আমি , আমার স্ত্রী লিপিকা ও আমার বড় ছেলে অভ্র 23/08/23 তারিখ দুপুর বেলা বাসে করে মিউনিখ থেকে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ অভিমুখে রওনা দিলাম ।এয়ার কন্ডিশন দোতালা সুন্দর বাস, ভালই স্পীডে ছুটে চলছিল মিউনিখের গ্রাম শহর পেড়িয়ে । বেশ অনেকটা যাওয়ার পর দেখি আমাদের সামনে কোন রাস্তা বা ব্রিজ নেই, রয়েছে একটা বিশাল লেক । শুনলাম লেকটার নাম কনস্ট্যানজে(Constanze) ।আরও অনেক গাড়ীর সাথে আমাদের বাসটাও যাত্রী সমেত উঠে পড়লো বিশাল বড় একটা বোটের ওপর ।ঐ বোটে ওপারে নেমে আবার রাস্তা ধরে আমরা এসে পৌছালাম জুরিখ বাসস্ট্যান্ড । সাড়ে চার ঘণ্টা মতো সময় লাগলো । বাসস্ট্যান্ডের কাছেই রেলওয়ে ষ্টেশন । আমরা ট্রেন ধরে পৌছালাম জুরিখ এয়ারপোর্ট ।ওখান থেকে গাড়ী নিয়ে নিজেরাই ড্রাইভ করে চললাম সুইজারল্যান্ডের এক সুন্দর পাহাড়ি উপত্যকার লুসার্ন শহরে । লুসার্নে আমাদের হোটেলে পৌছাতে এক ঘণ্টা মতো লাগলো । সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল এর দর্শনীয় আলপাইন দৃশ্যাবলী। সুইস আল্পস দেশের দক্ষিণ অংশে আধিপত্য বিস্তার করে, যেখানে রাজকীয় তুষার-ঢাকা চূড়া, মনোরম উপত্যকা এবং স্ফটিক-স্বচ্ছ হ্রদ রয়েছে। আমরাও সকাল সকাল গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম আল্পসের রাজকীয় তুষার-ঢাকা চূড়া, মনোরম উপত্যকা উপভোগ করতে । আমাদের গন্তব্য ছিল পাহাড়ের 9744 ফুট ওপর শিলথর্ন(Schilthorn), যেখান থেকে 360 ডিগ্রীতে আল্পসের সমস্ত রাজকীয় তুষার-ঢাকা চূড়াগুলো দেখা যায় । আমাদের গাড়ী ছুটে চলল কখনও স্ফটিক-স্বচ্ছ লেকের পাশ দিয়ে , কখনও আবার দুপাশের সবুজ মনোরম উপত্যকার মধ্য দিয়ে , গ্রাম , শহর পেড়িয়ে মুড়েন গ্রামের কাছে যেখান থেকে কেবিল কারে করে তিনবার ধাপে ধাপে উঠতে হবে 9744 ফুট পাহাড়ের ওপরে । এত stiff ও এত উঁচু কেবিল কার রাইড আমি কোথাও দেখিনি । জেমস বন্ডের বেশ কয়েকটা সিনেমার শুটিং হয়েছে এখানে । শিলথর্নে পৌঁছে চারিদিকে তাকিয়ে দেখি আল্পসের সবকটা পিক আমাদের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে – শিঙ্গেলহর্ন(Tschingelhorn) , ব্রেথর্ন ( Breithorn) , জংফ্রাউ(Jungfrau) , মঞ্চ(Monch) , আইগার(Eiger) , শ্রেকহর্ন(Schreckhorn) , ওয়েটারহর্ন (Wetterhorn) ও শোয়ার্জহর্ন(Schwarzhorn) । পাহাড়ের মাথায় উঠে চারপাশে এইসব তুষারে ঢাকা চুড়াগুলো সামনে থেকে দেখা – এ এক অপরূপ অনুভূতি ।মনে হয় সবকিছু ভুলে পৃথিবীর এই সুন্দর রূপ প্রাণভরে উপভোগ করি । কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা নেমে আসলাম ইন্টারলেকেন যে জায়গার রাস্তাগুলি বলিউডের রোমান্টিক ছবির স্মৃতিতে ভরা। যশ চোপড়া এই ইন্টারলেকেনের এখনও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর,ওনার মূর্তি আছে এখানে ।এখানে দুটো সুন্দর লেক আছে ও বড় একটা সুন্দর পার্ক আছে । অনেক ভারতীয় রেস্টুরেন্ট আছে । তারপর ইন্টারলেকেন থেকে আমরা এক ঘণ্টা জার্নি করে আসলাম লুসার্ন ।এসেই চলে গেলাম 170 মিটার লম্বা চ্যাপেল ব্রিজ দেখতে যেটা একটি কাঠের আচ্ছাদিত পথচারী সেতু , লুসার্ন শহরের রিউস নদীর উপর বিস্তৃত। এটি 1333 সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি ইউরোপের প্রাচীনতম কাঠের সেতুগুলির মধ্যে একটি।হঠাৎই ছেলে দেখতে পেল রাস্তার ওপর চলা টয়ট্রেন শহর ঘুরে দেখাচ্ছে । সাথে সাথে আমরাও চললাম টয়ট্রেনের করে এই সুন্দর পাহাড়ি শহর ঘুরতে ।এক ঘণ্টার রাইড আর সঙ্গে গাইড, আর কি চাই ।ছোট্ট সুন্দর পাহাড়ি শহরটা ঘুরে, বেশ কিছুক্ষণ লেকের ধারে বেঞ্চে বসে রইলাম । ঠাণ্ডা নেই তাই প্রচুর লোকের ভিড় এই পরিষ্কার লেকের ধারে । পরেরদিন সকালে প্রাতরাশ সেরে আমরা রওনা হলাম জুরিখ শহর যা সুইজারল্যান্ডের আর্থিক ও ব্যবসায়িক রাজধানী । শহরটি জুরিখ নদী দ্বারা ওল্ড টাউন এবং নিউ টাউনে বিভক্ত। আমাদের সাথে গাড়ী ছিল আর হাতে সময় ছিল অনেক কেননা সন্ধ্যাবেলা জুরিখ থেকে আমাদের প্যারিস যাওয়ার ট্রেন । একে একে দেখলাম জুরিখ লেক , জুরিখের একমাত্র বারোক চার্চ সেন্ট পিটার্স চার্চ, শতাব্দী-পুরনো গীর্জা, রেনেসাঁ যুগের রাস্তা , গ্রস মুনস্টার- একটি সুন্দর রোমানেস্ক প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ । সুইস রন্ধনপ্রণালী বৈচিত্র্যময় এবং প্রতিবেশী দেশগুলির দ্বারা প্রভাবিত। ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে ফন্ডু, রেকলেট, রোস্টি (একটি সুইস আলুর খাবার) । খাওয়া দাওয়া সেরে আবার বেড়িয়ে পড়লাম ঘুরতে । অপেরা হাউস , জাদুঘর , ইভানজেলিকাল গির্জা দেখে শহরের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ফিরে আসলাম জুরিখ এয়ারপোর্ট যেখানে আমাদের গাড়ী জমা দিতে হবে । এবার ট্রেনে করে ফ্রান্সের প্যারিস যাওয়ার পালা ।
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos