হাতে সেরকম কোন কাজ ছিল না তাই একা বসে বসে পুরানো স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম মনে মনে । খুব ভাল লাগছিল । সিনেমার মতো এক একটা দৃশ্য এক এক করে সামনে আসছিল । হঠাৎই আমার চোখের সামনে ভেষে উঠলো আমাদের শিলিগুড়ির আবাসনের বেশ কিছু দিন আগের দুর্গাপূজার কিছু ঘটনা । সেবার আবাসনের অষ্টমী পূজার দিন সবাই সকালবেলা অঞ্জলীর জন্য দাঁড়িয়ে ছিল । পাড়ার এক মহিলা সবার হাতে ফুল- বেলপাতা দিচ্ছিল । হটাৎই একটা ৫ -৬ বছরের বাচ্চার দিকে তাকিয়ে উনি বলে উঠলেন – “ আরে তুই এখানে ? তুই কি অঞ্জলি দিবি নাকি ? তোর বাবা – মা জানে ?” ছেলেটি কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো , তারপর বললো –“কেনো বাবাই , টুবাইয়ের হাতে তো ফুল দিলে , ওদের তো কিছু বললে না ।“ যেহেতু ছেলেটির বাবা অন্য ধর্মের তাই মহিলাটি কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না । ওর বাবা -মা একটু দুরে দাঁড়িয়ে নজর রাখছিল । ওর মা এগিয়ে এসে বললো –“আমাদের কোনো আপত্তি নেই ।তোমাদের যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে ওর ইচ্ছা ওকে পূরণ করতে দাও নাহলে এই ছোটবেলাতেই ওর মনে ভেদাভেদ তৈরি হবে।“ খুব ভালো লাগলো কথাটা শুনে এবংআরও ভাল লাগলো যখন দেখলাম সবাই খুশি মনে ব্যাপারটা মেনে নিল । বাচ্চাটিও ওর দুই বন্ধু বাবাই , টুবাইয়ের সাথে আনন্দের সাথে অঞ্জলি দিল । ছেলেটি অঞ্জলি কি জিনিষ জানে না । শুধু জানে ওর বন্ধুরা যা করছে ওকেও তাই করতে হবে ।
বাচ্চাটির বাবা আমার খুবই পরিচিত । ও ভালোবেসে বিয়ে করেছিল অন্য সম্প্রদায়ের একটি মেয়েকে । মেয়েটির বাড়ির লোকেরা কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নিতে পারিনি । অন্য জাত বা অন্য কাস্ট হলে বাড়ির লোকেদের আপত্তি হতো না যদি দুজনে একই ধর্মের হত । অগ্যতা দুই বাড়ির চরম অসন্তোষের মধ্যে ওরা দুজনে একে অপরের হাত ধরে বেড়িয়ে পড়ল অজানার উদ্দেশ্যে । আমরা ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম । নিয়ে আসলাম আমাদের আবাসনে । দুজনেই সাবালক এবং যথেষ্ঠ শিক্ষাদীক্ষা আছে ওদের মধ্যে। অর্থনৈতিক সংগতিও আছে । সুতরাং কোনো ঝামেলাই বেশিদিন টিকলো না । ওরা চুটিয়ে সংসার করতে লাগলো । দুপক্ষেরই কিছু আত্বীয়স্বজন লুকিয়ে যোগাযোগ রাখা শুরু করলো ।
আমরা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলাম । মাঝে মাঝে ছুটির দিনে ওরাও আসে আমাদের বাড়িতে , আমরাও যাই ।একসাথে খাওয়া- দাওয়া , গল্প -গুজব করে বেশ ভালই সময় কাটছিল ।ওদের বাড়িতে একটা মজার জিনিস দেখছিলাম ।খুব একটা গোঁড়া না হলেও ধর্মীয় কিছু আচার ও অনুষ্ঠান ওদের পালন করতে দেখেছি । সেটাও একসাথে এবং দুই ধর্মেরই । যেহেতু বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান দুজনেরই ছোটবেলা থেকেই রন্ধে রন্ধে ঢুকে গেছে , তাই হয়ত দুজনে দুজনের মত মানে। দুজনের কারও কোন আপত্তি দেখনি । আমরাও খুশি কারণ একই জায়গায় দুই সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করছি । অনেকদিন ধরে দেখে আসছি কোন হিন্দু মেয়ে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করলে মেয়েটি ধর্ম পরিবর্তন করে, এমনকি এতদিনকার নাম পরিবর্তন করে মুসলিম নাম রাখে। আবার দেখেছি কোন হিন্দু ছেলে মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করলে ছেলেটি তার ধর্ম পরিবর্তন করে এবং সেই এতদিনকার নামও পরিবর্তন করে নূতন নাম নেয়। কিন্তু আমাদের কাছে ওরা দুজনে আগে যা ছিল তাই আছে ।একই নাম , একই পদবি ,একই ধর্ম , একই আচার , একই বেশ, কোনো পরিবর্তন চোখে পরে না । এমনি করে বেশ আনন্দেই কাটছিল ওদের জীবন । পরিবারের সংখ্যা বাড়লো ।ছোট্ট এক নুতন অতিথি জন্ম নিল ওদের ঘরে । নুতন অতিথির আকর্ষনে দুই পরিবারের মিলন হলো । ছেলের বাড়ি আর মেয়ের বাড়ি উভয়েই সব ভুলে মেতে উঠলো আনন্দে ।আমরাও দারুন খুশি । বাচ্চাটাও দুই বাড়ির আদরের সাথে বড় হতে লাগলো । বা ও মা, ঠাকুরদা ও ঠাকুমা এবং দাদু ও দিদিমার কাছ থেকে শিখতে লাগলো দুই ধর্মের আচার ও অনুষ্ঠান । ওদের বাড়িতে বসে একদিন জমিয়ে আড্ডা মারছিলাম ওদের একটা কথা আমাদের সবাইকে দারুনভাবে নাড়িয়ে দিল ।বলে কিনা, বাচ্চা যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে তখন ও ঠিক করবে ও কোন ধর্ম নেবে বা আদৌ কোনো ধর্ম নেবে কিনা । ওরা চাপিয়ে দেবে না । আর এই জন্য ওরা বাচ্চার কোনো পদবি রাখেনি ।এ নিয়ে তো কোনো দিন চিন্তাই করিনি । বাবার যা ধর্ম ছোটবেলা থেকে তাই মেনে এসেছি । ব্যাপারটা ভালই লাগলো । সত্যিই তো ১৮ বছরে একজন ভোট দানের অধিকার পায় , সাবালক হয় তাহলে সেই সময় ধর্ম পছন্দ করার অধিকার সে পাবে না কেন ।যদি সব স্কুলে ছোটবেলা থেকে সব ধর্ম পড়ানো হয় তাহলে সবাই সব ধর্ম সমন্ধে ভাল করে জানতে পারবে এবং ভবিষ্যতে কোন ধর্মালম্বী হবে বা আদৌ হবে কিনা সেটা সে নিজেই ঠিক করতে পারবে । অন্যান্য দর্শনের মত যে কোনো ধর্মগ্রন্থ তো একটা ভাববাদী দর্শন। প্রত্যেকেরই অধিকার আছে তা ভালোভাবে জানার এবং মন থেকে মানার বা না মানার ।ব্যঙ্গ করার অধিকার কারো নেই । যেটা দেখা যায় শুধুমাত্র হিন্দুদের দেবদেবী নিয়ে । এর মধ্যে যা লেখা আছে সেটা কারো পছন্দ হতে পারে বা নাও হতে পারে । কিন্তু মানা বা না মানার সাথে ব্যঙ্গ বা ভয়ের কোনো সমন্ধ নেই । ভয় দেখিয়ে যেমন ভালবাসা করানো যায় না আবার ভয় দেখিয়ে তেমনি ভালবাসা শেষ করাও যায় না । ধর্মের সাথে যোগাযোগ মানসিক শান্তির , ক্রোধের নয় বা ভয় দেখানো নয় । মাঝে মাঝে দেখি অনেক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ ফেসবুকে কোনো ছবি শেয়ার করতে বা ফরওয়ার্ড করতে বলে , করলে খুব ভাল হবে , না করলেই অমঙ্গল ।এতো সরাসরি ভয় দেখানো । কোনো ধর্মে এর স্থান আছে বলে আমার মনে হয় না । প্রচার প্রচারের মতই হওয়া উচিত । কেউ যদি এক ধর্মকে আলিঙ্গন করতে চায় সেটাতো সেই ধর্মের মানুষের কাছে আনন্দের । কোনো রকম বাঁধা দেওয়া তো উচিত নয় । সানন্দে গ্রহণ করাইতো উদারতা । আগুনের ধর্ম যদি হয় পোড়ান , জলের ধর্ম যদি হয় ভেজানো তাহলে মানুষের ধর্ম নিশ্চয় মনুষ্যত্ব ।ধর্ম সমন্ধে স্বামী বিবেকানন্দের কথা খুব মনে পড়ছে ওনি বলেছিলেন – ”ধর্ম এমন একটি ভাব, যাহা পশুকে মনুষ্যত্বে ও মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করে। ” যাইহোক ধর্ম কি এবং ধর্ম কাকে বলে এই নিয়ে বিস্তর লেখা আছে । আমার শুধু এই পৃথিবীর কাছে একটাই অনুরোধ পৃথিবীর সব মানুষের কাছে ধর্ম হোক তার নিজস্ব অধিকার ।
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos
Tapasi Banerjee
Khub khub sunder. Tomar sathe ami ek mot.
