আমাদের চোখে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস

25/08/2023 তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ আমরা তিনজন মানে আমি , আমার স্ত্রী লিপিকা ও আমদের বড় ছেলে অভ্র জুরিখ থেকে ট্রেনে রওনা হয়ে প্যারিস পৌঁছলাম রাত সাড়ে দশটা নাগাদ । বিশাল চারতলা রেলওয়ে ষ্টেশন । বাইরে বেড়িয়ে দেখি আমাদের এখানকার মতো ট্যাক্সিতে বিরাট লম্বা লাইন । তাই অপেক্ষা না করে এগিয়ে গেলাম রাস্তার দিকে । ওখান থেকে ওবার নিয়ে সোজা হোটেল ।শুনেছিলাম প্যারিসে খুব গরম হবে কিন্তু প্যারিসের আবহাওয়া ছিল ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ।হোটেলের চারতলার ঘরে ঢুকে জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি দূরে আইফেল টাওয়ার দেখা যাচ্ছে । মনটা ভড়ে গেল । প্যারিস বা পারি ফ্রান্সের রাজধানী। শহরটি উত্তর ফ্রান্সে ইল-দ্য-ফ্রঁস অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্রে সেইন(Seine) নদীর তীরে অবস্থিত।  এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান।

পরেরদিন সকালে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে হোটেলের কাছ থেকে মেট্রো ধরে সোজা চলে গেলাম পুরানো ফ্রান্সে ল্যাটিন কোয়ার্টারে অবস্থিত প্যান্থিয়ান(Panthéon)দেখতে । 1885 সাল থেকে এটি মহান লেখক, বিজ্ঞানী, জেনারেলদের জন্য শেষ বিশ্রামস্থল।অনেকটা রোমের সেন্ট পিঁটারসের আদলে তৈরি । অনেকটা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত । তারপর ইকল ইউনিভার্সিটির পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে গিয়ে পৌছালাম আমাদের  ছোটবেলায় পড়া ভিক্টর হুগোর বিখ্যাত বই – The Hunchback of Notre Dame এর নোত্র্‌ দাম দ্য পারিতে  । গথিক ডিজাইনের নোত্র্‌ দাম দ্য পারি ক্যাথেড্রাল প্যারিস শহর এবং ফরাসি জাতির একটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত প্রতীক। 1805 সালে, এটি একটি ব্যাসিলিকা হিসাবে সম্মানসূচক মর্যাদা লাভ করে। 15 এপ্রিল 2019 তারিখে এখানে আগুন লেগে  ক্যাথেড্রালের চূড়াটি ভেঙে পড়েছিল। তাই  রিপেয়ার হওয়ার কারণ এর ভিতর এখন ঢুকতে দেয় না । তারপর একটু হেঁটেই পৌঁছে গেলাম চ্যাপেল চার্চ ।ওখান থেকে একটু হেঁটে সেইন নদীর পাশ দিয়ে গিয়ে পৌঁছে গেলাম  171 ফুট উঁচু সেন্ট-জ্যাকস(Saint-Jacques) চার্চের অবশিষ্টাংশ গথিক টাওয়ারটি দেখতে যা 1797 সালে ধ্বংস করা হয়েছিল ফরাসি বিপ্লবের সময়ে , শুধুমাত্র টাওয়ারটা রেখে । তারপর বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প জাদুঘর ও প্যারিসের অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন স্থান ল্যুভর মিউজিয়াম দেখতে ঢুকলাম । আমাদের আগে থেকে টিকিট কাটা ছিল । তাই আর বিশাল লাইনে দাঁড়াতে হয়নি । একটি সুন্দর কাঁচের পিরামিডের প্রবেশদ্বারের মধ্য দিয়ে 73,000-বর্গ-মিটারের প্রদর্শনী স্থানটি তিনটি বিভাগে বিভক্ত-  ডেনন, রিচেলিউ এবং সুলি উইংস। এই অপূর্ব ভবনটি একসময় ফরাসী রাজাদের প্রাসাদ ছিল। প্রতিটি উইংয়ে প্রায় 70টি কক্ষ রয়েছে যেখানে চিত্রকর্ম এবং শিল্প সামগ্রী প্রদর্শন করা হয়েছে । সিকিউরিটি চেকের পর মিউজিয়ামের প্রবেশ করেই ছুটলাম লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মাস্টারপিস মোনালিসার পেইন্টিং (estimated to be worth $790 million  or Rs 6539 crore) দেখতে । একদম সামনে থেকে মোনালিসার এই রেনেসাঁ পেইন্টিং দেখে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম । আরও দেখলাম বিখ্যাত অন্যান্য শিল্পকর্মের মধ্যে হাম্মুরাবির সংহিতা, মাইকেলেঞ্জেলোর ভেনাস ডি মিলো এবং দ্য ডাইং স্লেভ, মিশরীয় পুরাকীর্তি এবং রেমব্রান্ট এবং রুবেনসের ছবি মনে হচ্ছিল আধুনিক এবং ধ্রুপদী উপাদানের মিশ্রণ দেখছি । ঐ বিশাল প্রাসাদের সব ভালমতো দেখতে মিনিমাম তিন-চার দিন লাগা উচিৎ ।দেখতে দেখতে অনেক সময় হয়ে গেল তাই ফিরে আসলাম হোটেলে ।

