ব্যাক্তিগতভাবে আমার মতো নিশ্চয় অনেকেই মনে করেন যে দেশে বা রাজ্যে সবসময় প্রতিপক্ষ যত মজবুত হবে, সমাজের জন্য তত ভাল ।আমার মনে হয় প্রতিপক্ষ বা বিরোধী শক্তি সমাজে একটি স্বাভাবিক ও অপরিহার্য অংশ। সমাজে প্রতিপক্ষ মজবুত হোলে ক্ষমতাসীন পক্ষের বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার অপব্যবহারকে প্রতিহত করতে পারে । তার ফলে ক্ষমতাসীন পক্ষ বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের কর্মকাণ্ডে আরও বেশী করে সতর্ক হতে বাধ্য । একাধিপত্য বা একক নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা কম হতে বাধ্য । একটি পক্ষ যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাজ করতে থাকে, তাহলে অনেকসময় স্বেচ্ছাচারিতা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে । কিন্তু শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকলে তাদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে এবং কাজগুলো ন্যায়সঙ্গতভাবে করতে বাধ্য হবে । গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল শর্তই হচ্ছে, সমাজে একটি শক্তিশালী বিরোধী শক্তির উপস্থিতি। প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালী হবে , ততই জনগণ তাদের অধিকার রক্ষার সুযোগ পাবে । গণতন্ত্রে ভিন্নমতের অবস্থান থাকা বাধ্যতামূলক, কারণ এটি একটি স্বাস্থ্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিচায়ক। প্রতিপক্ষের অনুপস্থিতি স্বৈরাচারী ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যায় , যেখানে গণতন্ত্রের বিকাশ ব্যাহত হয় এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হয়ে যায়। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ একটি সমাজের উন্নয়নকে গঠনমূলকভাবে ত্বরান্বিত করতে পারে। প্রতিপক্ষের সমালোচনা বা বিরোধিতা প্রায়ই ক্ষমতাসীনদের ভুল এবং দুর্বলতাগুলোকে ধরিয়ে দেয় । পাশাপাশি জনগণও সমাজের প্রকৃত চিত্র দেখতে পারে এবং নিজেদেরকে সচেতন করে তুলতে পারে।
অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের উপস্থিতি তখনই সমাজের জন্য ভালো হতে পারে যখন তা নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। প্রতিপক্ষকে অবশ্যই সামাজিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। যদি প্রতিপক্ষের প্রধান উদ্দেশ্য হয় কেবল ক্ষমতা দখল করা এবং নিজেদের স্বার্থে কাজ করা, তাহলে সমাজের কল্যাণের পরিবর্তে বিপর্যয় ঘটবে। এজন্য, প্রতিপক্ষকে ন্যায় এবং সামাজিক কল্যাণের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।
সুতরাং এটা জোড় দিয়ে বলা যায় যে প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী ও নৈতিকতাসম্পন্ন হবে, ততই সমাজ সুষ্ঠু ও ন্যায়সম্মত পথে পরিচালিত হবে। এটি শুধু রাজনীতি বা ক্ষমতার খেলা নয়, বরং মানুষের চিন্তা, আদর্শ এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।