সেদিনের কথা আজও মনে পড়লে মনটা বিষাদে ভরে ওঠে । অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেল কিন্তু মন থেকে কিছুতেই সেদিনের কথা মুছে ফেলতে পারছি না । মুছে ফেলতে পারলে খুব ভাল হতো তাহলে অন্তত দুঃখটা কম হতো । আমি তখন মুম্বাইতে কর্মরত । একা থাকি মুম্বাইতে আর আমার পরিবার থাকে শিলিগুড়িতে । শিলিগুড়িতেই থাকে আমার এক দাদা বৌদি জানালো যে আমার কাছে কদিনের জন্য আসতে চায় ।কারণ বউদির হঠাৎ করে ক্যান্সার ধরা পড়েছে । তাই মুম্বাইয়ের টাটাতে চিকিৎসার জন্য আনতে চায় । সাথে সাথেই চলে আসতে বলে দিলাম । শিলিগুড়ি থেকে মুম্বাই আসতে হলে সেই দাদার – গৌহাটি ছাড়া আর কোন ট্রেন সেই সময় ছিল না । তাই ওনারা নির্ধারিত দিনে দাদার – গৌহাটিতেই রওনা হলেন আমার কাছে মুম্বাই আসার জন্য । এই ট্রেনটা ভি টি বা ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস হয়ে দাদারে এসে শেষ হয় । ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে অনেকক্ষণ দাঁড়ায় আর প্রায়ই ভালই লেট করে । তাই ওনাদের আমি বলেছিলাম কল্যাণ স্টেশন আসলে আমাকে একটা ফোন করতে তাহলে আমি ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে চলে আসবো আর ওখান থেকে নিয়ে আসবো । আমাদের শিলিগুড়িতেই থাকে এবং আমাদের খুবই পরিচিত আরেকটা ছেলে আস্রাব , বর্তমানে মুম্বাইতে কর্মরত সেও আসবে বলল ভিটি স্টেশনে আমাদের সাথে দেখা করতে ।কল্যাণ থেকে দাদা -বৌদির ফোন পেলাম যে ট্রেনটা অবিশ্বাস্য ভাবে প্রায় ঠিক সময় মতোই চলছিল , সামান্য একটু লেট । এটা শুনে আমি ওনাদের বললাম দাদার অবধি চলে আসতে তাহলে আমারও ভাল হয় আমি ওনাদের দাদার থেকেই নিয়ে আসতে পারবো । কেননা আমি তখন থাকি আন্ধেরিতে । আমার থেকে দাদার স্টেশন কাছে । আস্রাব বলল যে ও ভিটিতেই আসবে কারণ ওটাই ওর সুবিধা , পরে একদিন সময় করে আমার বাড়িতে আসবে ।ট্রেনটা সামান্য একটু লেট ছিল । আমি ওনাদের দাদারে ট্রেন থেকে নামিয়ে নিলাম । শুনলাম আস্রাব এসেছিল ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে দেখা করতে । সাথে এনেছিল ফল । ওনাদের ট্রেন ছাড়া অবধি ও স্টেশনেই ছিল । আস্রাব বরাবরই পড়াশুনায় বেশ ভাল ছিল । ও ছিল ওর বাবা -মার একমাত্র ছেলে তখন মুম্বাইতে চাকরী করে । ওর বাবা মা থাকতো শিলিগুড়িতে । তাই ওর জন্য ওর বাব -মা, দাদা- বৌদির হাতে করে কিছু নারু , মোয়া আর মিষ্টি পাঠিয়ে দিয়েছিল ।সেগুলো পেয়ে আস্রাব খুব খুশী হয়েছিল । আমি ভেবেছিলাম দাদার স্টেশন থেকে ট্যাক্সি নিয়ে ওনাদের নিয়ে আসবো কেননা মুম্বাইতে ট্রেনে যা ভিড় হয় ওনারা উঠতেই পারবেন না । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম দাদার থেকে আন্ধেরির ট্রেনে খুব একটা ভিড় নেই । সাড়ে নটা বাজে অথচ ট্রেনে ভিড় নেই, খুবই অবাক হচ্ছিলাম । যাইহোক আমাদের তো ভাল , উঠে পড়লাম ট্রেনে । তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারবো । বসার জায়গাও পেয়ে গেলাম । ভাগ্যকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম । হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল । দেখলাম শিলিগুড়ি থেকে আমার স্ত্রী ফোন করেছে ।হ্যালো বলার সাথে সাথেই ওদিক থেকে চীৎকার শুনলাম – “ তোমরা এখন কোথায় ? ভিটি স্টেশনে নেই তো ?”
