আমাদের চোখে ছোট মাংওয়া/লামাহাটা/ তাকদা / তিনচুলে

গত ২৫/০৫/২০২৪ তারিখ আমরা ৩০ জন পর্যটক ডিয়ার ট্রাভেলস এর পরিচালনায় নিউ মাল জংশন থেকে গাড়িতে করে করনেশন ব্রিজ অতিক্রম করে ডান দিকে বেঁকে তিস্তা বাজার থেকে আরও দু ঘণ্টা জার্নি করে এসে পৌছালাম এক একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে অবস্থিত ছোট মাংওয়ার ‘দার্জিলিং ব্লসাম ইকোট্যুরিসম কমপ্লেক্স’এ । ছোট মাংওয়া হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলায় অবস্থিত দূষণ-কোলাহল-ব্যস্ততাহীন মুক্ত একটি মনোমুগ্ধকর হিল স্টেশন। প্রায় 1,500 মিটার (4,920 ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত, এই গ্রামটি রাজকীয় হিমালয় পর্বতমালা দ্বারা সজ্জিত । এটি প্রকৃতি প্রেমীদের , অ্যাডভেঞ্চার অনুসন্ধানকারীদের এবং যে সকল পর্যটক নির্জনতা পছন্দ করে তাদের সবার জন্য এই স্থানটি জনপ্রিয় হিসাবে গন্য হতে পারে । ছোট মাংওয়া তার মনোরম ল্যান্ডস্কেপের জন্য বিখ্যাত, যা সোপানযুক্ত চা বাগান, কমলালেবুর বাগান এবং ঘন বনে সজ্জিত। কাঞ্চনজঙ্ঘার সুউচ্চ চূড়া সহ তুষারাবৃত হিমালয়ের মনোরম দৃশ্য এই নির্মল গ্রামের মুগ্ধতা বাড়ায়।এই হোমস্টেটির অবস্থান একটি গিরিশখরের ওপর, যার ফলে দুধারের প্রকৃতি চোখের সামনে উন্মুক্ত এবং দু পাশের পর্বতমালা নিজেদের রূপরাজি নিয়ে বিদ্যমান। একদিকে নামচি ও কাঞ্চনজঙ্ঘা আর অন্য দিকে দূরে পাহাড়ের গায়ে ডেলো ও কালিম্পং যেন এক স্বপ্নরাজ্য।

প্রথমদিন আমাদের পৌছাতে একটু দেরী হয়ে গেছিল এবং আকাশ মেঘলা থাকাতে পাহাড়ের সৌন্দর্যকে উপলব্দি করতে পারছিলাম না । পরেরদিন সকাল সকাল আমরা রওনা হলাম ওখান থেকে দেড় ঘণ্টার পথ শৈলরানী দার্জিলিঙ একবার ঘুরে দেখবার জন্য । অসম্ভব জ্যামের জন্য আমাদের পৌছাতে লাগলো চার ঘণ্টা । দার্জিলিঙের ম্যালে পৌঁছে মনটা খারাপ হয়ে গেল । প্রচণ্ড ভিড় , পা রাখার জায়গা নেই । ম্যালে বিশাল এক স্টেজ করে লোকাল অনুষ্ঠান হচ্ছে আর চারিদিকে রয়েছে টুরিস্টদের ভিড় ।কাঞ্চনজঙ্ঘাও বুঝি এই ভিড় দেখে বিরক্ত হয়ে দরজা , জানলা বন্ধ করে ঘরে বসে আছে ।

পরেরদিন আবার সকাল সকাল বেড়িয়ে প্রথমে গেলাম ছোট মাংওয়া থেকে এক ঘণ্টার দুরত্বে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 4000 হাজার ফুট উপরে দার্জিলিং জেলার ছবি আঁকা আরেকটি পাহাড়ি গ্রাম তাকদা বা তুকদা , যার লেপচা ভাষার অর্থ মেঘে ঢাকা বা কুয়াশায় ঘেরা ।মিশকালো আঁকাবাঁকা পিচরাস্তার ধারে পাহাড়ের ধাপে ধাপে চা বাগান। আর সেই চা বাগানের মাঝে পাইন আর সিডারের বন। এই জায়গা এখন বাঙালিদের কাছে অফবিট হলেও, ব্রিটিশদের কাছে ছিল জনপ্রিয়। ব্রিটিশরা মূলত এই জায়গাকে ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে গড়ে তুলেছিল। তাই তো এখানে এখনও রয়েছে ব্রিটিশদের তৈরি করা তুকদা ক্যান্টনমেন্ট হেরিটেজ বাংলো। তাকদার সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা হল অর্কিড হাউস। এখানেই সন্ধান মেলে উপমহাদেশের অন্যতম সেরা সেরা অর্কিডের।তাই প্রথমেই আমরা চলে গেলাম অর্কিড গার্ডেন দেখতে । টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে আমরা ঘুরে বেড়াতে লাগলাম । তারপর ওখান থেকে 14 কিমি দূরে 5700 ফুট উচ্চতায় পৌছালাম লামাহাটা যেখানে ভারতীয় সরকার তিব্বতি লামাদের বসবাস করার জন্য এই জায়গাটি নির্বাচন করেছিলেন । লামাহাটা গ্রামটির মূল আকর্ষণ হলো এখানকার 2012 সালে নির্মিত লামাহাটা পার্ক। পাইন ও ধুপি গাছে ঘেরা এই পার্কটির সবুজ প্রকৃতির মাঝে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায় । মাঝে মাঝেই মেঘ এসে তৈরি করছে অদ্ভুদ এক মায়াজাল ।

আমাদের হাতে সময় কম তাই বেড়িয়ে পড়লাম আল্পাইন বনের সবুজ উপত্যকায় বিস্তৃত তিনচুলি বা তিনচুলা পাহাড়ের উদ্দেশ্যে ।পথে দেখলাম লাভারস পয়েন্ট যেখানে তিস্তা আর রঙ্গীত নদীর মিলন হয়েছে এবং সেই জায়গাটির নাম ত্রিবেণী। তিনচুলিতে দেখলাম অপূর্ব সুন্দর চা বাগান যা গ্রামটির সৌন্দর্য অনেকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে ।অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে ফিরে আসলাম ছোট মাংওয়াতে ।

যেহেতু আগের দিন রাত্রে বৃষ্টি হয়েছে তাই পরেরদিন অর্থাৎ 28/05/2024 তারিখ ঘুম থেকে উঠতেই চোখের সামনে দেখি তুষারশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা আর তার বেশ কিছুটা নীচে নামচি পাহাড়ের মাথায় চারধামের শিব মূর্তি জ্বলজ্বল করছে । আমাদের দলের সবার কাছে খবর পৌঁছে যেতেই একসাথে অনেকগুলো ক্যামেরা ঝলসে উঠল । এই সুন্দর স্মৃতিকে সবাই চাইল ধরে রাখতে । গরম পেয়ালার চা তে চুমুক দিতে দিতে কাঞ্চনজঙ্ঘার এই অপুরুপ দৃশ্য আমাদের সারা জীবন মনে থাকবে ।

খাওয়া দাওয়া সেরে দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ রওনা হয়ে বড় মাংওয়ার কমলা বাগান দেখে বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ ফিরে আসলাম নিউ মাল জংশনে । তবে বাগানে কমলা পেতে চাইলে যেতে হবে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝে।

তারপর আমরা দুজন শিলিগুড়ি ফিরে আসলাম Vista dome trainএ করে আর বাকি দলের সবাই কাঞ্চনকন্যা ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় রইল ।ভাল ভাল সুস্বাদু আহার সহযোগে অনেক প্রানভরা আনন্দের মধ্যে শেষ হোল আমাদের ছোট মাংওয়া ভ্রমণ ।

Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos

Leave a comment