খাবার বা Foods (কার্বোহাইড্রেট বা Carbohydrates/প্রোটিন বা Protein/চর্বি বা Fats/ভিটামিন বা Vitamin/খনিজ পদার্থ বা Mineral/জল বা Water)

কার্বোহাইড্রেট বা Carbohydrates

কার্বোহাইড্রেট হলো চিনি , শ্বেতসার বা starch , তন্তু জাতীয় বা fibre যা বিভিন্ন খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী কার্বোহাইড্রেটকে সহজ বা জটিল দুই ভাগে ভাগ করা যায় যেমন চিনি হলো সহজ কার্বোহাইড্রেট যা প্রায় সব খাবার, ফল ,শাক সবজি , দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার , প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় আর জটিল কার্বোহাইড্রেট হলো শ্বেতসার তন্তু যা পাওয়া যায় ভাত , রুটি , শ্বেতসার বহুল শাক সবজি , শিম বা শুঁটি জাতীয় খাদ্যের মধ্যে প্রতেক দিনের ক্যালরির প্রায় ৪৫ থেকে ৬৫ ভাগ আসা উচিত কার্বোহাইড্রেট থেকে কার্বোহাইড্রেট থেকে আমরা এনার্জি বা ক্যালোরি পাই যা আমাদের কোষের শক্তি, দৈহিক তেজ, কর্মক্ষমতা,তাপ উত্পাদন চর্বি গঠন বাড়াতে সাহায্য করে এই জাতীয় খাবারই আমাদের দেহ গঠন এবং দেহ সংরক্ষণের প্রধান উপাদান প্রতি গ্রাম কার্বোহাইড্রেট আমাদের . ক্যালোরি দেয় যখন আমরা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাই ,আমাদের শরীর কার্বোহাইড্রেট থেকে চিনি শ্বেতসার ভেঙ্গে শর্করা বা Glucose তৈরী করে যেটা রক্তের সাথে মিশে যায় আর তন্তু শরীর থেকে বাইরে বেড়িয়ে যায় হজম না হয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, যেসব কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে গ্লায়সেমিক ইনডেক্স বা Glycemic Index বেশি থাকে, সেসব রক্তে তাড়াতাড়ি মিশে গিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় আর যেসব কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে গ্লায়সেমিক ইনডেক্স বা Glycemic Index কম বা মাঝারি থাকে তারা রক্তে তাড়াতাড়ি মিশে গিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে না

প্রোটিন বা Protein

protein

প্রোটিন হলো শরীর গড়ার খাবার ঠিকমত বেড়ে উঠার জন্য , মাংসপেশী , মাথার ঘিলু আর শরীরের আরো নানা অংশ সুস্থ রাখার জন্য প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন খাবারের মধ্যে ডাল , মটরশুটি , বরবটি , সয়াবিন , বাদাম , ঘন সবুজ রঙের শাক সবজি , দুধ , দই , ছানা , মাংস , মাছ , ডিম ইত্যাদির মধ্যে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন পাওয়া যায় Small intestine বা ছোট অন্ত্রের মাধ্যমে শরীর প্রোটিন থেকে অ্যামিনো অ্যাসিড নিয়ে রক্তে পাঠায় আর রক্ত সেটা সারা শরীরে পাঠায় প্রতেক দিনের ক্যালরির প্রায় ১০ থেকে ৩৫ ভাগ আসা উচিত প্রোটিন থেকে এক গ্রাম প্রোটিন থেকে আমরা . এনার্জি বা ক্যালোরি পাই যেটা কোষের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে

চর্বি বা Fats

fats

ফ্যাট হলে শরীরের শক্তির উৎস যেটা শরীরকে ভিটামিন গ্রহণ করতে সাহায্য করে ভূট্টা, ক্যানোলা, তেল , মাখন , ঘি , মাংসের চর্বি , বাদাম , পনীর হলো স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের উদাহরণ ফাস্ট ফুড হলো অস্বাস্থকর ফ্যাটের উদাহরণ প্রতেক দিনের ক্যালরির প্রায় ২০ থেকে ৩৫ ভাগ আসা উচিত ফ্যাট থেকে এক গ্রাম ফ্যাট থেকে আমরা . এনার্জি বা ক্যালোরি পাই যেটা কোষের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে

ভিটামিন বা Vitamin

vitamins

ভিটামিন হলো একটা জৈব যৌগ যেটা উদ্ভিদ প্রাণী তৈরী করে এবং যেটার সামান্য পরিমান আমাদের জীবন ধারণের জন্য লাগে যেটার অভাবে আমাদের জীবনশক্তি কমে আসে এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় আমরা ভিটামিন সংগ্রহ করি খাবার থেকে কারণ আমাদের শরীর ভিটামিন তৈরী করে না বা যথেষ্ট করে না কোনো কোনো যৌগ মানুষের জন্য ভিটামিন কিন্তু অন্য প্রাণীর জন্য নয় যেমন ভিটামিন সি (ascorbic acid) মানুষের জন্য ভিটামিন কিন্তু কুকুরের জন্য নয় কারণ কুকুর নিজের জন্য যতটা প্রয়োজন তৈরী করতে পারে, মানুষ পারে না

এখন পর্যন্ত ১৩ রকমের স্বীকৃত ভিটামিন পাওয়া গেছে কিছু ভিটামিন চর্বিতে দ্রবণীয় আর কিছু জলে

চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন : এই ভিটামিনগুলি আমাদের শরীরের ফ্যাট টিসু এবং লিভারে মজুত থাকে পুরো দিনের জন্য কোন কোন ভিটামিন আবার মাস অবধি মজুত থাকে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন , জলে দ্রবণীয় ভিটামিন থেকে সহজ ভাবে মজুত হয় অন্ত্রের নালীর মাধ্যমে লিপিডের সাহায্যে এই ভিটামিন গুলি শরীর গ্রহণ করে

জলে দ্রবণীয় ভিটামিন : এই ভিটামিনগুলি শরীরে বেশিক্ষণ মজুত থাকতে পারে না , পেচ্ছাবের মাধ্যমে বেড়িয়ে যায় অন্য জলে দ্রবণীয় ভিটামিন এর স্থান গ্রহন করে

A, D, E, এবং K ভিটামিন হলো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন আর C এবং সকল B ভিটামিন হলো জলে দ্রবণীয় ভিটামিন

প্রায় সব ফল শাক সবজির মধ্যে আমরা সব ভিটামিন মিনারেল পাই কোনো কোনো ফল শাকসবজিতে কোনো কোনো ভিটামিন মিনারেল হয়ত বেশি মাত্রায় থাকে এবং অন্য ভিটামিন মিনারেল কম মাত্রায় থাকে

খনিজ পদার্থ বা Mineral

minerals

ভিটামিন আর মিনারেল শরীরকে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে সারাদিন শরীর বিভিন্ন খাবার থেকে ভিটামিন আর মিনারেল জোগার করে কিছু খাবারে অন্য খাবারের থেকে বেশি ভিটামিন আর মিনারেল থাকে ভিটামিন হলো জৈব বা অর্গানিক ( যেটা উদ্ভিদ প্রাণী থেকে তৈরী ) আর মিনারেল হলো অজৈব বা ইনর্গানিক ( যেটা জমি জল থেকে পাওয়া যায় ) বেশি পরিমানে আমাদের শরীরের প্রয়োজন কিছু মিনারেলের যেমন ক্যালসিয়াম যেটা আমাদের শরীরের বৃদ্ধি এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে আরো কিছু মিনারেল যেমন ক্রোমিয়াম (chromium) , তামা (copper), আয়োডিন (iodine), লোহা (iron), সেলেনিয়াম (selenium), দস্তা ( zinc) এগুলোকে বলা হয় চিহ্ন বা trace মিনারেল কারণ প্রতেক দিন খুব সামান্য পরিমান আমাদের শরীরের প্রয়োজন হয়

ভিটামিন মিনারেল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোগ ব্যবস্থাকে জোরদার করে , বৃদ্ধি বিকাশের সহয়তা করে , কোষদের অঙ্গদের তাদের নিজদের কাজ করতে সাহায্য করে ভিটামিন পিল , পানীয় ,সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার থেকে ঠিকমত খাবার খাওয়া ভাল যেমন এক গ্রাস দুধ থেকে আমরা ক্যালসিয়াম , ফসফরাস ,পটাসিয়াম পাই কিন্তু এক গ্রাস সোডা থেকে কিছুই পাই না গোটা শস্য বা অপ্রক্রিয়াজাত খাদ্য হওয়া উচিত আমাদের সর্বতম পছন্দ