- “ না, না আমি ভিটিতে যাইনি । আমি দাদারে এসেছিলাম ওনাদের নিতে । এখন ট্রেনে করে বাড়ি যাচ্ছি ।”
- “ তুমি যে ভিটিতে না গিয়ে দাদারে এসেছ সেটা আমায় কেন জানাওনি ?”
- “ আরে এটা জানানোর কি আছে ?তুমি এমনি করে কথা বলছো কেন ?”
- “ বাড়ি গিয়ে টিভি দেখ , তাহলেই বুঝতে পারবে । আমার হাত পা এখনও ঠাণ্ডা হয়ে আছে ।”
- “ আরে বাবা এতো চিন্তার কি আছে । তাড়াতাড়ি হাত পা গরম করে নাও ।”
- “ মজা কর না । বাড়ি যাও তাহলেই বুঝবে । আর শোন বাড়ি পৌঁছেই আমাকে ফোন করবে । খুব চিন্তায় থাকবো ।”
- “ কি হয়েছে বলবে তো ?”
- “ টিভিতে বলছে একটু আগে ভিটি স্টেশনে প্রচুর গোলাগুলি চলেছে , অনেক লোক মারা গেছে ।”
- “ তাই নাকি ? ঠিক আছে ফোনটা রাখ । আমি বাড়ি পৌঁছে তোমায় ফোন করছি ।”
বাড়ি পৌঁছেই টিভি খুললাম । ভাবতেই পারছিলাম না কি ঘটনা ঘটে গিয়েছিল মুম্বাইতে ।আমাদের যে সময়ে ভিটি স্টেশনে থাকার কথা ঐ সময় কিছু জঙ্গি স্টেশনে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল । আর তাতে স্টেশনে উপস্থিত প্রচুর লোক মারা গেছিল । ভাবছিলাম ভাগ্যিস ওনাদের দাদার আসতে বলেছিলাম , নাহলে ঐ সময় আমরা ভিটিতেই থাকতাম । জানিনা কি হতো । হটাৎ মনে পড়ল আস্রাবের কথা । ও তো ঐ সময় ভিটিতে ছিল । সাথে সাথে মোবাইলে ওকে ধরার চেষ্টা করলাম । ফোন বেজে যাচ্ছে কিন্তু ফোন ধরছিল না । ও যেখানে থাকে সেই জায়গাটাও চিনতাম না আর সেখানকার কারও ফোন নাম্বারও আমার জানা ছিল না । কি যে করবো বুঝতে পারছিলাম না । এমনি করেই সময় বয়ে যেতে লাগলো । ঠিক হল ফোনে যোগাযোগ না করতে পারলে কাল সকালে ওর অফিসে যাব ।
খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমাতে যেতে বেশ রাত হল । সবে চোখের পাতা দুটো একটু বুঝে এসেছে এমন সময় আবার ফোন । মোবাইলে আস্রাবের নাম ভেসে উঠলো । তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একটা অচেনা গলা ভেসে আসলো। কি হল বোঝার আগেই ওপাশ থেকে একজন হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলো আমি আস্রাবকে চিনি কিনা ? আমি হ্যাঁ বলাতে আমার কাছে জানতে চাইলো আমি এখুনি একবার ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে আসতে পারবো কিনা ? আমি সাথে সাথেই জিজ্ঞেস করলাম- “ কে বলছেন ? কেন যেতে বলছেন ? এটা তো আস্রাবের ফোন ? ও কোথায় ?”
ওপাশ থেকে উত্তর আসলো – “ আমি মুম্বাই পুলিশের ইনেস্পেক্তর ভেদক বলছি । ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে আজ যে জঙ্গি হামলা হয়েছে তাতে আরও অনেকের সাথে আস্রাবেরও গায়ে গুলি লেগেছে । ওর মোবাইল থেকে আপনার নাম্বার পেয়ে আপনাকে ফোন করছি এখন আর কথা নয় । আপনি তাড়াতাড়ি ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে চলে আসুন ।” আমি আর শিলিগুড়ির দাদা সাথে সাথেই ছুটলাম ভিটি স্টেশনে । গিয়ে দেখলাম পুলিশে পুলিশে ছয়লাম । প্রচুর মানুষের ভিড় । যন্ত্রণায় চীৎকার করছিল বহু মানুষ । চারিদিকে রক্তের দাগ ।মাটিতে পড়ে ছিল বহু মানুষ ।চারপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল ।কাউকে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছিল না । বুঝতে পারছিলাম না আস্রাব বেঁচে আছে কিনা ! একজন পুলিশকে ইনেস্পেক্তর ভেদকের কথা বলতেই আমাদেরকে ওনার কাছে নিয়ে গেল ।গিয়ে দেখলাম একহাতে মোয়ার শিশি আর একহাতে নারুর শিশি নিয়ে আস্রাব পড়ে ছিল মাটিতে । সারা জামা রক্তে ভিজে গেছিল । শুনলাম ওর বুকে গুলি লেগেছে ।মনে হচ্ছিল পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে । কি করে আস্রাবের বাড়িতে খবর দেবো । কি করে বলবো এক জঙ্গির নৃশংস আচরনে আমাদের প্রিয় আস্রাব ভিটি স্টেশনে ২৬শে নভেম্বর ২০০৮ রাত্রি ৯ টা নাগাদ আমাদের ছেড়ে চলে গেল ।এতে কার কি লাভ হল জানিনা কিন্তু এটা বুঝি যে যারা মারা গেল তাদের পরিবারের কি নিদারুণ ক্ষতি হল । তারা জানতেও পারলো না যে কি কারণে তাদের মারা হল ।
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos
Apurba Neogi
Very sad , painful and heartbreaking.
