ইন্টার কাস্ট ম্যারেজ বা আন্তঃবর্ণ বিবাহ – সুপ্রিয় রায় ও লিপিকা রায়

ভারতবর্ষসহ দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে জাতপাত একটি বহুদিনের গেঁড়ে বসা প্রথা। আমাদের চারপাশে আজও অনেক পরিবারে দেখা যায়, ছেলে বা মেয়ের বিয়ে ঠিক করার সময় প্রথম প্রশ্নই হয় — “ছেলেটা/মেয়েটা কোন জাতের?”। অথচ একজন মানুষের মূল পরিচয় তো তার মনুষ্যত্বে, তার চারিত্রিক গুণে, তার শিক্ষায় ও মননে!

ইন্টার কাস্ট ম্যারেজ (inter-caste marriage) বা আন্তঃবর্ণ বিবাহ সমাজে জাতপাতের ভেদাভেদ ভাঙার একটি কার্যকর মাধ্যম । ইন্টার কাস্ট ম্যারেজের মাধ্যমে সমাজে – 

যখন দুটি আলাদা জাত বা বর্ণের মানুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন তাদের পরিবার ও আশপাশের মানুষও বাধ্য হয় জাতপাতের গণ্ডির বাইরে ভাবতে।তাতে জাতপাতের বিভাজন দুর্বল হয় ।

  • এর ফলে নতুন প্রজন্ম আরও মুক্ত ও যুক্তিনির্ভর চিন্তাভাবনায় বড় হয়, তখন তারা মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখে এবং সমাজে  মানসিকতা বদলায়
  • ধীরে ধীরে পিতৃতান্ত্রিক ও অস্পৃশ্যতার মতো কুসংস্কার হ্রাস পায়।এতে সামাজিক সাম্য বাড়ে ।
  • শিক্ষিত এবং যুক্তিবাদী সমাজ গঠনের দিকে এক ধাপ এগোনো    হয়।এতে জাতপাতভিত্তিক বৈষম্য কমে

আজও বহু পরিবার, বিশেষত গ্রামীণ ও রক্ষণশীল মানসিকতার পরিবার, ইন্টার কাস্ট বিয়ে মেনে নিতে পারে না। ভয়, লোকলজ্জা, আত্মীয়দের কথা — এ সবই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই ভয় কাটিয়ে যে পরিবারগুলি সন্তানের পাশে দাঁড়ায়, তারাই ভবিষ্যতের মুক্ত সমাজের পথপ্রদর্শক।

বিবাহ একটি মানবিক সম্পর্ক। সেটি গড়ে ওঠে ভালোবাসা, বোঝাপড়া, এবং পারস্পরিক সম্মানের ওপর ভিত্তি করে — জাতের ওপর নয়। সমাজ যত বেশি ইন্টার কাস্ট ম্যারেজকে স্বীকৃতি দেবে, ততই জাতপাতের অন্ধকার কুয়ো থেকে আমরা আলোর দিকে এগোতে পারব।

তাই জাত নয়, মনুষ্যত্ব হোক আমাদের পরিচয়।ইন্টার কাস্ট ম্যারেজকে ভয় নয়, বরং উৎসাহ দিতে হবে। এটিই হবে সেই শুদ্ধ সামাজিক বিদ্রোহ, যা কুসংস্কারকে হারিয়ে দিয়ে যুক্তির জয় ঘটাবে।

একটা ইন্টার কাস্ট বিয়ে হয়তো সমাজ বদলায় না,কিন্তু সেটাই একটা ইট — যা গড়ে তোলে জাতপাতহীন ভবিষ্যতের ।

15 thoughts on “ইন্টার কাস্ট ম্যারেজ বা আন্তঃবর্ণ বিবাহ – সুপ্রিয় রায় ও লিপিকা রায়

  1. Aparna Delahiri

    Sociology তে আমরা পড়েছিলাম “Caste system is changing, not dying.” জাতপাতের রাজনীতি উঠে গেলে রাজনৈতিক নেতারা কি করে করে খাবেন?

    Like

  2. Ratnabali Chatterjee

    খুব সুন্দর এবং প্রাসঙ্গিক একটি বিষয়ের উপস্থাপনা।

    এই ভিন্ন জাতের মধ্যে বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপনের বিষয়ে মানুষ আগের থেকে কিছুটা উদার মনোভাবাপন্ন হয়েছে বলে মনে হয়।তবে এখনো কোন কোন রাজ্যে honour killing চালু আছে।

    Like

  3. Partha Pratim Dasgupta

    দু-এক প্রজন্ম আগেও সামাজিক প্রথায় সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের মত কাস্ট, শিক্ষা, রুচি, সংস্কৃতি এসব একটু নিজেদের সাথে মিল খুঁজে নিত যাতে পরে কোন অমিল গত কারণে সমস্যা না হয়। তবে বর্তমানে শিক্ষার প্রসারে নিজেরাই মনের মত সঙ্গী খুজেঁ নেয়। সেক্ষেত্রে এই জাত-পাতের সমস্যা এখন আর প্রায় নেই বললেই হয়।

    Like

  4. Pratap Chatterjee

    আপনার এই সুচিন্তিত মতামতের সঙ্গে একমত। এটা যেমন সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা পথ হয় তেমনি এই ধরনের বিবাহে next generationer বুদ্ধির উৎকর্ষতা বাড়ে এবং এটা প্রমাণিত।

    Like

Leave a comment