জীবনটা একটি যাত্রা, পর্যটন তার সেরা সঙ্গী  – সুপ্রিয় রায়

আজ ২৭ শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস । এই কিছুদিন আগে The World Economic Forum (WEF) ২০২৪ সালের Travel and Tourism Development Index (TTDI) প্রকাশিত করলো । তাতে দেখতে পেলাম ১১৯ টা দেশের মধ্যে আমাদের দেশের স্থান ৩৯ নম্বরে । যে দেশে এক বছরে সবচেয়ে বেশি বিদেশী পর্যটক গেছে তার স্থান যদি এক ধরা হয় তাহলে বিশ্ব পর্যটন সংস্থার হিসাবে আমাদের দেশের  স্থান এই বছরে ৩৯  নম্বরে । প্রথম ১০ টি দেশ হোল যথাক্রমে আমেরিকা , স্পেন,জাপান , ফ্রান্স , অস্ট্রেলিয়া , জার্মানি , যুক্তরাজ্য , চীন , ইতালি, সুইজারল্যান্ড ।অথচ আমাদের দেশে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মত সব আছে তবুও আমরা পিছিয়ে আছি অনেক ছোট ছোট দেশ থেকেও । পর্যটন বলতে আমরা বুঝি যে এমন একটা আস্থায়ী ভ্রমণ যেটা স্বল্প সময়ের জন্য হয় । আর যারা এরকম ভ্রমণ করে তাদের পর্যটক বলা হয় ।আবার  প্রত্যেক পর্যটকের ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী পর্যটকদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যেমন: অবকাশ পর্যটক (Leisure Tourist) , ব্যবসায়িক পর্যটক (Business Tourist),  সাংস্কৃতিক পর্যটক (Cultural Tourist) , প্রকৃতি পর্যটক (Nature Tourist) , ধর্মীয় পর্যটক (Religious Tourist) , সাহসিক পর্যটক (Adventure Tourist) , স্বাস্থ্য পর্যটক (Health Tourist) , স্পোর্টস পর্যটক (Sports Tourist)

অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই যে পর্যটন শিল্প একটি বহুমুখী শিল্প যা একটি দেশের অর্থনীতিকে বহুগুণে সমৃদ্ধ করতে পারে এবং জাতীয় উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। যেমন –

  • পর্যটকরা যেসব সেবা গ্রহণ করেন, যেমন হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন, এবং পর্যটনস্থল, সেগুলো থেকে রাজস্ব আদায় হয়।
  • পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, যেমন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মী, পর্যটন গাইড, পরিবহন কর্মী, এবং স্থানীয় শিল্পীদের জন্য কাজের সুযোগ।
  • পর্যটকদের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার ঘটে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংযোগ তৈরি করে।
  • এতে সড়ক, যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অন্যান্য সুবিধার উন্নয়ন হয়, যা স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।
  • অনেক পর্যটন কেন্দ্র এবং সংরক্ষিত এলাকা পর্যটকদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, যা পরিবেশ রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সাহায্য করে।
  • শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি,স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের একটা বড় ভুমিকা থাকে  ।
  • এটি দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সুতরাং এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে , যে স্থানের পর্যটন যত বাড়বে অর্থাৎ যত বেশী পর্যটক যে জায়গায় যাবে সেখানকার জনগনের জীবনমান ও সামাজিক উন্নয়ন তত বাড়বে ।তাই আসুন আমরা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়াও পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য সাধারণ মানুষ হিসাবে কিছু করি ।

  • পর্যটকদের এমন আতিথেয়তা দিই যাতে তারা অন্যদের কাছে জায়গাটির ভালো সুনাম ছড়িয়ে দেয়।
  • যেহেতু সব পর্যটকরা পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর জায়গা বেশি পছন্দ করেন।তাই নিজের এলাকা পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় রাখি ।
  • যাতে পর্যটকরা স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং উৎসবে আকৃষ্ট হয়  তার জন্য সঠিক প্রচার করি ।
  • নিজের জায়গার পর্যটন আকর্ষণগুলো সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যম, ব্লগ, এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে এমনভাবে তথ্য প্রচার করি যাতে বেশি মানুষ আমাদের জায়গাটি সম্পর্কে জানতে পারে ।
  • স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতির লক্ষে  স্থানীয় পণ্য এবং হস্তশিল্প পর্যটকদের কাছে বিক্রি করি ।
  • সর্বোপরি পর্যটকরা যাতে প্রতারণার শিকার না হন সেটা নিশ্চিত করি ।   

তাই আসুন আমরা মনে প্রানে বিশ্বাস করি – জীবনটা একটি যাত্রা, পর্যটন তার সেরা সঙ্গী  আর ভ্রমণ নিজের মধ্যে একটি বিনিয়োগ। ভ্রমণ শুধু স্থান দেখা নয়, বরং নতুন অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি, মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া, আর স্মৃতির ঝুলিতে নতুন কিছু যোগ করা। ভ্রমণ আমাদের নতুনভাবে বাঁচতে শেখায়, নতুনভাবে দেখতে শেখায়, আর নতুনভাবে চিন্তা করতে শেখায়। সুতরাং চলো , বেড়িয়ে পড়ি দুয়ার থেকে , তাকিয়ে দেখি  জগৎটাকে।

Leave a comment