Generation gap – সুপ্রিয় রায় ও লিপিকা রায়

আজকের সমাজে , সাধারণ কিন্তু গভীর সমস্যা হলো “Generation Gap” বা প্রজন্মগত ব্যবধান। নতুন প্রজন্মের অনেককেই মাঝে মাঝে বলতে শুনি এটা Generation gap এর ব্যাপার , তোমরা বুঝবে না । “Generation gap” বলতে সাধারণত আমরা বুঝি  — এক প্রজন্মের মানুষের সঙ্গে পরবর্তী বা পূর্ববর্তী প্রজন্মের চিন্তাধারা, মূল্যবোধ, জীবনধারা, রুচি, মতামত এবং অভ্যাসের পার্থক্য। বাবা-মা বা দাদু-দিদাদের বয়সীরা যে সময় ও চিন্তাধারায় বড় হয়েছেন, আজকের  তরুণ প্রজন্ম তার থেকে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু এই পার্থক্যটা , সমস্যা না হয়ে সম্পর্কের সৌন্দর্যও তো হতে পারে — যদি আমরা একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করি।সাধারণত বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে এই ব্যবধান সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে।কারণ হিসাবে আমরা বলতে পারি  যে –

  • পুরনো প্রজন্মের মানুষরা অনেক সময় প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত নন, অথচ তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাপন করে।
  • পোশাক, গান, বিনোদন বা প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে দুই প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতে পারে।
  • জীবনের লক্ষ্য ও জীবিকা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভিন্নতা দেখা যায়।

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও শিক্ষার ধরণ বদলায়।প্রত্যেক প্রজন্ম আলাদা পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতায় বড় হয়, তাই তাদের চিন্তাভাবনাও ভিন্ন হয়ে ওঠে।এই ব্যবধান তখনই কমতে পারে  যখন –

  • একে অপরের মতামত শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনবে ।
  • খোলামেলা আলোচনা ও বোঝাপড়া তৈরি করবে ।
  • পুরনো প্রজন্মের অভিজ্ঞতা ও নতুন প্রজন্মের উদ্ভাবনী চিন্তাকে উভয়েই সম্মান জানাবে  ।

একটি খুব ছোট সাধারণ গল্পের মাধ্যমে Generation gap বা প্রজন্মগত ব্যবধান কি করে কমতে পারে সেটা বোঝাতে আমরা একটু চেষ্টা করছি ।

গল্প: দাদু আর নাতি

এক গ্রামে তিলক নামে একটি ছেলে তার মা-বাবা ও দাদুর সঙ্গে থাকতো। তিলক ছিল স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের ভীষণ ভক্ত। তার সময় কাটত স্মার্টফোনে, ভিডিও গেমে আর ইউটিউব দেখে।
সে খুব কম সময়ই দাদুর সঙ্গে বসে গল্প করতো।

একদিন তিলকের স্কুলে একটি প্রজেক্ট আসে — “আমার গ্রামের ইতিহাস”। সে গুগল সার্চ করে সেরকম ভাল তথ্য খুঁজে পায় না  এমনকি কোন বইতেও সেরকম পায় না । তখন তার মা তাকে বলে
— “তোর দাদু তো এখানকার সব জানে, তাঁর কাছে গিয়ে সব ভাল করে শুনে গ্রামের ইতিহাস সন্মন্ধে লিখে ফেল ।”

তিলক কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাদুর কাছে গিয়ে বলল,
— “দাদু, তুমি কি আমা্দের গ্রামটা নিয়ে কিছু বলতে পারো?”

দাদু হেসে বললেন,— “তুই তো কখনও শোনার সময় দিস না! তবে আয়, আজ সব বলি।”আর তারপর দাদু শুরু করলেন গ্রামের পুরনো দিনের গল্প, কিভাবে খাল খনন হয়েছিল, কবে স্কুল গড়া হয়েছিল, কোন মানুষগুলো গ্রাম গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছিল — সব কিছু।

তিলক মুগ্ধ হয়ে শুনছিল। সে বুঝতে পারল, শুধু প্রযুক্তি দিয়ে সব জানা যায় না, পুরনো প্রজন্মের অভিজ্ঞতা কত মূল্যবান!

