আমাদের চোখে অহলধারা , সিটং ও মংপু

গতকাল অর্থাৎ ২১/১১/২০২৩ সকাল সাড়ে সাতটায় আমাদের শিলিগুড়ি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লাম পাহাড়ের তিনটি গ্রাম অহলধারা , সিটং আর মংপুর সৌন্দর্যের স্বাদ গ্রহন করতে । শিলিগুড়ির সেবক রোড ধরে বৈকুণ্ঠপুর অভয়ারণ্যের পাশ দিয়ে করনেশন ব্রিজকে ডানদিকে রেখে কালিযোরা টুরিস্ট লজ ছাড়িয়ে বাঁদিকে যে রাস্তাটা ওপর দিকে উঠে গেছে সেটা দিয়ে গিয়ে পৌছালাম শিলিগুড়ি থেকে ৪০ কিমি দূরে ৪২৭০ ফুট উচ্চতায় লাটপাঞ্চারে ।শুনেছি এই লাটপাঞ্চার পক্ষীপ্রেমিদের কাছে স্বর্গ কারণ এখানে নাকি ২৪০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে । লাটপাঞ্চারে একটা ১৫০ বছরের পুরানো বৌদ্ধ মনাস্ট্রি দেখে আমরা পৌছালাম ওখান থেকে ৫ কিমি দূরে Ahaldara View Point ।

অহলধারা ভিউ পয়েন্ট – এটি সেল্পু হীলে অবস্থিত একটি পাহাড়ি চুড়া ।পাহাড়ের মাথায় দাড়িয়ে পুরো ৩৬০ ডিগ্রিতে দেখতে পাচ্ছিলাম দিগন্ত বিস্তৃত ঢেউ খেলানো পাহাড় আর দূরে সমতলে বয়ে চলা তিস্তা নদীর অপরুপ দৃশ্য। আকাশে মেঘ থাকায় সুন্দরী কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের একটু দেখা দিয়ে মেঘের আড়ালে চলে গেল । নিচে সবুজ চা বাগান, ওপরে নীল আকাশ আর দিগন্তব্যাপী পাহাড়ের অনেকটা জায়গা জুড়ে দাড়িয়ে আছে তুষারশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা – এই রুপ দেখতেই তো আমাদের মতো পর্যটকরা ছুটে আসে দূর দূরান্ত থেকে ।এরপর চললাম ওখান থেকে ৩১ কিমি দূরে সিটং ।

সিটং – ৪০০০ ফুট উচ্চতার রিয়াং নদীর ধারে একটি শান্ত পাহাড়ি লেপচা গ্রাম যেখানে প্রতিটা বাড়ির বাগানে দেখা যায় কমলালেবুর চাষ । দার্জিলিং-এর বিখ্যাত কমলালেবুর সিংহভাগই উৎপন্ন হয় এই সিটং-এ।আমরা অনেকক্ষণ কাটালাম কমলালেবুর বাগানের মধ্যে । এখন লেবুগুলি কাঁচাই আছে । ডিসেম্বরের শেষ দিকে তখন খাওয়া যাবে । যেহেতু এই গ্রামটি চারিদিকে খোলা তাই এখান থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা খুব ভাল দেখা যায় । মেঘ থাকাতে আমাদের দেখা হল না। যদিও আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা অনেকবার অনেক জায়গা থেকে দেখেছি তবুও না দেখার একটু দুঃখ তো থেকেই গেল ।তারপর রিয়াং নদীর ওপর যোগীঘাট পেরিয়ে আরও ৩১ কিমি দূরে এসে পৌছালাম ৩৭০০ ফুট উচ্চতার মংপুতে ।

মংপু – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত স্থান এই মংপু। রবীন্দ্রনাথ প্রথম আসেন এই সিনকোনা কারখানার কোয়াটারে ২১ মে ১৯৩৮ সালে । চার বার তিনি এসেছিলেন রবীন্দ্র স্নেহধন্যা লেখিকা মৈত্রেয়ীদেবীর স্বামীর কোয়াটারে । শেষবার এসেছিলেন ১৯৪০ সালের ২১ শে এপ্রিল । এখানে এই মনোরম প্রকৃতির মাঝে তিনি সৃষ্টি করেছেন অনেক রচনা । তার মধ্যে উল্লেকযোগ্য ‘জন্মদিনে’ , ‘নবজাতক’, ‘সানাই’ ইত্যাদি । পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তত্বাবধনে এখন এই বাড়ির নাম রবীন্দ্রভবন । খুব সুন্দর ভাবে সাজান গোছান অপূর্ব পরিবেশে অনেকটা জায়গা নিয়ে এই বাড়ি । রয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত একটি মিউজিয়াম । সারাক্ষণ চলছে রবীন্দ্র সঙ্গীত । সব কিছু দেখতে দেখতে আর গান শুনতে শুনতে কখন যে সময় বয়ে যায় তার টের পাওয়া যায় না । এছাড়া এই গ্রামটি সিঙ্কোনা বাগানের জন্যও বিখ্যাত। যার ছালগুলি ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনাইন (Quinine) তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

এরপর মংপু থেকে রিম্বি হয়ে তিস্তা নদীর পাশ দিয়ে ফিরে আসলাম বিকাল পাঁচটা নাগাদ আমাদের শিলিগুড়ির বাড়িতে ।

Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos

Leave a comment