প্রতিবেশীর বন্ধনে – সুপ্রিয় রায়

প্রতিবেশী ভাল হোলে জীবনের অনেকটা পাওয়া হয়ে যায় — এই বাক্যটা জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই উঠে এসেছে। কারণ:

• দুঃসময়ে আগে পাশে এসে দাঁড়ায় কাছের প্রতিবেশীই, দূরের আত্মীয় নয়।

• ছোট খাটো সমস্যায় — অসুস্থতা, হঠাৎ ওষুধ দরকার, বাচ্চাকে একটু দেখে রাখা — এসব ক্ষেত্রে ভাল প্রতিবেশী যেন আশীর্বাদ।

• সুসম্পর্ক থাকলে সমাজে শান্তি থাকে, ঝামেলা কম হয়, সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে ওঠে।

• শিশুরা নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠে, কারণ চারপাশে মানুষজন সহানুভূতিশীল।

আমরা অনেক সময় জীবন গুছিয়ে নিতে গিয়ে ভাবি — বাড়ি কেমন হবে, চাকরি কেমন হবে, গাড়ি থাকবে কি না… কিন্তু সবচেয়ে আগে দেখা দরকার যেটা খুব কম মানুষই ভাবে, “আমার পাশের মানুষগুলো কেমন হবে?” অথচ এই ‘প্রতিবেশী’ নামের সম্পর্কটাই জীবনকে শান্ত, নিরাপদ আর সুখী করে তুলতে পারে।

আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন পাশের কাকিমা এসে খাবার দিয়ে যেতেন, বা মা-বাবা না থাকলে আমা্দের একটু দেখে রাখতেন। পাড়ার কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে সবাই ছুটে যেত। এখন এমন চিত্র খুব একটা দেখা যায় না। “নিজের বাড়ি, নিজের জীবন” — এই মনোভাব আমাদের আরও একা করে দিচ্ছে।

ভালো প্রতিবেশী শুধু দরজায় টোকা দিয়ে নুন চায় না, সে প্রয়োজনের সময় সঙ্গ দেয়, সাহস দেয়। তাই বলি—

প্রতিবেশী যদি ভালো হয়, জীবন অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

ভাল প্রতিবেশী কেমন হওয়া উচিৎ সেটা আমাদের এই ছোট্ট গল্প দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছি ।

মুম্বাইয়ে এক ছোট্ট ফ্ল্যাটে সদ্য উঠে এসেছে সাথী ও তার স্বামী সার্থক । চারদিকে অচেনা মুখ, ব্যস্ত পাড়া, এবং একরাশ নিঃসঙ্গতা।

একদিন রবিবার সন্ধেবেলা সার্থকের হঠাৎ পেটব্যথা আরম্ভ হয় । খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল । কিছুতেই হাতের কাছে কোন ওষুধ খুঁজে পাচ্ছিল না। রবিবার বেশীরভাগ ডাক্তার আবার সন্ধ্যাবেলা বসে না । সাথী ঘাবড়ে গিয়ে পাশের ফ্ল্যাটে টোকা দেয়। দরজা খুলে বেড়িয়ে আসে এক বয়স্ক ভদ্রলোক ।মেয়েটিকে দেখে সাথে সাথে ওনি ওনার স্ত্রীকে ডাকেন । একজন বয়স্কা মহিলা সাথীর সামনে হাসিমুখে দাড়ায় । সাথী এক নিঃশ্বাসে সার্থকের পেট ব্যাথার কথা ওনাদের বলে ।

সব শুনে বয়স্ক ভদ্রলোক একটুও না ঘাবড়ে , হেসে নিজের ঘর থেকে জরুরি ওষুধের বাক্স নিয়ে আসেন আর একটু পরে বয়স্কা মহিলা গরম জল, এমনকি দুই কাপ চা নিয়ে ওদের ঘরে ঢোকেন । শুধু তাই নয় সাথীকে মারাঠি ভাষায় বলেন—

“মেয়ে, ভয় পেয়ো না। যখনই দরকার হবে, আমাদের ডেকো। আমরা থাকি তোমাদের এই পাশের ফ্ল্যাটে ।

সেদিন সাথী বুঝেছিল, এই অচেনা শহরে বাস্তব নিরাপত্তা আসে চার দেয়ালের বাইরে, প্রতিবেশীর বন্ধনে।