হাঁড়ের জন্য আমাদের প্রয়োজন ক্যালসিয়াম যেটা আমরা পেতে পারি দুধ , দই , ডিম , সবুজ শাক সবজি ইত্যাদি থেকে দস্তা বা জিঙ্ক লোহা বা আইরন পেতে পারি শুকনো সকল প্রকার বিন , বীজ (seeds) ,ছোলা, লিভার , বাদাম , পাতা কপি , ঝিনুক , মসূর, সিদ্ধ শাক ইত্যাদি থেকে এছাড়া সহজে যেটা বলা যায় :-

  • রাগি বজরার মত দানা শস্যে প্রচুর ক্যালসিয়াম আর লোহা থাকে

  • গুড় আর তেঁতুলে সুস্থ রক্ত তৈরি করার মত লোহা থাকে

  • গারো সবুজ রঙের শাক সবজিতেও অনেক লোহা থাকে

  • সমুদ্রের গাছগাছরায় আয়োডিন থাকে

প্রায় সব ফল শাক সবজির মধ্যে আমরা সব ভিটামিন মিনারেল পাই কোনো কোনো ফল শাকসবজিতে কোনো কোনো ভিটামিন মিনারেল হয়ত বেশি মাত্রায় থাকে এবং অন্য ভিটামিন মিনারেল কম মাত্রায় থাকে

জল বা Water

water

সারাদিনে আমাদের কতটা জল খাওয়া উচিত এই প্রশ্নটা করা খুব সহজ কিন্তু উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন কারণ জল খাওয়া নির্ভর করে অনেকরকম অবস্থার উপর যেমন শারীরিক অবস্থা, পরিশ্রমের মাত্রা , কি রকম তাপমাত্রাতে বাস করি ইত্যাদি কোন একটা সুত্র বা ফর্মুলার উপর নির্ভর করে না শরীরের প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে

জল আমাদের শরীরের প্রধান রাসায়নিক উপাদান আমাদের শরীরের ৬০ ভাগ ওজন নির্ভর করে জলের উপর প্রতেকটা সিস্টেম জলের উপর নির্ভরশীল জল আমাদের খারাপ পদার্থ শরীর থেকে বাইরে বের করে দেয় , কোষের মধ্যে পরিপোষক পদার্থ বা nutrients বহন করে , চোখ ,নাক গলাকে ভিজিয়ে রাখতে সাহায্য করে

প্রতেক দিন নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস, ঘাম , পেচ্ছাব , পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে জল বেড়িয়ে যায় গড়ে প্রায় প্রতিদিন কিডনির মাধ্যমে . লিটার ,ফুসফুসের মাধ্যমে .৩৫ লিটার,চামড়ার মাধ্যমে .৪৫ লিটার আর অন্ত্রের মাধ্যমে . লিটার জল শরীর থেকে বেরিয়ে যায় খাবার পানীয়র মাধ্যমে তা প্রতিদিন পূরণ করতে হয় শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক রাখা খুবই দরকার জলের অভাব ঘটলে শরীর দুর্বল বোধ করে , শক্তি হারায় খাবার থেকে সাধারনত আমরা ২০% জল পাই কারণ ফল শাক সবজির মধ্যে প্রচুর জল আছে বাকিটা আমাদের খেতে হবে একটা অভ্যাস করে নিলে ভালো যেমন প্রত্যেক খাবারের সাথে বা দুটো খাবারে মধ্যে এক গ্লাস করে জল বা ক্যালোরি ফ্রী পানীয় নেওয়া আর শারীরিক পরিশ্রমের আগে,মধ্যে এবং পরে অবশ্যই ক্যালোরি ফ্রী বা কম ক্যালোরি যুক্ত পানীয় নিদেনপক্ষে জল গ্রহণ করা

বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী বেশি পরিমানে জল খুব তারাতারি পান করা স্বাস্থের পক্ষে বিপদজনক কারণ কিডনির কাজের সর্বোচ্চ হার . থেকে লিটার প্রতি ঘন্টায় ( থেকে কাপ প্রতি ঘন্টায় )

সাধারনত তিন ধরনের কাজে আমাদের জল লাগে ( ) পান করতে () খাবার বানাতে ( ) পরিস্কার হতে বা করতে

বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী:-

  • পরিস্কার জল একাই পারে জল সংক্রান্ত মৃত্যু( বিশেষ করে ডায়রিয়া)কে ২১ ভাগ কম করতে

  • স্যানিটেশন একাই পারে জল সংক্রান্ত মৃত্যু ( বিশেষ করে ডায়রিয়া)কে ৩৭ ভাগ কম করতে

  • ভাল ভাবে হাত ধোয়া পারে জল সংক্রান্ত মৃত্যু ( বিশেষ করে ডায়রিয়া)কে ৩৫ ভাগ কম করতে

সুতরাং নিশ্চয় জোর দিয়ে বলা যায় পরিশ্রুত জল আমাদের এই পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে

শরীরে জলের অভাব বা dehydration

শরীরে যে পরিমান জল বা পানীয় থাকা উচিত তার থেকে কম থাকলে তাকে ডিহাইড্রেসন বা dehydration বলে অনেক সময় ডিহাইড্রেসন বা dehydration মারাত্বক আকার ধারণ করে

কারণসমুহ :

  • খুব অতিরিক্ত ঘাম হলে যেমন গরম আবহাওয়াতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে

  • অসুখ করলে

  • বমি বা পেট খারাপ হলে

  • অতিরিক্ত পেচ্ছাব করলে

  • অনেক সময় অসুস্থ থাকার ফলে খাবার বা পানীয়র পরিমান কম হওয়ার জন্য

  • বমি বমি ভাব বোধ হলে

  • গলা বা মুখে ব্যথা বা কোনো ক্ষতর জন্য

  • বয়স্ক মানুষ এবং নির্দিষ্ট কিছু রোগের জন্য

উপসর্গ বা লক্ষণ :

  • বেশি করে জল তেষ্টা পাওয়া

  • মূখ শুকিয়ে গেলে বা আঠালো হলে

  • পেচ্ছাব কম হওয়া

  • ঘন হলুদ পেচ্ছাব

  • শুস্ক বা ঠান্ডা চামড়া

  • মাথাব্যথা

  • পেশীর খিঁচুনি

  • অলস ভাব

  • ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস

  • ঘোলা চোখ

  • অবসন্ন

  • আঘাত

  • সাময়িক উন্মত্ততা

  • কম রক্তচাপ

  • দাঁড়ালে যদি রক্তচাপ কমে যায়

  • আঙ্গুলে কিছুক্ষণ চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলে যদি গোলাপী রঙ না আসে

  • নাড়ির গতি বৃদ্ধি পেলে

  • কচি বাচ্চার মাথার তালুর নরম জায়গা বসে যাওয়া

  • চামড়ার রবারের মত টানটান ভাব চলে যাওয়া দু আঙ্গুল দিয়ে চামড়াটা টেনে ছেড়ে দিলে যদি চামড়ার ভাঁজ একেবারে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসে

প্রতিকার :

  • প্রতেক দিন পরিমান মত পানীয় গ্রহণ করা

  • গরম আবহাওয়াতে এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে যথেষ্ঠ পানীয় গ্রহণ করা

  • জ্বর, পেট খারাপ, বমির ইচ্ছা হলেও প্রচুর পানীয় গ্রহণ করতে হবে

  • চিনি নুনের সরবত শরীরে জলের অভাবে দারুন কাজ দেয় চিনির বদলে মধু বা গুড় দিলে আরো ভালো

  • ছোট ছেলেমেয়েদের বেলায় বেশি সতর্ক হওয়া উচিত কারণ ছোট ছেলেমেয়েদের জলের অভাবটা আরো তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়

  • Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos

One thought on “খাবার বা Foods (কার্বোহাইড্রেট বা Carbohydrates/প্রোটিন বা Protein/চর্বি বা Fats/ভিটামিন বা Vitamin/খনিজ পদার্থ বা Mineral/জল বা Water)

Leave a comment