আমাদের চোখে এস্তোনিয়ার পার্নু

আমাদের চোখে এস্তোনিয়ার পার্নু

১৭ই এপ্রিল থেকে ১৯শে এপ্রিল আমদের বউমাকে সুইডেন যেতে হবে অফিসের কাজে ।তাই ছেলে বলল যে চলো এই তিনদিন আমরাও ঘুরে আসি এস্তোনিয়ার পার্নু ও লাটভিয়া থেকে । এখন তো work from home , সুতরাং ও হোটেল থেকে অফিসের কাজ করে নেবে । আর আমরা  পার্নুতে সমুদ্রের ধারে ঘুরে বেড়াবো । বেড়াতে যাওয়ার জন্য আমরা এক পায়ে খাঁড়া । ছেলে বলল বাড়ির থেকে গাড়ি নিয়ে যাবে । জাহাজে করে গাড়িও আমাদের সাথে বাল্টিক  সাগর পার হবে ।তারপর পুরোটা গাড়ি করেই ঘুরবো । এস্তোনিয়া ও লাটভিয়া রাশিয়ার একদম পাশে । 50  বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ছিল । ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এস্তোনিয়ার ও লাটভিয়া স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয় ।  এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিনে আমরা দু-দুবার গেছি , তাই এবার যাচ্ছি এস্তোনিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর পার্নুতে ।

১৬ তারিখ অর্থাৎ রবিবার দুপুর ১২ টায় খাওয়া দাওয়া সেরে গাড়ি নিয়ে আমরা চললাম জাহাজ ধরতে । দশ তলা জাহাজ । গাড়ি নিয়ে সিকিউরিটি চেক করিয়ে সোজা উঠে গেলাম জাহাজের চার তলায় । তারপর গাড়ি রেখে আমরা গেলাম আট তলায় । জাহাজ তো নয় একটা চলন্ত মল(Mall)।আমরা আট তলায় একটা কফি বারে গিয়ে বসলাম । সামনে উন্মুক্ত গালফ অফ ফিনল্যান্ড । আড়াই ঘণ্টার যাত্রা । এরকম জাহাজ আমরা আগে কয়েকবার চড়েছি । তাই আর বেশি কৌতুহল দেখালাম না । বিকাল সাড়ে পাঁচটায় জাহাজ থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে আসলাম এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিনে । যেহেতু তালিন আমাদের আগে দুবার ঘোরা হয়ে গেছে , তাই আমরা সোজা রওনা হলাম এস্তোনিয়ার রাজধানী তালিন থেকে 128 কিলোমিটার দক্ষিণে এস্তোনিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর পার্নুর দিকে । পার্নু বাল্টিক সাগরের পূর্ব উপকূলে দক্ষিণ-পশ্চিম এস্তোনিয়ায় একটি মনোমুগ্ধকর উপকূলীয় শহর। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ আমরা পার্নুর হোটেলে পৌছালাম ।তখনও সূর্যের  আলো রয়েছে ।হোটেল থেকে বেড়িয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেলাম একটা জর্জিয়া হোটেলে রাত্রের আহারের জন্য । ছোট শহর , বাইরে ঠাণ্ডা তখন ৮ ডিগ্রির মতো । তাই ধারণা করেছিলাম খুব বেশিক্ষণ শহরের হোটেল খোলা থাকবে না ।

পরেরদিন হোটেল থেকে complimentary breakfast খেয়ে আমরা দুজন বেড়িয়ে পড়লাম পায়ে হেটে হোটেলের কাছেই সমুদ্র সৈকতে । ছেলে হোটেলে বসে অফিসের কাজ করতে লাগলো । আর আমরা পৌঁছে গেলাম পার্নুর সবচেয়ে জনপ্রিয় আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি  পার্নুর সমুদ্র সৈকতে , যা শহরের উপকূল বরাবর কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।শান্ত সমুদ্র । বিশাল দিগন্ত জুড়ে স্বচ্ছ নীল জলরাশি । অনেকক্ষণ সৈকতে কাটিয়ে আমরা পায়ে হেটে শহর ঘুরতে বেরলাম । ছোট শহর, পায়ে হেটে সুন্দর ঘোরা যায় ।হাটতে হাটতে পৌঁছে গেলাম আধুনিক শহরের বাইরে পুরাতন বা  মধ্যযুগীয় সময়ের শহর দেখতে যেটি এখন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট । দেখলাম অনেক ঐতিহাসিক ভবন, জাদুঘর এবং গ্যালারী রয়েছে।রয়েছে অনেক রেস্টুরেন্ট , তার মধ্যে দেখলাম একটি নেপালি রেস্টুরেন্ট যেখানে ভারতীয় খাবারও পাওয়া যায় ।এখানে বিকেলের আলো অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকে । তাই ছেলেও অফিস সেরে আমাদের সাথে যোগ দিতে পারলো ।আমরা তিনজন মিলে পার্নু শহরটাকে একবার পাক দিয়ে পৌঁছে গেলাম পার্নু নদীর তীরে । শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে পরিষ্কার পার্নু নদী যেটা শহরটাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে । কয়েক শতাব্দী ধরে পার্নু স্পা চিকিত্সার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান ।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক আকর্ষণ ছাড়াও, পার্নু সারা বছর জুড়ে অসংখ্য উৎসব এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যার মধ্যে রয়েছে পার্নু মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, পার্নু ইন্টারন্যাশনাল ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং পার্নু বিচ ভলিবল টুর্নামেন্ট।আগামীকাল যাব ইউরোপের আরেকটি দেশ লাটভিয়া ।

