পুরী মানেই শুধু সমুদ্র নয়, জগন্নাথদেবের শহর, সুস্বাদু খাবার, বিচের আনন্দ, আর একগুচ্ছ অ্যাডভেঞ্চার! 14th February আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর দিনটাকে মাথায় রেখে আমরা দুই জন কপোত-কপোতি 12th February ভোর বেলা রওনা দিলাম বন্দেভারতে কলকাতা থেকে পুরীর উদ্দেশ্যে। দুপুর ২ টার সময় পুরী পৌঁছে একটা অটো নিয়ে সোজা চলে গেলাম মেরিন ড্রাইভে আমাদের হোটেলে চেক ইন করতে । সমুদ্রের পাশ দিয়ে যেতে যেতে উপলব্ধি করতে পারছিলাম সমুদ্রের গন্ধ আর সাথে সাথেই মনের মধ্যে ঢেউ খেলতে লাগলো । আরও ভাল লাগলো যখন হোটেলের রুমে পৌঁছে দেখলাম আমাদের জন্য সমুদ্রের দিকে মুখ করা ব্যালকনিসহ রুম দেওয়া হয়েছে । যেখানে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে । দেখলাম হোটেলের রেস্টুরেন্টটা বেশ ভাল , তাই দুপুরের আহারটা ওখানেই সেরে একটু রেস্ট নিয়েই চললাম রাস্তা পার করেই বিচে । সূর্যের আলোতে সাগরের ঢেউগুলো ঝলমল করছিল!দেখলাম প্রচুর মানুষ সমুদ্রের জলে স্নান করছে , আবার অনেককে দেখলাম বালিতে ছবি আঁকতে । নানা বয়সের মানুষের চীৎকারে সমুদ্র সৈকত গমগম করছিল । মনে হচ্ছিল সমুদ্রের সৈকত জুড়ে মেলা বসেছে । এর মধ্যেই আবার অনেকে উঠের পীঠে করে বালির ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছিল । মরুভুমি আর সাগর মনে হচ্ছিল পাশাপাশি অবস্থান করছে ।
হোটেলে ফিরে চা জলখাবার খেয়ে আবার চললাম বিচের ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখতে । সূর্যটা ধীরে ধীরে সমুদ্রে মিলিয়ে যাচ্ছিল, আর ঢেউগুলো যেন গুঞ্জন করে তাদের বিদায় জানাচ্ছিল। চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল ঢেউগুলো একদম সোনালি দেখাচ্ছিল।পরেরদিন ছিল পূর্ণিমা তাই চাঁদের আলোয় সমুদ্রকে অপূর্ব সুন্দর লাগছিল । দুজনে দুটো চেয়ার নিয়ে অনেকক্ষণ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে খুব ভাল লাগছিল ।
পরেরদিন ভোর পাঁচটায় সূর্যোদয় দেখতে চলে আসলাম বিচে । সমুদ্রের পাশ দিয়ে সোজা হাঁটতে খুব ভাল লাগছিল । তবে আকাশে একটু মেঘ থাকায় সূর্যোদয় দেখা হোল না । ব্রেকফাস্ট সেরে টোটো নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম পুরী পরিক্রমা করতে । বেশীরভাগ মানুষেরই পুরী ঘোরা , তাই আর বিশদে গেলাম না ।
সন্ধ্যার পর একটা সাইলেন্ট বিচের দিকে গেলাম যেখানে মানুষের ভিড় কম। শুধু সমুদ্রের গর্জন আর হালকা বাতাস বইছিল। হঠাৎ… আমরা শুনতে পেলাম এক অদ্ভুত আওয়াজ! যেন কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে! আমরা আশেপাশে তাকালাম, কিন্তু কিছু দেখতে পেলাম না!
লিপিকা ভয় পেয়ে বলল, “এটা কী?”
আমি হাসতে হাসতে বললাম – “ভয় পেয়েছ ? এটা পুরীর বিখ্যাত ‘সাগরের আত্মা’র আওয়াজ! লোকে বলে, গভীর রাতে সমুদ্রের কাছ থেকে ফিসফিসানি শোনা যায়!”
লিপিকা বেশ ভয় পেয়ে গেল । আমার হাত ধরে টানতে টানতে বলল – “তাড়াতাড়ি চল এখান থেকে” ।
আমি হাসতে হাসতে বললাম – “ আরে আমি মজা করছিলাম । ভয় পেওনা , এটা সাগরের ঢেউ আর বাতাসের মিলিত শব্দ। কোন সাগরের আত্মার আওয়াজ না । তবে পুরীতে আমাদের একটা নতুন করে রহস্যের গল্প তৈরি হোল !
পরেরদিন আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর দিন খুব ভোর থাকতে স্নান সেরে বেড়িয়ে পড়লাম বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরে । আমাদের পাণ্ডাকে নিয়ে আমরা দক্ষিণ দুয়ার দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করলাম । বিশাল প্রাঙ্গণ, ভক্তদের ভিড়, প্রসাদের মিষ্টি গন্ধ আর একদম সামনে থেকে জগন্নাথ দেবের দর্শন মনে প্রশান্তি এনে দিল।লিপিকা তো খুব খুশি । বিকালে পাণ্ডা হোটেলে প্রসাদ দিয়ে গেল । অনেকে বলে “জগন্নাথদেবের প্রসাদ না খেলে পুরী যাত্রা নাকি সম্পূর্ণ হয় না!”
পরেরদিন দুপুর 1.50PM আবার বন্দেভারতে কলকাতার পথে রওনা দিলাম। জানালার বাইরে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, পুরী আমাদের এক অদ্ভুত আনন্দ আর রহস্যের স্বাদ দিয়ে গেল!

পুরী, ওডিশার এক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। সোনালি বালুকাবেলা, নীল জলরাশি আর জগন্নাথদেবের মন্দিরের আকর্ষণে এই জায়গাটি প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত থাকে। কিন্তু এত মানুষের সমাগমের ফলে পুরী সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি ক্রমেই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। পুরী সমুদ্র সৈকত শুধু সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এটি বহু মানুষ ও প্রাণীর জীবনযাত্রার সাথেও জড়িত।
যদি সৈকত অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়, তবে পর্যটকরা আসতে নিরুৎসাহিত হবেন, যা স্থানীয় ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলবে।
তাই আমাদের সবার উচিত এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে রক্ষা করা, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই অপরূপ পরিবেশ উপভোগ করতে পারে।
সবার কাছে একটাই আবেদন – সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখুন, প্রকৃতিকে ভালোবাসুন।