পরেরদিন সকাল সকাল মেট্রো করে গেলাম প্যারিসের অন্যতম আইকনিক ল্যান্ডমার্ক আইফেল টাওয়ার দেখতে । 1889 এক্সপোজিশন ইউনিভার্সেলের জন্য গুস্তাভ আইফেল দ্বারা নির্মিত 1,083 ফুট উঁচু পেটা-লোহার জালির টাওয়ারটি প্যারিসের একটি স্থায়ী প্রতীক হয়ে উঠেছে এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ দর্শককে আকর্ষণ করে।রাত্রে আলোয় আইফেল টাওয়ার দেখার আমাদের টিকিট কাটা থাকাতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা চললাম আমাদের ইন্ডিয়া গেটের মতো প্যারিসের তথা ফ্রান্সের একটি বিখ্যাত স্মৃতিসৌধ আর্ক দ্য ত্রিয়োম্‌ফ (Arc de triomphe) দেখতে ।তারপর হাটতে হাটতে কাছেই  এম্বাপে যে ক্লাবে ফুটবল খেলে তাদেরই একটা স্টোরে ঢুকলাম । দেখলাম প্লেয়ারদের অনেককিছু রাখা আছে । ওখান থেকে কিছুটা এগিয়ে পৌছালাম পালে গার্নিয়ে(Palais Garnier) প্যারিসের একটি গীতিনাট্যশালা যেটি প্যারিসের স্থাপত্যকলার একটি অপূর্ব নিদর্শন।ওর কাছেই দেখলাম বিশাল বিশাল সব প্রাসাদ ও উদ্যান যার মধ্যে রয়েছে জার্‌দাঁ দু লুক্সমবুর , Tuileries গার্ডেন। তারপর আমাদের গন্তব্য ছোট পাহাড়ের ওপরে 1875 সালের একটি রোমান ক্যাথলিক গির্জা যার নাম Sacré-Cœur ব্যাসিলিকা । একটা কেবিল কারে করে উঠে গেলাম ব্যাসিলিকার কাছে।আমাদের কাছে মেট্রোর টিকিট ছিল তাই কোন চার্জ লাগলো না ।  উপর থেকে সারা প্যারিস শহর খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছিল ।বেশ কিছুক্ষণ ওখানে কাটিয়ে ফ্রান্সের প্রিয় খাবার ক্রেপ ( Crepe)ও ম্যাকারন (Macarons) খেয়ে ছেলে আমাদের নিয়ে চলল সেইন নদীর ধারে ক্রুজে করে প্যারিস শহরটা প্রদক্ষিণ করাতে । ক্রুজের ছাদে বসে প্রতিটা দর্শনীয় স্থাপত্যের ইতিহাস শুনতে শুনতে নদী পথে আবার প্যারিসকে ভালভাবে দেখে ফিরে আসলাম আইফেল টাওয়ারের সামনে । রাতের আলোয় আলোকউজ্জল  আইফেল টাওয়ারের উপর থেকে আলোর শহর বা ভালবাসার শহর প্যারিসকে প্রান ভড়ে দেখা । প্রায় আড়াই ঘণ্টা আইফেল টাওয়ারের উপর কাটিয়ে প্রচুর স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসলাম হোটেলে । পরের দিন আমাদের গন্তব্য বেলজিয়ামের ব্রাসেল ।   

Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos

Leave a comment