28 thoughts on “আমাদের চোখে এস্তোনিয়ার পার্নু

  1. আমাদের অভ্যাস থেকে বিমুক্ত জায়গা দেখা মানেই ভ্রমণ। তোমার লেখা ও ভ্রমণের অপরূপ ছবি আমাদেরও ভ্রমণের স্বাদ মিটিয়ে দেয় -এ বড় কম কথা নয়! যে মুহূর্তগুলো পরিবারসহ উপভোগ করছো তা অনন্যসাধারণ জানবে! আজ থেকে মাত্র সাতদিন পরেই সব স্মৃতির সেফ ডিপোজিট ভল্টে সযত্নে রক্ষিত হয়ে থাকবে- তখন দেখবে – আরও ভাল লাগবে সেই রোমন্থন! তোমার ইতিবাচক জীবনযাত্রার ছাপ তোমার লেখায় পাই! পরিবারসহ ভ্রমণের অপরূপ আনন্দ -তোমার কাছ থেকে শিক্ষনীয়! প্রাত্যহিক জীবন থেকে ‘সময়’ বার করে অসাধারণভাবে সময়কে কাজে লাগানো ও উপভোগ করা প্রশংসনীয়! উদ্যম ও ইচ্ছে ছাড়া এ জিনিস হয়না -তোমার মধ্যে যেটা আছে বহুল পরিমাণে! আরও লেখ,পারলে ভ্রমণের উপর তোমার সব লেখার ছবিসহ একটা সংকলন বার কর। ঐ টাই থাকবে অমলিন হয়ে!

    Liked by 1 person

    1. সব সব সময় তোমার কাছ থেকে এরকম ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক লেখাই আশা করি । তোমার উৎসাহ আমাকে সবসময় উৎসাহিত করে ।খুব ভাল থেকো আর অনেক অনেক ভালবাসা নিও ।

      Liked by 1 person

  2. Mamata Sengupta
    খুব ভাল লাগল দাদা, আপনার লেখার মধ্য দিয়ে ঘুরে এলাম। এক কথায় অসাধারন।

    Like

  3. Tapasi Sengupta
    Bha bes bhaloe ghurcho khoob enjoy karo .lekhagulo Porte bhaloe lege. Bhalo theko .Babai Tuban o boumake Nabobarsho r anek adore bhalobasa deo.

    Like

  4. Abhijit Bhattacharyya
    আপনার বর্ণনা চমত্কার.
    মনে হচ্ছে আমরা শারীরিকভাবে সে দেশের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি।
    ভ্রমণ খুব উপভোগ্য হোক। সবাই সুস্থ থাকুন আনন্দে থাকুন।🌹🌹🌹❤️

    Like

  5. Krishnasis Chatterjee
    এই দেশের সম্বন্ধে তোর লেখার আর ছবির মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম। খুবই ভালো লাগলো। ভালো ভাবে ঘুরে আয়। ভালো থাকিস সুস্থ থাকিস।👌👌

    Like

  6. Sunil Kumar Kundu
    তোমার ভ্রমণ কাহিনী পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে যেন আমি ও ঐসব সুন্দর জায়গায় আছি। তোমার লেখনশৈলী বেশ প্রাণবন্ত আর সাথে ছবিগুলো খুবই ভালো।

    Like

  7. Samir Sikdar
    দাদা,
    বেশ লিখেছেন। ওদেশের সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকার বিষয় কিছু তুলে ধরলে ভালো হতো।

    Like

  8. Sanjoy Sarkar
    আপনার চোখ দিয়ে অনেক কিছু দেখলাম। আরো ঘুরুন আরো লিখুন খুব ভালো থাকুন।

    Like

  9. Apurba Neogi
    Beautiful Family photographs. Enjoy the journey. We are also enjoying your beautiful descriptions of the wonderful places you are visiting. your powerful writing is making us feel that we are also visiting the said attractive places So nice of you.

    Like

  10. Partha Pratim Dasgupta
    প্রতিটা ভ্রমণ-বৃত্তান্ত এত নিঁখুদ যে বিদেশ কখনো কখনো দেশ হ’য়ে ওঠে। সঙ্গের ছবিগুলো মনোমুগ্ধকর !

    Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s