সম্পর্ক( আমাদের মতে ) – সুপ্রিয় রায় ও লিপিকা রায়

যদিও জানি আমাদের চিন্তাধারা আমাদের বেশীরভাগ প্রিয়জনদের সাথে মিলবে , তবুও এই সম্পর্কের অভিধানে আমাদের প্রিয়জনদের মতামত জানার জন্য এই লেখনী ।

আমরা মনে করি সম্পর্ক হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, অনুভূতি, আস্থা ও সংযোগের এক বিশেষ বন্ধন। এটি রক্তের সম্পর্ক (যেমন পরিবার), ভালোবাসার সম্পর্ক (যেমন বন্ধুত্ব বা দাম্পত্য), সামাজিক সম্পর্ক (যেমন সহকর্মী বা প্রতিবেশী), বা আধ্যাত্মিক সম্পর্ক (যেমন গুরুর সাথে শিষ্যের সম্পর্ক) হতে পারে।

সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিশ্বাস, সম্মান, ভালোবাসা, এবং সহমর্মিতার ভিত্তিতে। এটি যত্ন, সময় ও আন্তরিকতার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে হয় । যদি সম্পর্কের মধ্যে সৎ যোগাযোগ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া থাকে, তবেই সে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী ও সুন্দর হয়।

সম্পর্ক ভালো রাখতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা অবশ্যই দরকার।

  • সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মূল চাবিকাঠি হলো খোলামেলা কথা বলা।
  • ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে মন খুলে নিজের অনুভূতি ও মতামত প্রকাশ করা দরকার ।
  • শুধু কথা বলাই নয়, মনোযোগ দিয়ে অপরপক্ষের কথা শোনা উচিৎ ।
  • যে কোনো সম্পর্কে সম্মান অপরিহার্য।
  • ভিন্ন মতামত থাকলেও শ্রদ্ধার সঙ্গে কথা বলা উচিৎ ।
  • কাউকে ছোট করে কথা বলা বা অবজ্ঞা করা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • ব্যস্ততার মাঝেও প্রিয়জনদের জন্য সময় বের করা ।
  • ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করা , যেমন একসাথে খাওয়া, গল্প করা বা ঘুরতে যাওয়া।
  • মিথ্যা বলা, গোপনীয়তা রাখা বা প্রতারণা করা সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে।
  • বিশ্বাস অর্জন করতে সময় লাগে, কিন্তু একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে পাওয়া কঠিন।
  • মানুষ মাত্রই ভুল করে, তাই দোষ খোঁজার বদলে ক্ষমা করতে শেখা উচিৎ ।
  • অহংকার বাদ দিয়ে প্রয়োজনে আগে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া , তাতে সম্পর্ক আরও মজবুত হয় ।
  • নেতিবাচক মন্তব্য, সন্দেহ, অতিরিক্ত সমালোচনা—এসব সম্পর্কের ক্ষতি করে।
  • একে অপরকে অনুপ্রাণিত করা  এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা ।
  • এমন কিছু করা উচিৎ  যেমন একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, কোনো শখ চর্চা করা বা পুরনো স্মৃতিগুলো রোমন্থন করা।তবেই এইসব আনন্দদায়ক মুহূর্তগুলো সবসময় ভবিষ্যতের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে  ।

আবার সাবালক ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্ক হওয়া উচিত পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব্বপূর্ণ ভালোবাসা এবং বোঝাপড়ার উপর ভিত্তি করে। এই সম্পর্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:

  • বাবা-মা সন্তানের প্রতি স্নেহশীল হবে, কিন্তু তাদের স্বতন্ত্র মতামত ও স্বাধীনতাকে সম্মান করবে।
  • সন্তানেরাও বাবা-মাকে শ্রদ্ধা করবে এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার চেষ্টা করবে।
  • উভয় পক্ষের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিত, যাতে পরস্পরকে বুঝতে ও সমর্থন দিতে পারে।
  • বাবা-মা সদুউপদেশ দিতে পারেন, কিন্তু তা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
  • সাবালক সন্তানদের স্বাধীনতা দেওয়া দরকার, যাতে তারা নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে শেখে। তবে স্বাধীনতার পাশাপাশি দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতার শিক্ষা দিতে ভুললে চলবে না ।
  • যদি কোনো মতপার্থক্য হয়, তবে সেটা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা উচিত।
  • বাবা-মা ও সন্তান উভয়েরই উচিত পরস্পরের অনুভূতিকে সম্মান করা।
  • বাবা-মা যতটা সম্ভব সন্তানদের শিক্ষা ও ক্যারিয়ারে সহায়তা করবেন, কিন্তু তাদের আর্থিকভাবে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল করে রাখবেন না।
  • মানসিকভাবে সাহস দেওয়া ও প্রয়োজনীয় সময়ে পাশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

সংক্ষেপে বলা যায় , বাবা-মা ও সাবালক সন্তানদের সম্পর্ক হওয়া উচিত স্নেহময়, পরস্পরকে বোঝার, পরামর্শ দেওয়া ও নেওয়ার, এবং স্বাধীনতা ও দায়িত্বের ভারসাম্য বজায় রাখার একটি সম্পর্ক।

23 thoughts on “সম্পর্ক( আমাদের মতে ) – সুপ্রিয় রায় ও লিপিকা রায়

  1. Sudhir Bagchi

    খুব ভাল লাগল ভাই। খুবই উচ্চ স্তরের বিশ্লেষণ । সম্পর্ক সুন্দর রাখতে হলে অনেক সতর্ক থাকতে হয় । তোমরা দুজনে একদম গাইডের কাজ করেছ ।

    Like

  2. Ratnabali Chatterjee

    সম্পর্ক নিয়ে ভারি সুন্দর লাগল এই বিশ্লেষণ মূলক দৃষ্টিভঙ্গি। এত সুন্দর ভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা করা খুব বাস্তবোযগী।

    দুজনের ছবিও একদম লা জবাব।

    Like

  3. গীতশ্রী সিনহা

    অনেকদিন পর ফেসবুকের পোস্টে এলাম গো দাদা, পরপর খুব ঝামেলায় আছি, সে পরে বলবো তোমাদের।

    সম্পর্কের মাপকাঠির বিশ্লেষণ পেলাম পূঙ্খানুপুঙ্খ বণর্না হিসেবে —- একান্তভাবে সহমত পোষণ করলাম গো দাদা ! আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এই বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ !

    দাঁড়াও লিপির ওয়ালে একবার যাই !

    Like

  4. Partha Pratim Dasgupta
    সম্পর্ক সে রক্তের হোক বা নাহোক উভয়ের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর সর্বোপরি বিশ্বাস। এর কোনকিছুর অভাব হলেই সেতু ভেঙে পড়ে আর সম্পর্ক টেকে না। এই মূল ব্যাপারটা তুমি যেভাবে বিশ্লেষণ করে দেখালে সেটা সত্যিই শিক্ষামূলক। সম্পর্কের ওপর যেকোন প্রশ্নের উত্তর হিসেবে যেকোন পরীক্ষার্থী তোমার এই লেখাটাকে কাজে লাগাতে পারে।

    Like

  5. Tapas Sarkar

    সুন্দর ভাবে বলা হয়েছে ,এই গুলি মেনে চললে উভয়ের ক্ষেত্রে সুখী ও আনন্দে জীবন অতিবাহিত হওয়া উচিত 👌😄

    Like

Leave a comment