Apurba Neogi
Excellent.
Naru Mahato
পড়ে ভালো লাগলো ।
Bani Paul
Khub sundor
Goutam Gupta
দারুণ লাগল
Sucheta Sen
খুব ভাল লাগল পড়ে
Kanti S
Khub bhalo laglo
Biplabshankar Mazumder
ধর্ম উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্তি নয় , ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার নয়। ধর্ম হচ্ছে মানুষের সদিচ্ছা পূরণের , অন্তরের আহ্বান প্রকাশের, স্থির লক্ষ্যে পৌঁছনোর, মাধ্যম।
তোমার বক্ত্যব্যকে আমার অভিনন্দন।
Partho Mukherjee
Khub khub sundar lekhata. Erokom lekha aro anek 2 chai. Thanks a lot.
Anirban Dasgupta
Khub sundar laglo
Shubhranshu Mohan Banerji
সুন্দর অভিব্যক্তি, মনকে নাড়া দেয় । কিন্তু, আজকের অতি মাত্রার বাস্তব মুখি জীবন ইপ্সিতা আমাদের মনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলকে ক্রমাগত শুষ্ক করে দিচ্ছে আর ফলস্বরূপ অসহিষ্ণুতা এবং অবক্ষয় সমাজকে গ্রাস করছে ।
Kamalendu Haldar
লেখাটা ভালো লাগলো।
Debu Roy
Darun laglo ke lekcho
Uttam Dey
Exellent.Darun likhecho dada.Ekhon to jor kore sab hochhe.
Reena Dasgupta
Bhalo laglo
Arpan Paul
Khub bhalo laglo pore
Chanchal Bhattacharya
খুব সুন্দর লাগলো।
এই ভাবনার প্রসারই পারে পৃথিবীকে বাঁচাতে এবং সুন্দর করতে।।
Mita Sen
Bahhh
ললিতা রায়
Khub khub valo laglo pore
Prasanta Chakraborty
Beautiful. Thought provoking.
Nilu Biswas
Amar ja Mone h manusher dhrmo. Mnushty tai na
Nilu Biswas
Khub bhalo laglo pore
NisithenduBikas Lodh
খুব ভালো লাগলো পড়ে।
Dulal Dasgupta
Very nice
Amlan Roy Chowdhuri
Bhalo laglo .
Aparajita Sengupta
খুব সুন্দর হয়েছে লেখা টা ।এই ভাবনা পৃথিবী কে আরও সুন্দর করে তুলবে ।
Swapan Dattaray
Nice .
Aloka Mitra
Ofcourse keep on writings to make social awareness
Subrata Ghosh
SubratA Ghosh thanks you
Samarendra Nath Sarkar
Honestly say good beyond of anything prevailing in current status of religious views.. good morning..
Tapati Guha
Khub valo laglo. Ai vabnadiye takale sundor akta prithibi amader shamne nishchoy ashbe
Biplabshankar Mazumder
আমরা তো সেই জাত-জালিয়াত , যারা জাত দেখিয়ে ভণ্ডামি ক’রি , জাতের ধুঁয়া তুলে শ্রেণী তৈরী র পেশায় মজি।
আবার কিছু আমরা , এই কাহিনীর বাবা-মায়ের মতন উদার মনের হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের সহজাত মানসিক চেতনার সম্মান দেখাই।
মোদ্দা কথা জাত দিয়ে কখনই মানুষ চেনা যায় না । জাতিভেদের জিগির তুলে নিজের জাতিরই ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করা হয়।
LikeLiked by 1 person
THANKS TO ALL
LikeLike