নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও কৈখালী  

নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম ও কৈখালী  

গত পরশু অর্থাৎ ০৭/০২/২০২৩ তারিখ লিপিকার জন্মদিন উপলক্ষে আমরা সকাল সকাল ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগর থানার কাছে নিমপীঠে ও মাতলা নদীর তীরে কৈখালীতে । গড়িয়া থেকে নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রমের পথের দূরত্ব ৪১ কিমি । গাড়িতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা । সুন্দর ঝকঝকে রাস্তা । আর নিমপীঠ থেকে কৈখালীর দূরত্ব ৩২ কিমি , গাড়িতে সময় লাগে ৪০ মিনিট মতো । যারা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নিমপীঠ যাবে তাদের নামতে হবে জয়নগর-মাজিলপুর হল্ট স্টেশনে। ওখান থেকে অটোতে , ভাড়া জন প্রতি ১৫ টাকা । নিমপীঠ থেকে অটো রিজার্ভ করে কৈখালী যাওয়া যায় , ভাড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ।

স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে, স্বামী বুদ্ধানন্দজী মহারাজ ১৯৬০ সালে এই নিমপীঠে রামকৃষ্ণ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।অপূর্ব সুন্দর এই মন্দির । নানা ধরনের রংবাহারি ফুল মন্দির প্রাঙ্গণকে সুশোভিত করে রেখেছে । রামকৃষ্ণ আশ্রমের এই শান্ত পরিবেশ মনকে দেয় এক অপার শান্তি । মন্দির প্রাঙ্গনে প্রতিদিন দুপুর সাড়ে বারোটায় মন্দির বন্ধ হওয়ার পর একটা বড় হল ঘরে বেঞ্চ – টেবিল সহযোগে ১০ টাকার বিনিময়ে পেট ভড়ে ভোগ খাওয়ার বন্দোবস্ত আছে । আশ্রমের অফিস ঘরে কুপন কিনতে পাওয়া যায় । আমরা গত পরশু গরম গরম ভাত, ডাল , দুই রকমের তরকারী , চাটনি , পায়েস ও মিষ্টি সহযোগে আহার করেছিলাম । এই মন্দিরের পিছনে একটু দূরে রয়েছে সারদা মায়ের মন্দির ও সারদা মায়ের নামে উচ্চমাধ্যমিক মেয়েদের আবাসিক স্কুল । এই নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রমের হাত ধরেই নানা উন্নয়ন মূলক কাজ দীর্ঘ সময় ধরে হয়ে আসছে। যেমন – কৃষক প্রশিক্ষণ, স্বনির্ভর দলের প্রশিক্ষণ, মৌমাছি প্রতিপালন, রকমারি ফুলের চাষ, মাশরুম চাষ, মাছের চাষ, রঙিন মাছের চাষ, বিভিন্ন প্রযুক্তিমূলক ও শিক্ষামূলক প্রশিক্ষণ সহ আরও অনেক কিছু। এই আশ্রমের কাছেই আছে সরকারী হাসপাতাল, ইন্দ্রিরা গান্ধী কমিউনিটি হল , বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, আই টি আই কলেজ, সমবায় অফিস, ডেয়ারি ফার্ম ।অনেকটা সময় এই আশ্রমের মনোরম পরিবেশে সুন্দরভাবে কাটিয়ে আমরা গেলাম সুন্দরবনের কুলতলি বিধানসভার অন্তর্গত বিশাল মাতলা নদীর তীরে কৈখালীতে ।

কৈখালী পৌছাতেই নদীর ধারে বাদিকে দেখলাম সরকারী পর্যটক নিবাস যার পরিচালনা করে নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম । ভাড়া ৬০০ টাকা প্রতিজন খাওয়া নিয়ে, মোট 20 টি রুম আছে। আর ডানদিকে রয়েছে কৈখালীর রামকৃষ্ণ আশ্রম । মাতলা নদীর চেহারা এখানে বিশাল । এপার – ওপার দেখা যায় না বললেই চলে । ডানদিকে সাগর আর বাদিকে ক্যানিং , এই বিস্তীর্ণ সুন্দর বন এলাকা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই নদী ।কখন শান্ত , কখন আশান্ত , দারুন স্বেচ্ছাচারী । দেড় ঘণ্টা ৯০০ টাকার বিনিময়ে বোটে করে মাতলা নদীবক্ষে বিহার করতে করতে দেখলাম নদীর চরে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখির সমারহ । আমরা যখন নদীবক্ষে, সূর্য তখন ঘরে ফেরার তোড়জোড় করছে । গোধূলি আলোর সেই অপরূপ রূপে স্রোতস্বিনী মাতলা আমাদের মুগ্ধ করেছে বারবার । পর্যটকদের তেমন ভিড় না থাকায় কৈখালীর গ্রাম্য পরিবেশে বিরাজ করছিল এক সুন্দর শান্ত নির্জনতা । মন যেতে নাহি চায় তবুও যেতে হয় । তাই একগুচ্ছ সুন্দর স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসলাম নিজগৃহে ।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s