কদিন আগে আমরা তিনজন ওয়াশিংটন রাজ্যের অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্কের রেইনফরেস্টের মধ্যে দিয়ে গাড়ী করে যেতে যেতে দুচোখ ভরে ঘন জঙ্গল দেখছিলাম । এ অঞ্চলটাতে খুব ভাল বৃষ্টি হয় বলে এই জঙ্গলকে রেইনফরেস্ট বলে । তাই ভাবছিলাম এখানে এত গাছ তাইকি এত বৃষ্টি হয় নাকি বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হয় বলেই এখানে এত গাছ হয়েছে । গাছের জন্য বৃষ্টি, নাকি বৃষ্টির জন্য গাছ ? বইতে পড়েছি আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে সাহারা মরুভূমিতে প্রচুর গাছপালা উৎপন্ন হতো, মাঠে বিচরণ করতো পশুপাখি, জীবজন্তু। কিন্তু, কালের বিবর্তনে উর্বর বসবাসযোগী এলাকা হঠাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের অভাবে পুরো সাহারা অঞ্চল মরুভূমিতে পরিনত হয়ে যায়। এখনও সেখানে বৃষ্টি হয় কিন্তু পরিমাণ খুবই কম । বৃষ্টি আছে বলেই এখনও পৃথিবীটা শস্য শ্যমলায় পরিপূর্ণ । বৃষ্টি না থাকলে সমগ্র পৃথিবীটা আজ মরুভূমিতে পরিণত হত । পৃথিবীর বুকে বৃষ্টিপাত আমাদের সকলের জীবনে কি দারুণ আশীর্বাদ সেটা আমরা সকলেই অনুভব করতে পারি । ছোটবেলা থেকেই আমরা বৃষ্টি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানি যে পৃথিবী পৃষ্ঠের জলাধার থেকে সূর্যতাপে জল বাষ্পীভূত হয়ে উপরে ওঠে যায় এবং তা হাল্কা হওয়ার কারনে বাতাসের মাধ্যমে ভেসে বেড়ায়। এই ভেসে বেড়ানোর সময় কোন এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা কমে গেলে সেই বাষ্পীভূত জল যা মেঘের আকারে ভেসে বেড়াতো তা ঘনীভূত হয়ে পুনরায় জলে রূপান্তরিত হয়ে বৃষ্টির আকারে পৃথিবীতে নেমে এসে বৃষ্টিপাত ঘটায়। গাছের সাথেবৃষ্টির একটা সম্পর্ক আছে ঠিকই কিন্তু গাছ নিজেই সরাসরি বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে না, তবে তারা স্থানীয় জলবায়ুকে প্রভাবিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।যেমন গাছ তাদের শিকড়ের মাধ্যমে মাটি থেকে জল টেনে পাতায় নিয়ে যায়। তারপর এই জল পাতা থেকে জলীয় বাষ্প হিসাবে বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ নিজেকে ঠান্ডা করতে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যেমন ঘাম আমাদের শরীরকে শীতল করে ঠিক তেমনি ।আর বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়ার সাথে সাথে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ে যা মেঘের গঠন হতে সাহায্য করে । আর তারপরই বৃষ্টিপাত হয় যখন স্যাচুরেটেড বায়ু বৃদ্ধি পায়, ঠান্ডা হয় এবং বৃষ্টিতে ঘনীভূত হয়।তাই বলা যায় গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি স্থানীয় বৃষ্টিপাতের ধরণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র বৃক্ষ রোপণই বৃষ্টিপাতের তাৎক্ষণিক বৃদ্ধির নিশ্চয়তা নাও দিতে পারে, তবে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা অনুশীলনে বনায়নের প্রচেষ্টাকে একীভূত করা সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় জলবায়ু পরিস্থিতিতে ইতিবাচকভাবে অবদান রাখতে পারে।এটি লক্ষ করা অপরিহার্য যে গাছ এবং গাছপালা স্থানীয় বৃষ্টিপাতের ধরণকে প্রভাবিত করতে পারে, তবে তাদের প্রভাব নির্দিষ্ট অঞ্চল বা মাইক্রোক্লিমেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে। সামগ্রিক জলবায়ু, ভৌগলিক অবস্থান, বিরাজমান বায়ুর ধরণ এবং বৃহৎ জলাশয়ের সান্নিধ্যের মতো কারণগুলিও স্থানীয় বৃষ্টিপাতের ধরণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তাই এটা জোড় দিয়ে বলা যায় যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৃষ্টি বেশি নির্ভর করে জলের উপর । বৃষ্টি যদি না থাকতো তাহলে কোন গাছই থাকতো না । তাই আমার মনে হয় সামগ্রিকভাবে এটা বলা যেতেই পারে যে ‘বৃষ্টির জন্য গাছ’ । পৃথিবীর বুকে জলের পরিমাণ যত কমবে তত কমবে বৃষ্টির পরিমাণ , গাছের পরিমাণ । পৃথিবীর বুকে যে পরিমাণ জল আছে সেটা যদি আমরা ধরে রাখতে না পারি তাহলে ধীরে ধীরে সবুজ পৃথিবীটা একদিন পরিণত হবে মরুভূমিতে ।তাই আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা করা উচিৎ যে এক ফোঁটা জলও নষ্ট করা চলবে না । প্রতিটা জলাশয়কে বাঁচিয়ে রাখতে হবে । আবর্জনা ফেলে নষ্ট হতে দেবো না কোন জলাশয়কে ।
Please visit my You tube channel : https://www.youtube.com/cha…/UCwI8JNW7FmslSEXnG6_GAgw/videos