শাকসবজি কি করে সংরক্ষণ করলে অনেকদিন তাজা থাকবে – লিপিকা রায়

এত বছর ধরে সংসার করতে করতে অনেক ব্যাপারেরই বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হচ্ছে । তাই আমার আগের দুটো লেখার মতো আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য যারা নতুন সংসার করছে বা যারা জানে না ।আগেকার সময়ে সংসারের অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকতো প্রতিদিনের বাজার ও প্রতিদিনের রান্না । কারণ সংরক্ষণের অভাব । কিন্তু এখনকার ব্যস্তময় সংসারে আছে অনেক সুযোগ সুবিধা যারফলে প্রতিদিন বাজার করার কোন প্রয়োজন নেই বা সময়ও নেই । কিন্তু পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার খাওয়ার জন্য অনেকদিন শাকসবজি তাজা ও নিরাপদ রাখা যায় যে পদ্ধতিতে সেটা জানা খুব দরকার । আমার অভিজ্ঞতা যদি কারও কাজে লাগে তাহলে খুব আনন্দ পাবো ।আরও কেউ যদি তাদের অভিজ্ঞতা আমার লেখার সাথে শেয়ার করে তাহলে খুব ভাল লাগবে ।   

 ১. বাজার থেকে শাকসবজি বাড়িতে আনার পর শাকসবজিতে হাত দেওয়ার আগে দুই হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত যাতে কোন দূষক( contaminant ) শাকসবজির মধ্যে স্থানান্তরিত না হতে পারে ।

২. শাক সবজি ধোয়ার আগে ভাল করে দেখে নিয়ে বাদ দেওয়া দরকার কোন সবজি পচা থাকলে । কারণ পচা অংশ অন্য ভাল সবজিকে খারাপ করে দেবে ।   

৩. ঠাণ্ডা প্রবাহিত জলে সব শাক সবজি ভাল করে জলে ধুয়ে নিতে হবে যাতে কোন ময়লা না থাকে আর শাকসবজির উপর যদি কোন ব্যাকটেরিয়া থাকে তাহলে সেটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে ।  

৪. একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে সবজি শুকিয়ে বেশিরভাগ শাক, ভেষজ, ব্রকলি, ফুলকপি, গাজর, শসা, গোলমরিচ এবং অন্যান্য উপাদেয় সবজি ফ্রিজের ক্রিসপার ড্রয়ারে ছিদ্রযুক্ত পরিষ্কার শুষ্ক প্লাস্টিকের নেট বা পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিত।

৫. টমেটো, পেঁয়াজ, আলু, রসুন এবং শীতকালীন স্কোয়াশের মতো কিছু সবজি ঘরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

৬. যেখানে ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেখানে শীত , গ্রীষ্ম , বর্ষায় একই তাপমত্রায় ফ্রিজ না চালিয়ে সময় অনুযায়ী তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণে রাখলে ভাল ।

৭. বায়ুরোধী পাত্রে শাকসবজি সংরক্ষণ করা এড়িয়ে চলা উচিত , কারণ তারা আর্দ্রতা আটকে রাখতে পারে এবং শাকসবজি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৮. লেবু লবণের কৌটার মধ্যে রাখলে অনেক বেশিদিন তাজা থাকবে।

৯. বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, পালংশাকের মতো সবুজ শাকসবজির রান্নার সময় আধা চামচ চিনি ও  রান্নার শেষ দিকে লবণ মিশিয়ে নিলে রান্নার স্বাদ বজায় থাকবে ।

১০. আস্ত ফুলকপি রান্না করার সময় অর্ধেক লেবু ফুলকপির উপরের অংশে ঘষে নিয়ে কপির মাঝখানে ছুরি দিয়ে কোনাকুনি কেটে নিলে , ফুলকপি সহজে সিদ্ধ হবে।

১১. মুলা রান্না করার আগে পাতলা করে খোসা ছাড়িয়ে নিলে মুলার গন্ধ কমে যাবে।

১২. টমেটো বা মাশরুম ব্রাউন পেপার ব্যাগে ফ্রিজে রাখলে ভাল থাকবে । টমেটো ঘরের তাপমাত্রায় রাখলেও ভাল থাকে ।

১৩. কাচালঙ্কার বোটা ছাড়িয়ে কিচেন পেপার দিয়ে মুড়ে বায়ুরোধী কৌটায় ফ্রিজে রাখলে কাচালঙ্কা অনেকদিন তাজা থাকবে ।

১৪. ফুলকপি ছোট ছোট করে কেটে এয়ারটাইট প্যাকে ভরে ফ্রিজে রাখতে পারলে ফুলকপি অনেকদিন তাজা থাকবে ।

১৫. ক্যাপসিকাম অর্ধেক কেটে ফেলে না রাখতে পারলেই ভালো। তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১৬. আলু বেশিদিন ভালো রাখার জন্য আলুর সঙ্গে ঝুড়িতে একটা আপেল রাখলে আলু সহজে পচে যাবে না।

১৭. পেঁয়াজ, বেগুন, স্কোয়াশের মতো সবজি ফ্রিজের বাইরে রাখলে  ভালো থাকবে।

১৮. লেটুস , পালং , সালাদের সবজিতে ধোয়ার সময় জলের মধ্যে সামান্য পরিমাণ লেবু মিশালে লেটুস , পালং , সালাদের সবজি অনেকদিন তাজা থাকবে ।

১৯. ধনিয়া পাতা ধোয়ার আগে গোঁড়া থেকে কেটে নিলে অনেকদিন ভাল থাকবে ।

২০. গাজর ফ্রিজে রাখার আগে কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে রাখলে অনেকদিন তাজা থাকে ।

২১. মটরশুটি , শিমবিচি খোসা ছাড়িয়ে পলিথিন ব্যাগে ফ্রিজে রাখলে অনেকদিন তাজা থাকবে ।

২২. লেবু যদি পুরোটা দরকার না লাগে তাহলে মাঝ বরাবর কাটলে লেবু শুকিয়ে যাবে , পরে আর ব্যবহার করা যাবে না । তখন উচিত কাটাচামচ বা মোটা পিন দিয়ে লেবুর কোন এক জায়গায় ফুটো করে দরকার মতো রস বের করে লেবুটাকে পরে ব্যবহার করার জন্য রেখে দেওয়া । তাহলে লেবুটা আর শুকিয়ে যাবে না ।    

২৩. পটলের বোঁটা দেখে বুঝতে হবে পটল টাটকা কিনা। টাটকা হলে বোঁটা শুকনো বা পঁচা থাকবে না। যত বেশি শুকনো তত বাসি।

২৪. লাউ-কুমড়া, বরবটি, কাঁকরোল, ঝিঙা, চিচিংগা, শশা প্রভূতি কচি হওয়া দরকার। অন্য কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা তেমন জরুরী নয়।

২৫. সবজি যেমন ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি, লঙ্কা, লেবু, গাজর, বিট, কড়াইশুঁটি ইত্যাদি সহ সব সবজির গন্ধ একবার চিনতে পারলে শাক সবজি কিনতে কক্ষনো ভুল হবে না । কেননা প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত প্রত্যেক সবজির আলাদা আলাদা গন্ধ আছে ।

পরিশেষে বলবো কিছু ফল ও সবজি আছে যেগুলো ফ্রিজে রাখলে দ্রুত তাদের গন্ধ এবং গঠন হারায়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট হল টমেটো, আলু, অ্যাভোকাডো, পেঁয়াজ, পীচ এবং কলা ।

আর সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কথা হল – ফল ও সবজি সংরক্ষণের জন্য স্বাস্থ্যবিধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পচতে শুরু করেছে এমন পণ্য খুব দ্রুত আশেপাশের অন্যান্য সবজি এবং ফলকে প্রভাবিত করবে। এমনকি ছোট ছোট টুকরোগুলিরও একটি ঝাঁঝালো প্রভাব থাকতে পারে, তাই পচা পণ্যগুলি অপসারণের পরে নিশিচভাবে ক্রিস্পার বা রেফ্রিজারেটরের শেলফ ভালভাবে পরিষ্কার করা উচিত । এটি কেবল খাবারকে তাজা রাখতে সাহায্য করবে না, এটি রেফ্রিজারেটরে খারাপ গন্ধকেও রোধ করবে। আবার বলি আমার অভিজ্ঞতা যদি কারও কাজে লাগে তাহলে খুব আনন্দ পাবো এবং আরও কেউ যদি তাদের অভিজ্ঞতা আমার লেখার সাথে শেয়ার করে তাহলে আরও ভাল লাগবে ।

Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos

Leave a comment