এই ছোট্ট মানবিক আবেদন – প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক মানুষদের জন্য

বেশ কিছুদিন আগে আমেদাবাদ যাওয়ার জন্য গুজরাটের ভেরাভল রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিলাম । আমাদের সামনে একটা ট্রেন এসে দাঁড়াল । দুই হাতে দুটো স্ক্র্যাচ নিয়ে একটি লোককে দেখলাম একটি কামরার পিছনের দিকের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতে । পিছনের দরজাটা বন্ধ ছিল কিন্তু কামরাটির সামনের দরজাটি খোলা ছিল । ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলাম লোকটির একটা পা নেই । লোকটি ট্রেনের ভিতরে বসা একটি যুবককে  পিছনের  দরজাটা খুলে দিতে অনুরোধ করলো ।কিন্তু ছেলেটি ঐ লোকটিকে ঘুরে আসতে বলল ।  আমি যেখানে বসে ছিলাম সেখান থেকে সব শোনা যাচ্ছিল ।তাই  আমি ট্রেনে উঠে পিছনের দরজাটা খুলে দিলাম এবং ওনাকে ট্রেনে উঠতে সাহায্য করতে গেলাম ।কারণ ট্রেনের সিঁড়ি দিয়ে যে ওনি উঠতে পারবেনা সেটা আমি ভালই বুঝতে পারছিলাম ।   লোকটি আমাকে  আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলল যে ওনি নিজেই উঠতে পারবেন । তারপর দেখলাম লোকটি  স্ক্র্যাচদুটিকে দরজা দিয়ে ট্রেনের মধ্যে রাখল ।দুই হাতে ট্রেনের হাতল ধরে ট্রেনের দরজায় বসে পড়ল । তারপর দুইহাত দিয়ে মেজেতে চাপ দিয়ে শরীরটাকে ঘসে ঘসে কামরার ভিতরে প্রবেশ করলো । স্ক্র্যাচদুটিকে বসার জায়গায় রাখল । দুইহাত দিয়ে ধরে ধরে  বসার জায়গায় কোনরকমে শরীরটা রাখল ।ভালই কষ্ট করতে হলো । লোকটি দেখে বোঝাই যাচ্ছিল যে তার অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয় । আমাদের দেশে এরকম ঘটনা প্রায়ই দেখা যায় । কিন্তু বেশ কিছুদিন ফিনল্যান্ডে থাকার সুবাদে পার্থক্যটা খুবই চোখে পড়ল । এরকম শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষজন বা পেরাম্বুলেটারে বাচ্চাকে নিয়ে মায়েদের বাসে , ট্রামে বা ট্রেনে উঠতে ফিনল্যান্ডে কোন কষ্টই করতে দেখিনি । কারও সাহায্য ছাড়া যেকোন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষকে  একা একা বাসে , ট্রামে বা ট্রেনে চলাফেরা করতে পারে । কেননা তাদের কথা সরকার চিন্তা করে । বাস , ট্রাম বা ট্রেনের দরজা এতটাই নীচে থাকে বা স্টপেজ আসলে এতটাই নীচে নামিয়ে দেওয়া হয় যাতে পেরাম্বুলেটারে  বাচ্চাকে নিয়ে মায়েদের, বয়স্ক মানুষদের , শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের  উঠতে কোন কষ্টই হয় না । এছাড়াও শারীরিক প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক মানুষদের জন্য থাকে একটা ছোট ব্যাটারি চালিত গাড়ি যাকে বলা হয় electric wheelchair scooter for elderly users । একটা মানুষের বসতে যতটা জায়গা লাগে ততটাই জায়গা নেয় গাড়িটি যেটা নিয়ে তাদের কোথাও যেতে কোন অসুবিধা হয়না । এমনকি মলে গিয়ে তাদেরকে বাজার করতেও দেখেছি কারও সাহায্য ছাড়াই । বাসে , ট্রামে বা ট্রেনে ঐ  চার চাকার ছোট গাড়ি নিয়ে খুব সহজেই সফর করা যায় । ভেরাভল স্টেশনে বসে ভাবছিলাম আমাদের দেশে কেন এমনটি হয়না । কারও সাহায্য ছাড়া আমাদের দেশে শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের চলাফেরা করা বাস্তবে খুবই কঠিন । শুধু শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ কেন বয়স্ক মানুষদেরও খুবই কষ্ট হয় । বাস , ট্রাম এবং ট্রেনের সিঁড়ি আর একটু নিচু করা বা স্টপেজ আসলে নীচে নামিয়ে দেওয়া যায়না কি ?

Leave a comment