Abhijit Samadder
Very sad
Tanima Goswami
Very sad.
Bani Paul
বেদনা দাওক স্মৃতি
Biman Kumar Chatterjee
খুব ই দুঃখজনক ঘটনা। ভীষন কষ্ট পেলাম। কোথায় যেন নিজের জীবন এর একটা মিল খুঁজে পেলাম।
Subhash Chakraborty
Khoob e mormanthak ghotona , vissoin dukhojanak
Pratap Chatterjee
খুবই দুঃখজনক।
Soumendra Shome
পরতে পরতে চোখে জল এসে গেল। রাজনীতি যদি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় তালে সেই রাজনীতির কি অর্থ।
যে মায়ের কোল খালি হোলো তার বাকি জীবন কি ভাবে কাটবে?
Tapasi Banerjee
Very sad. Monta kharap lagche.
Mita Sengupta
Khub kharap lagche pore
Kumkum Dutta
ভাষা নাই ।😢😢🙏🙏
Swapna Sen Gupta
সত্যি আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয় গেলো।বিপদ কখন আসবে কেও বলতে পারে না।
Kanti S
Abhabe manus chole gale khub kharap lage ar kono bechar nai!
Gautam Chaki
Very sad
Reena Dasgupta
Khubi dukhher ghatona
Swapan Dattaray
Very sorry . It touched my heart .
Chanchal Bhattacharya
এমন বেদনার স্মৃতি মন-কে কাঁদালেও, ভোলা মুশকিল।
Tumpa Dasgupta
লেখা টা খুব সুন্দর……তোমার লেখার বক্তব্য এত সুন্দর যে মনে হয় চোখের সামনে সব দেখতে পাচ্ছি…..
Tumpa Dasgupta
তুমি কি এখন কলকাতা তে?
Tania Dasgupta
Ki sundor likhecho tumi jethu..puro spechless..choke jol chle eschilo..
Sucheta Sen
খুবই দুঃখজনক ঘটনা…. শুনে খুব খারাপ লাগল
Swapnesh Ghosh
mormantik ghotina ja aaj o apnar mone ache.ei rokom ghotona sohoje vola jaina
Abani Banerjee
এটাকি ঘটনা না তোমার সাহিত্যকর্ম ?
Krishnasis Chatterjee
Bhalo lekhata
Shubhranshu Mohan Banerji
এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ।
Goutam Choudhury
এটা যদি তোমার জীবনের ঘটনা হয় তবে দারুন দুঃখজ
Priyabrata Panja
এত মন খারাপ করা ঘটনাকি ভোলা যায়।তারপর তুমি তা চাক্ষুস করেছো।কতগুলো মগজধোলাই করা বিপথগামী হটকারী জেহাদি দের জন্য এই অবস্থা।
Soma Dasgupta
কি সাংঘাতিক ঘটনা , মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে ।এখনকার যা পরিস্থিতি তাতে মানুষ বাইরে গেলে না ফিরলে শান্তি নেই ।বিপদ যে কখন কি ভাবে আসবে কেউ বলতে পারে না ।এই সব ঘটনা গুলোতে কিছু নিরিহ মানুষের প্রান শেষ হয়ে যায় ।
Prosanta Saha
মম্মা’ন্তিক ভাষায় না হি বলা যায়।
Mamata Sengupta
Amra beche achi kintu 5 minute pore ki hobe janina. Lekhata pore monta vorakranto hoye gelo.
Nikhil Laha
এটাই সত্যি।আমাদের জীবনের কোনো দাম নেই। খুবই মর্মান্তিক।
Bhabani Pramanik
ভাবতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
LikeLiked by 1 person
THANKS TO ALL
LikeLike