চিটকুল

13/10/2024 তারিখ দুপুর বেলা সাংলা থেকে ডিয়ার ট্র্যাভেলসের সাথে আমরা সদলবলে এসে পৌছালাম 3,450 মিটার বা 11318 ফুট উচ্চতায় হিমাচল প্রদেশের কিন্নর জেলার ইন্দো-তিব্বত সীমান্তের কাছে চিটকুলে যা সাঙ্গলা ভ্যালির শেষ বসতিপূর্ণ গ্রাম। সাংলা থেকে চিটকুল ভ্রমণ হলো হিমাচল প্রদেশের একটি অত্যন্ত চমৎকার অভিজ্ঞতা। কখনও পাহাড়ের ছাদের তলা দিয়ে , আবার কখনও বিপদসংকুল সরু রাস্তা দিয়ে এই যাত্রা সারা জীবন মনে থাকবে । এটি ভারতের শেষ গ্রাম হিসেবে পরিচিত যা তিব্বত সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত। হোটেলে পৌঁছেই দুপুরের আহার সেরে বেড়িয়ে পড়লাম খুব কাছেই আদি বাসপা নদীর শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্যেকে চাক্ষুষ করতে ।চারিদিকে হিমালয়ের অপূর্ব দৃশ্যের মাঝে অনেক নীচে গিয়ে নদীর পাশে বসে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা উপভোগ করে এক দারুন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম । এই অঞ্চলে ভারী তুষারপাত হয়, যার ফলে শীতকালে এটি বন্ধ থাকে।
কল্পা

পরেরদিন 14/10/2024তারিখ তাড়াতাড়ি দুপুরের আহার সেরে 60কিমি দূরে সাংলা হয়ে অগুনতি আপেল বাগানকে দুপাশে রেখে সুতলজ বা শতদ্রু নদী উপত্যকার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 2759 মিটার বা 9051 ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কল্পাতে এসে পৌছালাম । চিটকুল থেকে কল্পা যাওয়ার যাত্রাপথ একটি সুন্দর এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। পাহাড়ি পথে, নদীর ধারে, এবং ছোট ছোট গ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা কল্পা এসে পৌছালাম । আপেল বাগানের মধ্য দিয়ে হোটেলে ঢুকতেই সামনের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখি কিন্নর কৈলাশ পর্বতশ্রেণীর অসাধারণ দৃশ্য। গোধূলি আলোয় পাহাড়ের চুড়াগুলো মনে হচ্ছিল জ্বলন্ত । তিনটে চুড়া Roldang (5499 meter) , Jarkanden (6473 meter) এবং Kinnaur Kailash ( 6050 meter) পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল ।
পরেরদিন ভোর থাকতেই পাহাড়ের দিকে ভাল করে তাকাতেই দেখি পাহাড়ের মাথায় কিন্নর কৈলাশ পর্বতশ্রেণীর দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের সাথে একটি বিশেষ শিলা দেখা যাচ্ছে , যাকে স্থানীয়রা শিবলিঙ্গ হিসেবে পূজা করেন। ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে পড়লাম কাছেই আপেল বাগান ও তার factory দেখতে । কোন গাছ ভরে আছে লাল আপেলে আবার কোন গাছে ভরে আছে সোনালী আপেলে ।কল্পা থেকে 8 কিমি দূরে রোগী গ্রাম যাওয়ার পথে পড়লো সুইসাইড পয়েন্ট । একদিকে পাহাড় আর আরেক পাশে খাঁড়াভাবে অনেকটা নীচে নেমে গেছে খাদ । হয়ত এখানে কেউ সুইসাইড করেছিল তাই এই জায়গাটার নাম হয়েছে সুইসাইড পয়েন্ট । রোগী গ্রাম ঘুরে আমরা গাড়ি করে গেলাম বৌদ্ধ ধর্মের 100 বছরের পুরানো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরকল্পা মনাস্টারি এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিন্তপর্ণি মন্দির দেখতে । এখানে বৌদ্ধ মঠ এবং প্রাচীন হিন্দু মন্দির পাশাপাশি অবস্থান করছে, যা কিন্নর অঞ্চলের ধর্মীয় সহাবস্থানের প্রমাণ। অক্টোবর মাসে কল্পার প্রকৃতি সাধারণত খুবই সুন্দর থাকে । চারপাশে তুষারাবৃত পাহাড়, সবুজ বন,নীল আকাশ আর গাছে আপেল দেখার সুযোগ পাওয়া যায় । এই সময় হিমালয়ের তুষারমণ্ডিত শৃঙ্গগুলি খুব ভালোভাবে দেখা যায়।
রামপুর

পরেরদিন 16/10/2024 কল্পা থেকে 96 কিমি দূরে সতলেজের বাম তীরে 1,005 মিটারে বা 3297 ফুট উচ্চতায় অবস্থিত বুশহারের শীতকালীন রাজধানী হিসেবে পরিচিত রামপুরে এসে পৌছালাম বিকালে । রামপুর মধ্য এশিয়া এবং তিব্বতের সাথে ভারতীয় বাজারে যোগদানকারী প্রধান বাণিজ্য রুটগুলির সাথে ভালভাবে সংযুক্ত হওয়ায়, এই রামপুর বাণিজ্যিক কার্যকলাপে ব্যস্ত থাকে, বিশেষ করে নভেম্বর মাসে লাভী মেলার সময়।পরেরদিন সকালে গাড়ি করে সোজা চলে গেলাম কালকা, ট্রেন ধরতে । আমাদের কিন্নর ভ্রমণ শেষ হোল এবার বাড়ি ফেরার পালা ।