পরদিন স্কুলে সবাই তিলকের কাজ দেখে অবাক হয়ে যায়। শিক্ষক বলেন, — “তুমি এসব তথ্য কোথায় পেলে?”
তিলক হেসে বলে — “আমার দাদু হলেন আমার জীবন্ত গুগল!”

প্রজন্মগত ব্যবধান আমাদের দূরে সরিয়ে দেয়, কিন্তু যোগাযোগ আর বোঝাপড়ার মাধ্যমে আমরা একে অপরের সম্পদ হয়ে উঠতে পারি। প্রজন্মের পার্থক্য মানেই সম্পর্কের দূরত্ব নয়। বরং দুই প্রজন্ম একে অপরকে সময় দিলে, গল্প করলে, শোনালে — দুই দিক থেকেই শেখা যায়। পুরনোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের প্রযুক্তি ও ভাবনার মেলবন্ধনই পারে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ।

প্রজন্মগত ব্যবধান থাকতেই পারে, কিন্তু সেটা যেন হৃদয়ের ব্যবধান না হয়।দুই প্রজন্ম যেন সেতু তৈরি করে , দূরত্ব নয়। আমরা সবাই একে অপরের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখতে পারি — যদি কেবল একটু মন দিয়ে শুনি।

তাই আমাদের মনে হয় Generation gap এর ব্যাপারে আমাদের সবার  শ্লোগান হওয়া উচিৎ –  “প্রজন্মের ব্যবধান নয়, হোক বোঝাপড়ার সেতু”।  

8 thoughts on “Generation gap – সুপ্রিয় রায় ও লিপিকা রায়

  1. Partha Pratim Dasgupta

    এই প্রজন্মগত সমস্যা একটু হলেও সর্বদাই ছিল। যেমন আমাদের ঠাকুরদাদের সাথে আমাদের বাবাদের সমস্যা আর আমাদের বাবাদের সাথে আমাদের সমস্যা ততটা ছিলনা, কারণ ওই সময়ে প্রযুক্তি নির্ভরতা প্রায় ছিলই না। কিন্তু আমাদের সাথে আমাদের ছেলে-মেয়েদের মাঝে এই সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারণ এই সময়ের ফাঁকে বিজ্ঞানের কম্পিউটার ভিত্তিক প্রযুক্তি নির্ভরতার মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে অধিকাংশ পরিবারের কাছে পরিশেষে একটিই কথা, তাহলো ‘জেনারেশন গ্যাপ ‘।

    তোমাকে ধন্যবাদ যে তুমি কি সুন্দরভাবে সমস্যার সমাধানের একটা রাস্তা দেখিয়ে দিলে। প্রত্যেকের এটা অনুধাবন করা উচিত এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেই গ্যাপের সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হওয়া উচিৎ।

    Like

  2. Ratnabali Chatterjee

    সুপ্রিয়দা এত সুন্দর নানা রকম বিষয় নিয়ে মনোজ্ঞ লেখা উপস্থাপন করেন যে সবসময় কোন্ নতুন বিষয় উপস্থাপন করবেন সেই অপেক্ষায় থাকি।

    সত্যি,দুই প্রজন্মেরই সুযোগ থাকে পূর্ববর্তী বা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কিছু শেখার।আর আমার মনে হয় কারোই এই সুযোগ ছাড়া উচিৎ নয়।তাহলেই দুই প্রজন্মই ঋদ্ধ হবে।এই তিলক ছেলেটি কি নিজের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছে ,না সবটাই কল্পনা, খুব জানতে ইচ্ছে করছে। ছবিগুলো কাদের তা জানি না তবে খুব সুন্দর।

    Like

  3. Udayan Kumar Mukherjee

    ঠিক কথা। জেনারেশন গ্যাপ একটা দায় এড়ানো কথা। পুরোনোরা নতুনদের ভালো কিছু মানতে চায়না । আর নতুনরা পুরোনো নিতে চায়না। তবে একটা জিনিসে এ প্রজন্মের সংগীত এর ক্ষেত্রে ইয়ং জেনারেশন এগিয়ে। কোনো মিডল age বা ৫০ এর উপর লোকেরা কিছুতেই নতুন ভালো গান গাইতে চায়না অথচ ইয়ং জেনারেশন ওল্ড গান করে।

    Like

Leave a comment