আমার বড় ছেলে অভ্র গত 22/08/2023 তারিখ ভোরবেলা আমাদের নিয়ে চলল ইউরোপের আরও কতগুলি আকর্ষণীয় দেশ ঘোরাতে ।অফিসের ছুটির অভাবে আমা্দের বৌমা তিতলি যেতে পারলো না । আমরা তিনজন সকালের বিমানে হেলসিঙ্কি থেকে জার্মানির মিউনিখ শহরে এসে নামলাম । আমার ছোট ভাইয়ের ছোট ছেলে মিকি আমাদের সাথে মিউনিখে এসে আমাদের গ্রুপে জয়েন করলো । ও বর্তমানে জারমানিতে MS করছে । হোটেলে সব জিনিসপত্র রেখে আমরা চারজন চললাম মিউনিখ শহর পরিদর্শন করতে । মিউনখ শহরের দর্শনীয় স্থানগুলি মোটামুটি কাছাকাছি । পায়ে হেটেই সব দেখা যায় । মিউনিখ বা জার্মান ভাষায় München, জার্মানির বাভারিয়ার রাজধানী এবং জার্মানির তৃতীয় বৃহত্তম শহর। ব্যাভারিয়ান আল্পসের তীরে ইসার নদীর তীরে অবস্থিত।মিউনিখ তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বিখ্যাত বিয়ার সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। ইতিহাস খ্যাত বা অখ্যাত নাজি আন্দোলনের সাথে সাথে হিটলারের উত্থান এই মিউনিখ শহর থেকেই । হিটলার যে বাড়িতে প্রথম সভা করেছিলেন এবং যে স্কোয়ারে লেকচার দিতেন সে জায়গাগুলো দেখতে দেখতে হিটলারের সময়কার বিভীষিকাময় ইতিহাস চোখের সামনে ভেসে উঠছিল । অবশ্য জার্মানির একটা সুন্দর গৌরবময় ইতিহাসও আছে যখন ইস্ট জার্মান আর ওয়েস্ট জার্মানের দুই দেশের জনগন বার্লিন প্রাচীর ভেঙে দুই দেশকে এক করেছিল । আমরা পারবো না কারণ ধর্ম আমাদের অন্তরায় হবে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই শহরটাকে বোমা মেরে ধ্বংস করা হয়েছিল, তবে এত সুন্দর পুনর্নির্মাণের কাজ হয়েছে যে আজ এটি জার্মানির অন্যতম পর্যটন শহর।আমরা প্রথমেই চলে গেলাম মারিয়েনপ্ল্যাটজ( Marienplatz ) যেটি মিউনিখের কেন্দ্রীয় স্কোয়ার এবং বিখ্যাত গ্লোকেনস্পিল সহ দুর্দান্ত নিউস রাথাউসের (নিউ টাউন হল) মতো ঐতিহাসিক ভবন দ্বারা বেষ্টিত । প্রতিদিন সকাল 11 টা, দুপুর 12 টা এবং বিকাল 5 টার সময় সবাই নিউস রাথাউসের সামনে বিখ্যাত গ্লোকেনস্পিল দেখার জন্য থামে, কারণ এর যান্ত্রিক চিত্রগুলি সামান্য কিছু সময়ের জন্য নাচ করে।আমাদের দেখারও সৌভাগ্য হয়েছিল ।এর কাছেই রয়েছে 22000 স্কোয়ার মিটারের জনপ্রিয় খাবারের বাজার যার নাম ভিক্তোলিয়েনমার্কট ও আকাশচুম্বী সেন্ট পিটারস চার্চ যার উপর থেকে সারা মিউনিখ শহর আল্পস পর্বত সহ দারুণ সুন্দর দেখা যায় । মারিয়েনপ্ল্যাটজ আসার পথে দেখলাম 1733 থেকে 1746 মধ্যে তৈরি সেন্ট জোহান নেপোমুক যা আসাম চার্চ নামে পরিচিত । এছাড়া দেখলাম জার্মানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প জাদুঘর আল্টে পিনাকোথেক , কয়েকটি রাজকীয় প্রাসাদ এবং তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নিম্ফেনবার্গ প্রাসাদ যেটি চমত্কার উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত। এই বারোক প্রাসাদটি একসময় বাভারিয়ান শাসকদের গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান ছিল। আরও দেখলাম বিশ্বের বৃহত্তম শহুরে উদ্যানগুলির মধ্যে একটি ইংলিশ গার্ডেন যার মধ্যে দেখলাম আইসবাচ নদীর উপর কৃত্রিম তরঙ্গে চড়ে সার্ফারদের কেরামতি । এছাড়া দেখলাম মিউনিখের সবচেয়ে আইকনিক ল্যান্ডমার্কগুলির মধ্যে একটি ফ্রুয়েনকির্চে, একটি অত্যাশ্চর্য গথিক ক্যাথেড্রাল যেখানে স্বতন্ত্র পেঁয়াজ-আকৃতির গম্বুজ রয়েছে যা শহরের আকাশরেখায় আধিপত্য বিস্তার করে। রাত্রে জার্মানির ঐতিহ্যবাহী বাভারিয়ান রন্ধনপ্রণালীর প্রেটজেল, সসেজ এবং সাউরক্রউটের মতো হৃদয়গ্রাহী খাবারের সাথে জার্মানির বিখ্যাত বিয়ারের স্বাদ গ্রহণ, আমাদের এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল । মিউনিখ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ওক্টোবারফেস্ট বা বিয়ার উৎসবের জন্মস্থান । এই প্রাচীন উৎসবের সূচনা হয় ১৮১০ সালে ।যারা বেড়াতে গিয়ে ভারতীয় খাবার খেতে চায় , তাদেরও কোন অসুবিধা নেই কারণ বেশ অনেককটা ভারতীয় রেস্টুরেন্ট আছে এই মিউনিখ শহরে । দেড় দিনের মিউনিখ যাত্রা শেষ করে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য বাসে করে সুইজারল্যান্ড ।
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos