অন্ত্যেষ্টি – সুপ্রিয় রায়

অন্ত মানে শেষ আর ইষ্টি মানে যজ্ঞ তাহলে অন্ত্যেষ্টি মানে দাঁড়াল শেষ যজ্ঞ অর্থাৎ যখন মানুষের মৃতদেহ আগুনে আহুতি দেওয়া হয় । পচনশীল দেহখানা না রেখে তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়াই হল অন্ত্যেষ্টি। পুরাকালে এখনকার মতো হাসপাতাল বা Nursing home ছিল না । মানুষের জন্ম আর মৃত্যু হত বাড়ির মধ্যে । তার ফলে বাড়ির পরিবেশের শুচিতা নষ্ট হত অর্থাৎ বলা যায় বাড়ির পরিবেশে অশুচি দেখা দিত ।তাই জন্মের সময় বাইরে থেকে বাড়ির ভিতরে এবং মৃত্যুর সময় বাড়ির ভিতর থেকে বাইরে যাতে জীবাণু যেতে না পারে তার জন্য জন্ম আর মৃত্যুর পর কিছুদিন অশৌচ পালনের বিধান আসলো । কিন্তু এখন তো প্রায় বেশীরভাগ জন্ম আর মৃত্যু ঘটে হাসপাতাল বা Nursing home এ ।তাই জীবাণু বাড়ির থেকে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা নেইই  বলা যায় ।তবুও দেখা যায় বিশেষ করে মানুষের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মণ ১০ দিন, ক্ষত্রিয় ১২ দিন, বৈশ্য ১৫ দিন এবং শূদ্র ৩০ দিন ধরে অশৌচ পালন করে । তারপর এই অশৌচ পালনের পর আসে শ্রাদ্ধ । মৃত ব্যাক্তির এবং তিন পুরুষের আত্মার তৃপ্তির জন্য শ্রদ্ধার সাথে দান করার যে বিধান সেটা হোল শ্রাদ্ধের বিধান । কথিত আছে মহামুনি নিমির ছেলের মৃত্যুর পর তার ছেলের আত্মার শান্তির জন্য ওনি কিছু পূজনীয় ব্যাক্তিকে ভোজন করান ও কিছু দান করেন । এর থেকেই শোনা যায় উৎপত্তি হয় শ্রাদ্ধের । একটা  জিনিস আমার কিছুতেই বোধগম্য হয় না বা বলা যায় আমার জানতে খুব ইচ্ছা হয় কেন এই বৈষম্য । কেন এই বিধান – ব্রাহ্মণ ১০ দিন, ক্ষত্রিয় ১২ দিন, বৈশ্য ১৫ দিন এবং শূদ্র ৩০ দিন অশৌচ পালন করার পর শ্রাদ্ধ করবে । বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন রকম বিধান হতে পারে কিন্তু একই ধর্মের মানুষের মধ্যে এত আলাদা আলাদা বিধান কেন ?সবাই তো এক রক্ত মাংসের মানুষ । তবে অশৌচের ব্যাপারে কেন এই আলাদা নিয়ম ? আর এই উন্নত সমাজব্যবস্থায় অশৌচ পালনের যুক্তি বা কি ?  যেকোন মৃত্যুই তার প্রিয়জনদের কাছে দুঃখের । তাই সেই প্রিয়জনের মৃত্যুর পর কেন মানুষকে ভোজন করান হবে সেটাও মন থেকে কিছুতেই মানতে পারছি না ।

One thought on “অন্ত্যেষ্টি – সুপ্রিয় রায়

  1. Krishnasis Chatterjee
    এই বিধান ব্রাহ্মণ দের সৃষ্টি তাদের আধিপত্যে যাতে বেশিদিন কষ্ট না করতে হয়।
    Partha Pratim Dasgupta
    এই গোটা বিষয়টি প্রশ্নাতীত। কারণ এই বিষয়ে কি, কেন তার সদুত্তর জেনে আর যুক্তিদিয়ে বুঝে কেউ করে না। সবাই গতানুগতিক ভাবে পালন করে যায়। আমার তো গোটা ব্যাপার টাই একটা নাটক বলে মনে হয়। এর আবার ড্রেস-কোড ও আছে। যেটা ছেলেরা করে থাকে। অর্থাৎ যে জানেনা তাকেও জানিয়ে দেওয়া যে, “তার বাবা কিংবা মা গত হয়েছেন। আবার কাজে বসার আগে চুল ফেলে দেওয়া। সে আবার নাটকের দ্বিতীয় অঙ্ক।
    সন্তান আর পিতা-মাতার মধ্যে সম্পর্কের আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, দুঃখানুভূতি এসব কি লোক দেখানোর জিনিস ? পরিশেষে ভুরিভোজন ! অদ্ভুত পরিসমাপ্তি। আসলে এখনকার দিনে কোনো বিদ্যাসাগর বা রামমোহনের মতো কোনো সমাজ সংস্কারক নেই যে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন।
    Lipika Roy
    সত‍্যি সবাইতো মানুষ সবার জন‍্য একই বিধান কেনো হবে না? নিয়মতো একই হওয়া উচিত। জন্মের সময় বাইরে থেকে ভিতরে এবং মৃত‍্যুর সময় বাড়ির ভিতর থেকে জীবাণু যেতে না পারে তারজন‍্য অশৌচ পালনের মতো কিছু restriction তৈরী করা হল এর একটা বৈজ্ঞানিক ব‍্যাখ‍্যা আছে কিন্তু সবাইকে পাতপেড়ে খাওয়ানোটা যেন কেমন অদ্ভুত লাগে।
    Surajit Das Gupta
    আমি ভীষণ ভাবে এই পাতপেড়ে খাওয়ানোর বিরুদ্ধে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমি এই অনুষ্ঠানে যাই না। কিছু কিছু যায়গায় যেতে হয়, এড়ানো যায় না। আমি নিজের থেকে এব্যাপারে একটা যুক্তি খাড়া করেছি। হয়ত ঐ শোকের দিনগুলো থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই আয়োজন। বাড়িতে কোনো কাজ হলে সবাই ব্যস্ত থাকে। এটা বোধহয় শোকের থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার একটা প্রচেষ্টা। এটা একান্তই আমার নিজস্ব মতামত, যদিও শ্রাদ্ধভোজকে আমি আদৌ সমর্থন করি না। আর শোকের দিনগুলি তো ব্রাহ্মণ দের তৈরী করা। অদ্ভুত ভাবে শ্রাদ্ধভোজেও ব্রাহ্মণ ভোজনের বন্দোবস্ত পাকা।
    Sucheta Sen
    Amar o akmot barir priyojon maragele sradha koro thik ache barite pujopath kora uchit kintu patpere manush ke khaoyano akdomi thik noye tar opor abar niyombongho uff ato kharap niyom je bolar noye ……sob bodlacche ei niyomero bodol hoya darkar
    Suman Bose
    ঠিক এই ভোজন উৎসব আমি একেবারেই মন থেকে মেনে নিতে পারিনা, আগে অনেক এরকম অনুষ্ঠানে গেছি বটে তবে বাবা এবং মার মৃত্যুর পর থেকে এইরকম কোন অনুষ্ঠানে আর যাইনা।

    Like

Leave a reply to supriyoroy Cancel reply