বিপদ এলে দৌড়ে আসে, খোঁজ নেয় প্রতিদিন,

এই তো আসল সম্পর্ক যা জুড়ে রাখে সারাদিন।

টাকা নয়, গয়না নয়, সম্পদ নয় হীরে,

ভালো প্রতিবেশী পেলে মানুষ থাকে শান্তির নীড়ে ।

13 thoughts on “প্রতিবেশীর বন্ধনে – সুপ্রিয় রায়

  1. খুব বাস্তব পোস্ট,গল্পের ছলে বলা।তবে ভাল প্রতিবেশী এই শহরে পাওয়া একটা বড় সৌভাগ্যের কথা।যতদিন কলকাতার বাইরে ছিলাম এই সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু কলকাতায় এসে দেখলাম প্রতিবেশীরা এক একটা দ্বীপের মতো থাকতে ভালবাসে।

    Like

  2. Partha Pratim Dasgupta

    প্রসঙ্গটা শুধু বাস্তব বললে কম বলা হয়। বরং অতিবাস্তব। অনেকগুলো হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলার অভিজ্ঞতার মধ্যে এটা খুবই প্রাসঙ্গিক। আমাদের ছোটবেলায় একটা পাড়া কালচার ছিল যেখানে প্রতিবেশীদের ভূমিকা আত্বিক আর ঘরোয়া। বাবা-মা এর মত তারাও প্রয়োজনে শাসন করতো। আর এখন প্রত্যেকে একা একা বাঁচে। আর প্রমোটারের যুগ হয়ে কেউ কাউকে চেনেনা। কেউ কারোর ব্যাপারে নাক গলায় না।

    খুব ভালো লিখেছো। আর শেষের দু-লাইন তো ‘”লা জবাব”।

    Like

  3. গীতশ্রী সিনহা

    প্রতিবেশী হচ্ছে ফোটা ফুলের মতো, পাশাপাশি বাস করি আমরা, প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে প্রতিনিয়ত সকাল সন্ধ্যে আমাদের যাদের সাথে দেখা হয় ! মানুষের সময় তো সব সময় এক যায় না ! সুদিন – দুর্দিন ধাক্কাধাক্কি করে ফিরে ফিরে আসে।

    যথার্থ প্রতিবেশী ফোটা ফুল থেকে পাপড়ি ঝরিয়ে ভালোবেসে তখন পাশে থাকে তাকেই স্বাভাবিক ভাবে প্রতিবেশী আখ্যা দেওয়া যেতে পারে !

    আসুন, আমরা সবাই মনেপ্রাণে বিশ্বাসী প্রতিবেশী হয়ে উঠি !

    দাদা লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো গো ! আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে খুবই প্রাসঙ্গিক লেখা পড়লাম।

    শ্রদ্ধা জেনো !

    Like

  4. Priyabrata Panja

    দারুন বাস্তব কথা বলেছো, পৃথিবীতে সবাই ভালো,যদি তুমি ভালো হও।আমার মনে হচ্ছে,ঐ দম্পতি দ্বয় তোমরা।ভুল হলে বলবে।আন্দাজ করলাম,অনুভব দেখে।লেখাটি খুবই প্রাসঙ্গিক। যদি তুমি এই পৃথিবীকে স্বর্গ বানাতে চাও,আশে পাশের মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখো বা রাখার চেষ্টা কর।একে অন্যের পরিপূরক। একদিন সবাই চলে যাবো,থাকবে ব্যাবহার ও কিছু স্মৃতি,এর মধ্যেই বেঁচে থাকা।

    Like

  5. Champak Mitra

    জীবন যুদ্ধে প্রতিবেশীর ভুমিকা অপরিসীম। প্রতিবেশী নিজের আত্তিয় স্বজনদের থেকেও বেশি প্রয়োজনিয় ভুমিকা পালন করে। অসময়ের চিরকালের বন্ধু ঐ প্রতিবেশী যেটা আমার জীবনের প্রচুর ঘটনার স্বাক্ষী বহন করে রেখেছে ।

    Like

  6. Sudhir Bagchi

    ঠিক একদম ঠিক। ভাল প্রতিবেশীর কোন বিকল্প হয়না। এখন আমরা এত আমি আমার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে আর কাউকে নিয়ে ভাবতেই চাই না। ভাল প্রতিবেশীর মত ভাল আর কিছু হয় না।

    Like

  7. Gautam Chaki

    খুব ভালো লাগলো তিলক সত্যিই আজ আমরা খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছি এই ব্যাপার গুলো আমরা একটু হারিয়েই ফেলছি যদি তোর লেখার মাধ্যমে সবাই একটু সচেতন হয়

    Like

Leave a reply to supriyoroy Cancel reply