আমরা প্রায়ই ভাবি, সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে কী করতে হবে? কিন্তু তার আগে আমাদের ভাবা উচিত — সমাজকে পেছনে টেনে ধরে কারা?
কেউ খোলাখুলি ক্ষতি করে, আবার কেউ “ভদ্র মুখোশ” পরে নীরবে সমাজের ভিত দুর্বল করে। সমাজে সবচেয়ে ক্ষতিকারক মানুষ শুধু তারা নয় যারা চোখের সামনে অপরাধ করে, বরং তারাও যারা —
১. ইচ্ছাকৃতভাবে গুজব ও ভুয়ো তথ্য ছড়ায়ঃ
তারা জানে — তথ্যটি মিথ্যা। জানে, এতে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াবে। তবুও তারা তা ছড়ায়। কেন?
- ক্ষমতার লোভে,
- ধর্মীয় বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে,
- অথবা শুধুই মনোযোগ কাড়তে চায়।
এরা ফেসবুকে ভাইরাল পোস্ট বানায়, ধর্ম বা জাতি নিয়ে উসকানি দেয়, কিংবা ভুয়ো বিজ্ঞান ছড়িয়ে মানুষকে বিপদে ফেলে। এই ধরনের মিথ্যা কথাগুলো শুধু গুজব নয়, এটি সমাজের আস্থাকে ধ্বংস করার বিষ।
২. দুর্নীতিপরায়ণ ‘স্মার্ট’ মানুষঃ
যারা সমাজের চোখে ‘চালাক’, ‘সফল’, কিন্তু আসলে নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না — তারা নীরবে সমাজকে ফাঁপা করে দেয়।
- ঘুষখোর সরকারি কর্মচারী,
- অসৎ শিক্ষক বা ডাক্তার,
- ক্ষমতার অপব্যবহারকারী জনপ্রতিনিধি — এরা ন্যায়ের নামে অন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করে।
এদের হাত ধরেই সমাজে ন্যায়বিচার নয়, বরং ‘চালাকি’কে আদর্শ মনে করা হয়।
৩. আধা-জ্ঞান ছড়িয়ে বিভ্রান্তি বাড়ানো ‘পন্ডিত’ বা অজ্ঞতাকে লালনকারী এবং ছড়ানো ব্যক্তিঃ
যারা না জেনে কথা বলে, অথবা অর্ধসত্য নিয়ে বড়াই করে — তারা মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করে তোলে।
এরা প্রায়শই নিজেকে ‘বিশেষজ্ঞ’, ‘গুরু’ বা ‘ওস্তাদ’ হিসেবে তুলে ধরে।
৪. ঘৃণা ও বিভাজনের কারিগরঃ
এরা ধর্ম, জাত, লিঙ্গ, ভাষা কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে সমাজকে ভাগ করতে চায়।
- “ওরা আমাদের শত্রু”,
- “ওদের জায়গা এখানে না”,
- “আমরা বিশুদ্ধ, ওরা অপবিত্র” — এমন চিন্তা সমাজে সহিংসতা ডেকে আনে।
ঘৃণার রাজনীতি, বিভাজনের সংস্কৃতি সমাজে একতার বুনিয়াদ ধ্বংস করে দেয়।
৫. নীরব দর্শক
সব জানে, বোঝে, দেখে — কিন্তু চুপ থাকে।
- প্রতিবাদ করে না,
- প্রশ্ন তোলে না,
- যেন কিছুই ঘটে না তার সামনে।
কেননা আজকের সমাজে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ অনেক সময় রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হয়, ফলে তাদের ন্যায্য কণ্ঠ হারিয়ে যায় রাজনীতির ভিড়ে। অনেক সময় সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়।ফলে সাধারণ মানুষ, মন থেকে প্রতিবাদ করতে চাইলেও, দ্বিধায় পড়ে যায়।
একটি সমাজ তখনই এগোয়, যখন সাধারণ মানুষ ভয়হীনভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো — আজ সেই সাধারণ কণ্ঠস্বর প্রায়ই “রাজনৈতিক রঙে” রাঙিয়ে দেওয়া হয়।
ফল কী হয়?- মানুষের মূল দাবি হারিয়ে যায় রাজনীতির কাঁদা ছোড়াছুড়িতে।