দুর্নীতি – সমাজের সবচেয়ে বড় ব্যাধি

আমাদের সমাজের আরও অনেক ব্যাধির সাথে সবচেয়ে বড় ব্যাধি মনে হয় এই মুহূর্তে দুর্নীতি । যেটা শুধুমাত্র একটি দেশের সরকার বা রাজনীতিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না সেই দুর্নীতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে সমাজের সর্বস্তরে।দেশের জনগন সচেতন না হোলে কোন ভাবেই এই সামাজিক ব্যাধি থেকে আমাদের নিস্তার নেই । তার সাথে চাই দুর্নীতি দমনকারী প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া ।

আমরা মোটামুটিভাবে বলতে পারি যে দুর্নীতি প্রধানত দুই প্রকারের হয় । যেমন –

  1. প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি (Institutional Corruption): এই ধরনের দুর্নীতি কোনো সরকারি, বেসরকারি, বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ঘটে। সাধারণত ক্ষমতাসীন ব্যক্তি বা কর্মচারীরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থনৈতিক বা সামাজিক সুবিধা লাভ করে থাকে।
  2. ব্যক্তিগত দুর্নীতি (Personal Corruption): ব্যক্তিগত স্বার্থে বা সুযোগসন্ধানী আচরণের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি নিজেই অনৈতিক উপায়ে সুবিধা লাভ করে থাকে।

দুর্নীতি সমাজে সাধারণত তখনই বাড়তে থাকে যখন দেখা যায় –

  1. দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা: যদি কোনো দেশে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয় এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ফাঁক থাকে, তবে দুর্নীতি বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়। সুশাসনের অভাব, অস্পষ্ট আইন ও নিয়মকানুন প্রায়ই দুর্নীতির প্রসার ঘটায়।
  2. দায়বদ্ধতার অভাব: সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি ক্ষমতাধারীরা তাদের কাজের জন্য দায়বদ্ধ না থাকে এবং কোনো তদন্ত বা জবাবদিহিতা না থাকে, তবে দুর্নীতি দ্রুত বাড়তে পারে। বিচারহীনতা দুর্নীতির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
  3. সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়: সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ এবং সততার অভাব হলে দুর্নীতি বাড়ার প্রবণতা থাকে। মানুষ যদি মনে করে যে অন্যায় বা অবৈধ কাজ করে পার পাওয়া সম্ভব, তাহলে দুর্নীতি বাড়তে থাকে।
  4. অর্থনৈতিক চাপ: বেকারত্ব, দারিদ্র্য, ও নিম্ন আয়ের পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক সময় দুর্নীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে। অর্থনৈতিক সংকট দুর্নীতির প্রবণতা বৃদ্ধি করে।
  5. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল নেতৃত্ব, ও সরকারের উপর আস্থার অভাব দুর্নীতির জন্য উর্বর মাটি তৈরি করে। ক্ষমতার অপব্যবহার, বিশেষ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে, দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে।
  6. ঘুষের সংস্কৃতি: কোনো দেশে ঘুষের গ্রহণযোগ্যতা থাকলে, বা ঘুষকে সমস্যা হিসাবে গণ্য করা না হলে দুর্নীতি দ্রুত বাড়তে থাকে।
  7. নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর দুর্বলতা: দুর্নীতি দমনকারী প্রতিষ্ঠান যদি দুর্বল হয় বা স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে, তবে দুর্নীতি রোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তাই দুর্নীতির হার কমাতে চাই শক্তিশালী স্পষ্ট আইন, স্বচ্ছ প্রশাসন, এবং সামাজিক সচেতনতা ।

Leave a comment