মাত্র আট দিনে কলকাতা থেকে অমৃতসর , চণ্ডীগড় , মানালি , কুলু ও সিমলা

অমৃতসর

আমরা চারজন অর্থাৎ আমি , আমার স্ত্রী লিপিকা , আমার পিসতোতো     বোন মুনমুন ও ওর স্বামী তরুণ গত 04/10/2024 তারিখ ভোরবেলা কলকাতা থেকে আকাশপথে রওনা হয়ে অমৃতসর এসে পৌছালাম সকাল সাড়ে এগারো নাগাদ । হোটেলে বলা ছিল তাই গাড়ি এসে আমাদের এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে গেল । অমৃতসর, পাঞ্জাবের একটি ঐতিহাসিক শহর, যা তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত।হোটেলে স্নান , খাওয়া দাওয়া সেরে দুপুর তিনটের সময় রওনা দিলাম শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় 30 কিলোমিটার দূরে অমৃতসরের কাছে দেখার সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি, ওয়াঘা বর্ডার যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি সড়ক সীমান্ত । পথে পড়লো 1892 সালে প্রতিষ্ঠিত 1.2 km বিস্তৃত বিশাল এক রাজবাড়ির ন্যায় এক ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খালসা কলেজ । ব্রিটিশ, মুঘল এবং শিখ স্থপতির মিশ্রণে ভরা এক অপুরুপ স্থাপত্য ।সীমান্তে পৌঁছে ছেলেদের ও মেয়েদের আলাদা লাইনের মাধ্যমে এসে পৌছালাম এক বিশাল স্টেডিয়ামের মধ্যে । নিচ থেকে অনেক উচু অবধি সেমি সার্কেলের গ্যালারীতে আমরা এসে বসলাম । পাশেই রয়েছে বিশাল এক লোহার গেট যার ওপাশে দেখতে পাচ্ছিলাম পাকিস্থানের মিলিটারিরা ঘোরাফেরা করছে । আমাদের মত কিছু পাকিস্থানের পর্যটকও বসে ছিল ওপারের স্টেডিয়ামে । বিকাল 5.15 মিনিট নাগাদ শুরু হোল উভয় দেশের সৈন্যদের দ্বারা  বিটিং দ্য রিট্রিট এবং চেঞ্জ অফ গার্ড অনুষ্ঠান । 1959 সাল থেকে শুরু এই অনুষ্ঠানটি দর্শকদের জন্য একটি বর্ণাঢ্য ট্রিট কোন এন্ট্রি ফি ছাড়া ।ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল তাই কোথাও না দাড়িয়ে সোজা এসে পৌছালাম শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান তীর্থস্থান আলোকোজ্জ্বল স্বর্ণ মন্দির দেখবার জন্য । জুতো খুলে বিশাল চাতাল পেরিয়ে মাথা ঢেকে মন্দিরের গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখি সামনে এক অপূর্ব সরোবর , তার পিছনেই সোনার আস্তরণে মোড়ানো রাতের আলোয় ঝলমল করছে স্বরনমন্দির । রাতের আলোয় স্বরনমন্দির দেখে মন্দির সংলগ্ন বাজার ঘুরে ফিরে আসলাম হোটেলে।

পরেরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে হোটেল থেকে একটা টোটো নিয়ে চলে আসলাম স্বাধীনতা সংগ্রামের মর্মস্পর্শী কাহিনি আঁকা 6.5 একর বিস্তৃত জালিয়ানওয়ালাবাগে । 1919 সালে নিরস্ত্র ভারতীয় পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের উপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যে সবচেয়ে জঘন্য গণহত্যা করেছিল স্বাধীনতার ইতিহাসের সেই কালো দিনের সাক্ষ্য হিসাবে আজও দেখা যায় বাগানের দেয়ালের একটি অংশে বুলেটের চিহ্ন ।  প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে আলো এবং শব্দ শো হয়  ।  গরমে 7 PM থেকে আর শীতকালে 5 PM থেকে । কোন এন্ট্রি ফি নেই । তারপর ওখান থেকে একটু হেঁটে পৌঁছে গেলাম ভাল করে স্বর্ণমন্দির দেখার জন্য । অনেকক্ষণ লাইন দিয়ে মন্দিরে প্রবাশ করে দেখলাম মন্দিরের অভ্যন্তরীণ দেয়ালগুলি মূল্যবান পাথর, মীনাকারির কাজ এবং কাচের কাজ যা সবার কাছে আকর্ষণীয়। দেখলাম এখানে শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ, গুরু গ্রন্থ সাহিব, রাখা আছে। তীর্থস্থানের একটি প্রধান আকর্ষণ হল ল্যাঙ্গার যা একটি বিনামূল্যের নিরামিষ খাবার যা প্রত্যেক দর্শনার্থীর জন্য দেওয়া হয়। এই ধর্মীয় সাইটের বাধ্যতামূলক রীতি হিসাবে মন্দিরে প্রবেশ করার সময় বা ফটো তোলার সময় মাথা অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। এই মন্দির প্রতিদিন 24 ঘন্টা খোলা থাকে এবং  কোন এন্ট্রি ফি নেই ।অনেকক্ষণ মন্দির ও তার সংলগ্ন স্থানে কাটিয়ে হোটেলে ফিরে জিনিসপত্র নিয়ে স্টেশনে গিয়ে ইন্টারসিটি ট্রেন ধরে রাত্রি সাড়ে নটায় চণ্ডীগড় পৌছালাম ।

চণ্ডীগড়

গত 05/10/2024 তারিখ অমৃতসর থেকে বিকাল 5 টায়  ইন্টারসিটি ট্রেন ধরে বিখ্যাত ফরাসি স্থপতি লে করবুসিয়ার দ্বারা পরিকল্পনা করা চণ্ডীগড় শহরে পৌছালাম রাত্রি 9.30 pm । চণ্ডীগড়ের আক্ষরিক অর্থই হল দেবী চণ্ডীর গড় বা দুর্গ। হোটেলে পৌঁছে পরেরদিন ব্রেকফাস্ট সেরে প্রথমেই গেলাম সুখনা লেক দেখতে । শিবালিক পাহাড়ের পাদদেশে 3 বর্গ কিমি প্রসারিত চণ্ডীগড় শহরের একমাত্র 1958 সালে মনুষ্যসৃষ্ট এই হ্রদ শহরের প্রান । আমাদের রবীন্দ্র সরোবরের মত প্রচুর মানুষ এখানে সকালে ও বিকালে হাঁটতে আসে । এছাড়া এখানে আছে বোটিং করার সব  রকম সুবিধা । সুখনা লেক হল অনেক উৎসব উদযাপনের স্থান। অনেকক্ষণ সুখনা লেকে কাটিয়ে আমরা চললাম চণ্ডীগড়ের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ বিখ্যাত ভাস্কর্য বাগান – ‘রক গার্ডেন’ দেখতে । এটি একটি অনন্য স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য উদ্যান, যা পুরানো, পরিত্যক্ত এবং ভাঙাচোরা বস্তু দিয়ে তৈরি। রক গার্ডেনের সৃষ্টিকর্তা হলেন নেক চাঁদ, একজন সরকারি কর্মচারী, যিনি ১৯৫৭ সালে তাঁর অবসর সময়ের মধ্যে এই উদ্যান তৈরি করা শুরু করেন। মূলত তিনি ভাঙা সিমেন্ট,  সিরামিক, কাঁচের টুকরো, পরিত্যক্ত ইট, বাটি, মাটির পাত্র ইত্যাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন ভাস্কর্য এবং স্থাপত্য তৈরি করেছিলেন।

রক গার্ডেনের বিশেষত্ব হলো, এটি শিল্প এবং পরিবেশ সচেতনতার একটি মিশ্রণ, যেখানে নষ্ট বস্তু দিয়ে শিল্প তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রায় ৪০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এবং এখানে মানুষ, পশু, পাখির আকৃতির বিভিন্ন ভাস্কর্য দেখা যায়। রক গার্ডেনের বিভিন্ন করিডোর, ওয়াটারফল, সেতু, এবং খোলা জায়গা দর্শকদের বিশেষভাবে মুগ্ধ করে।টিকিত মুল্য ছিল 30 টাকা ।

আজও এই উদ্যান শিল্প ও পরিবেশ সচেতনতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।তারপর চণ্ডীগড় শহরকে প্রদক্ষিণ করে আমরা রওনা দিলাম মানালির উদ্দেশে ।

মানালি

গত 06/10/2024 আমরা 265 কিমি যাত্রা করে চণ্ডীগড় থেকে গাড়ি নিয়ে মানালি এসে পৌছালাম সাড়ে 6 ঘণ্টা পর । চণ্ডীগড় থেকে মানালি পর্যন্ত যাত্রাপথটি ছিল অত্যন্ত মনোরম এবং দারুণ আকর্ষণীয় ।পথে বিলাসপুরের কাছে সুন্দরনগরে দেখলাম অপূর্ব সুন্দর এক হ্রদ , মাণ্ডির পথে পান্ডোহ ড্যাম  আর বিয়াস বা বিপাশা নদীর তীর ধরে কুলু উপত্যকা যা মনের স্মৃতি কোঠায় সারা জীবন আঁকা থাকবেএই যাত্রা পথটি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অত্যন্ত সুন্দর এবং প্রতিটি মুহূর্ত মনে দাগ কেটে যায় । মানালি হল ভারতের হিমাচল প্রদেশের 6,726 ফুট( যেখানে দার্জিলিং 6700 ফুট) বা 2,050 মিটার উচ্চতার একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি মূলত পার্বত্য অঞ্চলের সৌন্দর্য, তুষারাবৃত পর্বত এবং শান্তিময় পরিবেশের জন্য পরিচিত। ।সন্ধ্যাবেলা মানালির হোটেলে পৌঁছেই তাড়াতাড়ি জিনিসপত্র রেখে শীতের পোশাক পড়ে কাছেই হেঁটে চললাম মল রোড ঘুরতে । মানালির মল রোড হল শহরের প্রাণকেন্দ্র এবং পর্যটকদের জন্য অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এটি একটি জমজমাট এবং প্রাণবন্ত এলাকা যেখানে বিভিন্ন দোকান, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, হস্তশিল্পের বাজার এবং হোটেল রয়েছে। সন্ধ্যার সময় মল রোডে ঘুরে বেড়ানো স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনের স্বাদ নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে উপভোগ্য।

পরেরদিন ব্রেকফাস্ট সেরে 10 টা নাগাদ বেড়িয়ে পড়লাম মানালির local sight seeing করতে । একে একে দেখলাম ১৫৫৩ সালে মহাভারতের চরিত্র ভীমের স্ত্রী হাদিম্বাকে উৎসর্গ করে নির্মিত ঘন দেবদারু বনের মাঝে অবস্থিত  হাদিম্বা মন্দির , বশিষ্ঠ গ্রামে অবস্থিত বশিষ্ঠ মন্দির এবং গরম জলের ঝর্ণা, THE CLUB HOUSE , TIBETAN MONASTERY, মানালির কাছে একটি ঐতিহাসিক দুর্গ নাগগর কাসল যা একসময় কুল্লু রাজাদের আবাস ছিল এবং বর্তমানে এটি একটি হেরিটেজ হোটেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে আর বিয়াস নদীর ধারে বিশাল এক বন যার নাম বন বিহার । ইলেকট্রিক চালিত গাড়িতে পুরো বন বিহার ঘুরে দেখলাম । শুনলাম অনেক হিন্দি সিনেমার শুটিং হয়েছে এই বন বিহারে । সব দেখে ফিরে আসতে দুপুর হয়ে গেল । খাওয়া দাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম সেরে আবার বেড়িয়ে পড়লাম বিকালে মল রোডে এই অঞ্চলের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি অনুভব করতে। সকাল 9:00 টা থেকে 9:00 টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মল রোড ।  

পরেরদিন মঙ্গলবার সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে পড়লাম মানালি থেকে প্রায় 51 কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 3,978 মিটারের বা 13051 ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হিমালয়ের পূর্ব পীর পাঞ্জাল রেঞ্জের একটি উচ্চ বিখ্যাত পর্বত গিরিপথ রোহটাং পাসের উদ্দেশ্যে । এটি হিমাচল প্রদেশের লাহৌল এবং স্পিতি উপত্যকার সাথে কুল্লু উপত্যকাকে সংযুক্ত করেছে। রোহটাং পাস যাওয়ার পথে দেখলাম বিয়াস নদীর জন্মস্থান বিয়াস কুন্ড । রোহটাং পাস পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়, কারণ এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণী পর্যটকদের দারুন ভাবে আকর্ষণ করে। রোহটাং পাসটি তার চ্যালেঞ্জিং রাস্তা এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্যও পরিচিত। হিমবাহ, ভূমিধস এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এখানে সাধারণ সমস্যা। পাসটি বিশেষ করে মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে খোলা থাকে এবং বাকি সময় প্রচণ্ড শীত ও তুষারপাতের কারণে বন্ধ থাকে। রোহটাং পাসে লেকের ধারে প্রচণ্ড হাওয়ার মধ্যেও বসে থাকতে দারুন লাগছিল । ঐ অত ওপরে একজন লোক ফ্লাক্সে করে কফি বিক্রি করছিল । অত ঠাণ্ডার মধ্যে এক কাপ কফি মনে হচ্ছিল অমৃত পান করছি । শুনেছি রোহটাং পাসে অনেকের শ্বাস কষ্ট হয় । যেহেতু আমাদের কোন রকম অসুবিধা হয়নি তাই মনে হচ্ছিল আমরা তেমন বুড়ো হইনি

তারপর গেলাম চন্দ্রভাগা নদীর পাশ দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম হাইওয়ে টানেলগুলোর মধ্যে একটি ২০২০ সালে তৈরি অটল টানেলে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯.০২ কিলোমিটার । এটি হিমালয়ের পীর পাঞ্জাল পর্বতশ্রেণীর নিচ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি মানালি থেকে লাহুল-স্পিতি উপত্যকা পর্যন্ত সারাবছর যাতায়াতের সুবিধা করে দিয়েছে । শীতকালে যখন রোহটাং পাস প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে বন্ধ থাকে, তখনও এই টানেলটি চালু থাকে, যা সৈন্য ও সরঞ্জাম পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মানালি থেকে লেহ-লাদাখের দিকে যাত্রার সময়কে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা কমিয়ে দিয়েছে ।

অটল টানেল দেখে শিশু গ্রাম ঘুরে পৌছালাম মানালি থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হিমাচল প্রদেশের একটি সুন্দর উপত্যকা সোলাং ভ্যালিতে  যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অ্যাডভেঞ্চার কার্যকলাপের জন্য বিখ্যাত। সোলাং ভ্যালি শীতকাল এবং গ্রীষ্মকাল উভয় ঋতুতেই আকর্ষণীয়। শীতকালে পুরো উপত্যকা তুষারে ঢাকা থাকে এবং এই সময় স্কিইং, স্নোবোর্ডিং, আইস স্কেটিং-এর মতো তুষার-সম্পর্কিত খেলা ও কার্যকলাপ খুব জনপ্রিয়। আর গ্রীষ্মকালে প্যারাগ্লাইডিং, জিপলাইনিং, মাউন্টেন বাইকিং, হাইকিং, জোরবিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার কার্যকলাপ চালু হয়। সোলাং ভ্যালি তার বর্ণময় প্রাকৃতিক দৃশ্য, খোলামেলা পরিবেশ, এবং অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জন্য ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।

কুলু ও মনিকরণ

পরেরদিন অর্থাৎ 09/10/2024 সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম কুলু উপত্যকায় বিয়াস নদীর ধারে । রাস্তায় ব্রেকফাস্ট সেরে 43 কিমি দূরে সোজা গিয়ে পৌছালাম সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১,৭৬০ মিটার বা 5774 ফুট উচ্চতায় পার্বতী নদীর উপত্যকায় অবস্থিত মনিকরণে । ঐতিহাসিক এই তীর্থস্থানে একই সঙ্গে অবস্থান করছে প্রাচীন গুরুদ্বারা ও শিবমন্দির। রয়েছে উষ্ণ প্রস্রবণ , অনেকের বিশ্বাস মনিকরণ এর এই উষ্ণ প্রস্রবণ- এ স্নান করলে শরীরের কোথাও কোনো ব্যথা বেদনা থাকলে সেটারও উপশম হয়।পার্বতী নদীর জল এখানে ফুটন্ত। তারপর ওখান থেকে 214 কিমি দূরে পাহাড়ি রাস্তা ধরে মাণ্ডি হয়ে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২২৭৬ মিটার বা 7467ফুট উচ্চতায় উত্তর-পশ্চিম হিমালয় পর্বতমালার সাতটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত সিমলা পৌছালাম রাত সাড়ে 10 টা নাগাদ ।

সিমলা

গতকাল রাত্রে মানালি থেকে সিমলা পৌঁছে পরেরদিন 10/10/2024 তারিখ অর্থাৎ সপ্তমীর দিন সকালবেলা সোজা চলে গেলাম কাছেই বান্টনি পাহাড়ে 1845 সালে নির্মিত সিমলার কালীবাড়িতে দুর্গাপূজার স্বাদ গ্রহণ করতে । এই কালীবাড়ি শ্যামলা দেবীর প্রতি উৎসর্গীকৃত এবং তার নামানুসারে ‘শিমলা’নামটিএসেছে। সিমলার বাঙালিদের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে সপ্তমী পূজার অঞ্জলি শেষ হতেই আমরা বেড়িয়ে পড়লাম একটু হেঁটে সিমলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ মল রোডে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের মিশ্রণ দেখতে ।একটু হেটেই পৌঁছে গেলাম দ্য রিজ যা সিমলার কেন্দ্রীয় খোলা স্থান যেখান থেকে আমরা হিমালয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করলাম । বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসব এখানে অনুষ্ঠিত হয়, এবং এটি শহরের অন্যতম প্রিয় সমাবেশ স্থান।তারপর সিমলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ৮,০৫৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত জাক্কু মন্দির দর্শন করলাম , মল রোড থেকে জাক্কু মন্দিরের হনুমানজির বিশাল মূর্তি দেখা যায় ।মল রোডের ওপরের দেখলাম ১৮৫৭ সালে তৈরি ক্রাইস্ট চার্চ , নব্য-গথিক স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি এবং সিমলার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসের অন্যতম নিদর্শন। একে একে দেখলাম ভাইসারেগাল লজ , গেইটি থিয়েটার ও সারি দিয়ে অসংখ্য দোকান ও ক্যাফে । এটি একটি সুন্দর হেঁটে ঘোরার জায়গা যেখানে থেকে  সিমলার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্য দেখতে পাওয়া যায় ।ফিরে আসলাম দুপুরে হোটেলে ডিয়ার ট্রাভেলসের সাথে যোগ দিতে পরবর্তী কিন্নর ভ্রমনের জন্য । ডিয়ার ট্রাভেলসের সাথে আগত আরও অনেক পর্যটকদের সঙ্গে বিকালে আবার গেলাম আলোকোজ্জ্বল  মল রোড দেখতে ও সিমলা কালীবাড়ির দুর্গা মণ্ডবে সপ্তমীর রাতে কিছুটা সময় কাটাতে ।সন্ধ্যাবেলা মল রোডে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে খুব ভাল লাগছিল । পরেরদিন সকালে সিমলা থেকে ১৩ কিমি দূরে চলে গেছিলাম ফাগু , কুফরি ও গ্রিন ভ্যালী দেখতে । তারপর দুপুর দুপুর ফিরে আসলাম সিমলায় । খাওয়া দাওয়া সেরে জিনিসপত্র নিয়ে রওনা হলাম কালকা , কালকা মেল ধরার জন্য ।

Leave a comment