শহরের রাস্তায় যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন বা যাদের রাস্তার পাশে দোকান বা বাড়ি রয়েছে তারা সবাই মাত্রাতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানোর আওয়াজে শারীরিক বা মানসিকভাবে শিকার হচ্ছেন না , সেটা কেউ জোড় দিয়ে বলতে পারবেন না । অনেকেই আজ বাধ্য হয়ে এই শব্দ দূষণের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন । মূলত নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে এই হর্ন তৈরি করা হলেও, আসলে এখন হর্নটি রাগ ও অস্থিরতার প্রকাশ বেশি পাচ্ছে । হর্নের আওয়াজ রাস্তার শান্তি বিঘ্নিত করছে এবং শব্দ দূষণ তৈরি করছে । কিন্তু আমরা কি সবাই জানি যে এই শব্দ দূষণের ব্যাপারে ইএনটি চিকিৎসকদের বক্তব্য কি ? ওনাদের মতে ‘‘৭০ থেকে ৮০ ডেসিবেলের উপরে হর্নের আওয়াজ বা কোনও শব্দ নিয়মিত শুনলে কানের ভিতরের নার্ভগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শ্রবণ শক্তি হারিয়ে বধিরও হয়ে যেতে পারেন কেউ কেউ। এই নার্ভ এক বার নষ্ট হয়ে গেলে আর ঠিক হয় না। এছাড়াও কানের সামনে টানা জোরে শব্দ হলে মেজাজ খিটখিটে, রক্তচাপের বৃদ্ধি-সহ নানা সমস্যা হয়।” প্রতিনিয়ত গাড়িচালকদের অসচেতনার ফলে শব্দ দূষণের শিকার হছে শহরের অগুনতি মানুষ । অথচ সভ্য দুনিয়ায় রাস্তায় হর্ন বাজানোর অর্থ বিপদসংকেত অথবা গালি দেয়া বুঝায়। সেখানে কেউ কোন জরুরি বিপদে পড়লে হর্ন বজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বা কেউ ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে পাশের ড্রাইভার তাকে হর্ন দিয়ে সতর্ক করে দেন। সাধারণত: এটাকে গালি দেয়া বুঝায়! উন্নত বিশ্বের রাস্তায় তাই ইচ্ছে করে কেউ হর্ন বাজায় না । আর আমাদের এখানে ট্রাফিক সিগনালে গাড়ি দাড়িয়ে থাকলেও পিছন থেকে প্রায় বেশীরভাগ গাড়িই অহেতুক হর্ন বাজায় যদিও জানে হর্ন বাজালেও তারা যেতে পারবে না ।আবার এটাও দেখা যায় যে কিছু কিছু গাড়ি রাস্তায় চলতে চলতে হর্ন বাজিয়েই চলেছে । এর ফলে যে কত মানুষ ধীরে ধীরে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হচ্ছে তার খোজ কে রাখে । আমরা কি জানি মিজোরামের রাজধানী এবং প্রধান শহর আইজলে কোনোভাবেই হর্ন বাজানোর সুযোগ নেই। আইন ভঙ্গ করলে গুণতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা। এটাই ভারতের একমাত্র হর্নবিহীন শহর। মিজোরাম যদি পারতে পারে তাহলে ভারতের বাকি শহর কেন পারবে না ? এই সমস্যার হাত থেকে পরিত্রান পেতে কঠোর আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন । যতটা জানি , দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিধি অনুযায়ী প্রকাশ্যে ৪৫ ডেসিবেলের উপরে শব্দ করা বা হর্ন বাজানোর নিয়ম নেই। কিন্তু কে শুনছে কার কথা ? ট্রাফিক বিভাগের এক আধিকারিকের মতে, গাড়ি চালকদের মধ্যে ধৈর্যের অভাব দিন দিন বাড়ছে যার ফলে প্রায়ই দেখা যায় জ্যাম হলেও তারস্বরে হর্ন বাজিয়ে আগে যাওয়ার সবাই চেষ্টা করে ।কিন্তু আমাদের সবার স্বার্থে এর প্রতিকার হওয়া খুবই জরুরী । শুনেছি রাস্তায় আওয়াজ মাপতে পারে এমন ক্যামেরা বেড়িয়ে গেছে । কোন গাড়ি অপ্রয়োজনে জোরে হর্ন বাজালে এই ক্যামেরার মাধ্যমে তা ধরা সম্ভব হবে। সাউন্ড-অ্যাক্টিভেটেড ক্যামেরায় সেন্সর থাকবে যেগুলো সক্রিয় হবে যখন শব্দের মাত্রা একটি সীমা অতিক্রম করবে। যে একবার ট্রিগার হয়ে গেলে, ক্যামেরাগুলি গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের একটি পরিষ্কার ছবি তুলে নেবে। অনেক ধরনের ক্যামেরা তো রাস্তায় লাগানো আছে , কিন্তু এ ধরনের ক্যামেরা এখনও শহরের সব রাস্তায় লাগানো নেই কেন ? আমাদের দেশে সবাইকে সচেতন করে এই অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানো বন্ধ করতে বহু বছর লেগে যাবে । তার থেকে কঠোর হাতে জরিমানা হোলে অনেক মানুষ বিশেষ করে বয়স্কদের কিছুটা স্বস্তি হবে । যতদিন না হর্নের বাঁদরামি বন্ধ করা না যাচ্ছে ততদিন হর্নের এই কর্কশ আওয়াজ পরিবর্তন করে কোন মিষ্টি সুরের হর্ন ব্যবহার করা যায় না কি ? সবার কাছে অনুরোধ আসুন , আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে এই মারাত্মক ব্যাধির বিরুদ্ধে ভেবে দেখি ।
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos