দূষণ মুক্ত পরিবেশ দাও

কদিন আগে ফেস বুকে একটা পোস্টে দেখলাম এক জন আরেক জনের সাথে ফোনে কথা বলছে । একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে – কেমন আছ ? ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল – ভাল নেই । চোখফেটে জল আসছে , বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে , শ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে , চারিদিকে শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া , মনে হয় আর বাঁচবো না । এ প্রান্ত থেকে বলল – তুমি এখনও  আমার প্রেমে পাগল ? ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল – না । আমি এখন দিল্লিতে আছি । বুঝতে পারলাম দিল্লির দূষণকে ব্যঙ্গ করে এই লেখা । লেখাটা পড়ে হাসব না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না । তবে দূষণের মাত্রা যদি এরকম ভাবে বেড়ে চলে তবে ভবিষ্যতে আমাদের কাঁদতে হবে ।যেখানে বায়ুর গুণমান সূচক (AQI)  ১০০ উপরে গেলে অস্বাস্থ্যকর ধরা হয় সেখানে আমাদের অনেক কটা শহরের AQI এখন ১০০ র অনেক ওপরে । আন্তর্জাতিক পরিবেশ গবেষণা সংস্থা সুইস গ্রুপ আই কিউএয়ারের (Swiss Group IQAir) রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের দূষিত শহরগুলির তালিকায় আমাদের অনেকগুলি শহর আছে । দূষণ তো কেবলমাত্র বাতাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা তো নয় জলের মধ্যে দূষণও মাত্রা ছাড়িয়েছে । দূষণ যদি রোধ করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের নদীগুলির পরিচয় হবে বৈতরণী নদী আর শহরের মানুষের সবসময়ের সঙ্গী হতে পারে নানাবিধ অসুখ ।দুষিত জল খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদী অঙ্গের ক্ষতি সহ বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। দূষণ মাটি, জল ও বায়ুকে দূষিত করে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। এটি  জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, পরিবেশগত ভারসাম্য, উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয় জীবনকে প্রভাবিত করে।কিছু দূষণকারী যেমন গ্রিনহাউস গ্যাস (যেমন, কার-বন ডাই অক্সাইড এবং মিথেন) জলবায়ুর  পরিবর্তন ঘটায়,সাম্রগ্রিক উষ্ণতা বাড়ায় ,সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন ঘটায় যা মানব সমাজ-বন্ধন এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।এছাড়া বায়ু দূষণ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক সহ কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।এক কথায় বলা যায় দূষণ মানব স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং জীবন্ত প্রাণীর সামগ্রিক সুস্থতার উপর বিস্তৃত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।তাই আমাদের উচিৎ প্রশাসনের কথা না ভেবে নিজেদের সাধ্যমতো দূষণ রোধে এখন থেকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া কারন আমরা জানি যে সাধারণ মানুষ দূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে । একটি পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে আমাদের সবার নিচের বাস্তব পদক্ষেপগুলি নেওয়া উচিৎ:

  • সর্বপ্রথম দূষণের ব্যপারে নিজেকে সচেতন করা 
  • নিজেদের বাড়ি পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা । আপনি যে বৈদ্যুতিক জিনিসগুলি ব্যবহার করছেন না তা বন্ধ করুন। মোটকথা এনার্জির অপচয় বন্ধ করুন 
  • জলের অপচয় বন্ধ করুন
  • পাবলিক স্পেসের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সাহায্য করুন । পাবলিক স্পেসে কোথাও নোংরা বা থুতু ফেলবেন না
  • গাড়ি ট্রাফিকে দাড়িয়ে থাকলে স্টার্ট বন্ধ করে দিন
  • নদী, খাল, বিল, পুকুরকে দুষিত করবেন না । কোন আবর্জনা জলে ফেলবেন না
  • একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এড়িয়ে চলুন এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পণ্য বেছে নিন।
  • স্থানীয় প্রবিধান অনুসরণ করে বিপজ্জনক বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করুন।
  • সুযোগ থাকলে গাছ লাগান । সবুজায়নকে সমর্থন করুন
  • যেখানে আগুন জ্বালাতে কাঠ ব্যবহার করা হয় সেখানে সবসময় শুকনো কাঠ ব্যবহার করাই উচিৎ

নিজেদের স্বার্থে সকলের সন্মিলিত প্রচেষ্টা যদি থাকে এবং প্রশাসন যদি একটু সজাগ হয় তার সাথে ভোটের কথা চিন্তা না করে সবার স্বার্থে কঠোর হয় তাহলে দূষণ মুক্ত শহর পেতে আমাদের কোন অসুবিধা হওয়া উচিৎ না ।

Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos

Leave a comment