয় , এখানে তো দেশি -বিদেশি প্রাইভেট কোম্পানি । তাদের কর্মকাণ্ড দেখে খুব হতাশ হলাম ।

14 thoughts on “পথের গল্প – কলকাতা থেকে হেলসিঙ্কি- উদ্বেগ, অভিজ্ঞতা আর অপেক্ষার কাহিনি

  1. Aparajita Sengupta

    আমি আজ এই লেখা টা পড়লাম। এবার তোমাদের ফিনল্যান্ড যাত্রা নানা রকম অভিজ্ঞতা য় ভরা লালদা,নানা ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়েছে তোমাদের ।এখন নিশ্চয়ই লাগেজ পেয়ে গেছ? সকলে মিলে খুব ভালো সময় কাটাও।সকলে ভালো থেকো।ছবিটা খুব সুন্দর হয়েছে। ❤🧡

    Like

  2. Samarendra Nath Sarkar

    Disgusting… Recently my daughter alone travels Kolkata Delhi London flight having same experience.in Kolkata airport.. finally onno flight dhore delhi jai kin2 schedule flight leftover…long duration waiting kore next flight on board kore nei to Heathrow airport….

    Like

  3. Partha Pratim Dasgupta

    সবত্রই শুধু টেনশনে মোরা, কি দেশে কি বিদেশে। তবে এসব কিছুর মধ্যে একটা এডভেঞ্চার আছে ! কি জানি কি হয় !

    Like

  4. Ratnabali Chatterjee

    সব ভাল তার,শেষ ভাল যার।আশা করি শিগগিরি হারা নিধি ফিরে আসবে।

    চারজনের হাসিমুখের ছবিটা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।তবে যাত্রাপথে এমন বিপর্যয় খুব উদ্বেগ ও অশান্তির কারণ হয়ে ওঠে।ভাল থাকবেন, আনন্দে থাকবেন।

    Like

Leave a reply to supriyoroy Cancel reply