মা — একটি বিশ্বজনীন শব্দ – সুপ্রিয় রায় ও লিপিকা রায়

( দুনিয়ার সকল ‘মা’ দের উদ্দেশ্যে )

আমরা সবাই জানি যে পৃথিবীর সমস্ত ভাষা, সংস্কৃতি আর সভ্যতা অবশ্যই আলাদা, কিন্তু একটা শব্দ যেন সবার হৃদয়ে একটাই সুর তোলে, সেটা হোল — ‘মা’।

শিশুর মুখে প্রথম উচ্চারিত শব্দগুলোর মধ্যে “মা” প্রায় সবখানেই থাকে। এটি শুধু একটি ডাক নয়, এটি এক আস্থার জায়গা, এক নিরাপত্তার আশ্রয়, এক নিঃশর্ত ভালোবাসার নাম।

আমরা যদি পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে ঘুরে দেখি তাহলে দেখবো পৃথিবীর অনেক দেশের ভাষাতেই ‘মা’ ধ্বনিটা শুনতে পাওয়া যায় । যেমন – 

  • বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া , গুজরাটি, মারাঠি – মা ,
  • তামিল, কন্নড়, কোঙ্কনি , মালায়লাম , উর্দু, কুরদি  -আম্মা
  • নেপালী  – আমা
  • ইংরেজি: Mom,Mama, Mother, Mummy,Mom, Mommy, Ma
  • স্প্যানিশ: Mamá Mami, Madre
  • ফরাসি: Mère বা Maman
  • জার্মান: মুটার বা মামা/ Mutti, Mami
  • ডাচ : Moeder, Moer
  • জাপানি – ママ (Mama)
  • গ্রীক: Μαμά (Mamá), Μητέρα (Metera)
  • ইতালীয়: মাদ্রে বা মামা/ Mamma, Mammina
  • রাশিয়ান: Mama (Мама) Мамочка (Mamachka), Мам (Mam), Мамуся (Mamoosya),
  • চাইনিজ: Māma (妈妈)
  • আরবি: Mama / Ummi
  • হিন্দি: माँ / Maji
  • Polish: Mama, Mamula, Mamón, Mamuśka, Matula, Mamcik
  • Vietnamese: Mẹ
  • Czech: Matka
  • Ukrainian: мама(Mama),матуся(Matusya),матінка (Matinka)
  • Afrikaans: Ma, Moeder
  • Portuguese: Mãe
  • Swedish: Mamma, Mor, Morsa
  • Estonian: Ema
  • Finnish: Mami, Mama, Äiti, Mutsi
  • Bulgarian: “Maĭko”
  • Irish: “Mathair”

এছাড়া আরও অনেক দেশ আছে । সবার নাম দিলে লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে । তাই আর দিলাম না ।

অবাক লাগে যখন দেখি এত আলাদা ভাষা, সংস্কৃতি—তবুও মা ডাকটা যেন একই ছন্দে বাজে। বিশেষজ্ঞরা এর প্রধান কারণ হিসাবে বলে — শিশুরা যে সহজ ধ্বনি আগে উচ্চারণ করতে পারে সেটা হোল “মা” । ধ্বনিটা সহজতম এবং আত্মিক শব্দ।

মা” শুধু এক শব্দ নয়—এ এক প্রথম বন্ধন, প্রথম অনুভব, প্রথম ভালোবাসা। শিশুর কান্না থেমে যায় মায়ের কোলে, মায়ের গলার স্বরে। এই ডাক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক অদৃশ্য শক্তি দিয়ে আমাদের আগলে রাখে।

ভাষা, ধর্ম, জাতি যাই হোক না কেন, “মা” শব্দে মানুষ একইভাবে কাঁদে, হাসে, বাঁচে। হয়তো এটাই মানবিকতার সবচেয়ে সুন্দর সেতুবন্ধন। এটাই বিশ্বজুড়ে এক দারুন ব্যতিক্রমী অনুভূতি।

7 thoughts on “মা — একটি বিশ্বজনীন শব্দ – সুপ্রিয় রায় ও লিপিকা রায়

  1. Ratnabali Chatterjee

    আজকের এই মাতৃদিবসের উপযুক্ত একটি প্রতিবেদন।যদিও আমার মনে হয় মা এর জন্য কেবল একটি দিন নয় সারা বছর ও সারা জীবন মাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিলেও তা যথেষ্ট নয়।

    সারা পৃথিবীর অধিকাংশ লোক মাকে কি বলে ডাকে সেই অজানা তথ্যটিও জানলাম।

    “আমি তোমারি নাম বলব,

    বলব নানা ছলে,—- শিশু যেমন মাকে,

    নামের নেশায় ডাকে

    বলতে পারে সেই সুখেতে

    মায়ের নাম সে বলে।”—–রবি কবি।

    Like

  2. Partha Pratim Dasgupta

    এমন এক প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছ যার কোন বিকল্প হয় না। পৃথিবী একটা গ্রহ সে হয়ত মাতৃহীন কিন্তু সেই পৃথিবীর মধ্যে যতরকম প্রাণ আছে তাদের প্রত্যেকের একটা “মা” আছে। মা হলো সন্তানের ধারক ও বাহক। মা হলো ভালোবাসা, আকাঙ্খা, অনুপ্রেরণার প্রতীক। প্রত্যেকের দেশের সঙ্গে মাতৃত্বের সম্পর্ক, তাই আমরা বলে থাকি, “দেশমাত্রিকা”। আর এই প্রসঙ্গেই মনে পড়ে, ম্যাক্সিম গোর্কির মা’ এর কথা। আর বেশি কথা বলব না, তবে আমার ব্যক্তিগত একটা অনুভূতির কথা বলবো। তা হলো, প্রত্যেক দেশে প্রতিটা মানুষ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু পরাধীনই থেকে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আমার যেটা মনেহয় তাহলো, প্রত্যেকের একটা মা আছে কিন্তু সারা পৃথিবীতে একটা ম্যাক্সিম গোর্কির মা নেই। তাই যতই আমরা বলিনা কেন যে বিপ্লব দীর্ধজীবী হোক, মানুষের মুক্তি আসুক, সেটা ওই স্লোগানেই থেকে যাচ্ছে। পরিণতি পাচ্ছে না শুধু একটার অভাবে, গোর্কির “মা”।

    Like

Leave a reply to supriyoroy Cancel reply