আমাদের চোখে ঝাড়গ্রাম ও খড়গপুর আই আই টি

আমাদের চোখে ঝাড়গ্রাম ও খড়গপুর আই আই টি

২০২২ সালের শেষদিনটাকে ও ২০২৩ সালের প্রথম দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে বেড়িয়ে পড়লাম ৩১ তারিখ ভোরে, লক্ষ্য ঝাড়গ্রাম ও খড়গপুর আই আই টি ।দ্বিতীয় হুগলী সেতুর উপর দিয়ে নবান্নকে ডান হাতে রেখে আমাদের গাড়ি এসে দাঁড়াল গড়িয়া থেকে ৭৫ কিমি দূরে কোলাঘাটে । সময় নিল দেড় ঘণ্টা । প্রাতরাশ সেরে আমরা সোজা এগিয়ে চললাম খড়গপুর , ডেবরা পার করে লোধাশুলি থেকে ডানদিকে বেঁকে গড়িয়া থেকে ১৮৫ কিমি দূরে ঝাড়গ্রামে । সময় লাগলো চার ঘণ্টা । দক্ষিণবঙ্গের যে ক’টি প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘেরা এবং আকর্ষণীয় জায়গা রয়েছে তার মধ্যে একটি হোল  ঝাড়গ্রাম। প্রথমে ঝাড়গ্রাম শহরে না ঘুরে সোজা চলে গেলাম ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৫০ কিমি দূরে বেলপাহাড়ি ছাড়িয়ে খান্দারানি লেক । গাডরাসিনি পাহাড়ের  পাদদেশে সবুজ গাছপালা দ্বারা বেষ্টিত পরিষ্কার টলটলে জলে ভরা বিশাল এক জলাশয় । দেখলাম শান্ত এই নিরিবিলি পরিবেশের আকর্ষণে প্রচুর পরিযায়ী পাখি এখানে ভিড় জমিয়েছে । বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে চলে গেলাম কাছেই মোরামের লাল মাটির পথ ধরে ঘাঘরা জলপ্রপাত দেখতে । নদীর জল বয়ে চলেছে পাথরের ওপর দিয়ে ধাক্কা খেতে খেতে ।এটি একটি ভাল পিকনিক স্পট । প্রচুর মানুষ এসেছে পিকনিক করতে । তারপর ফিরে আসলাম ঝাড়গ্রাম শহরে আর পৌঁছে গেলাম ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি দেখতে ।অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে এখানে , তারমধ্যে আছে উত্তম কুমারের ‘সন্ন্যাসী রাজা’ । বর্তমানে এর একটি অংশ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যাবস্হাপনায় হোটেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । যারা এই হোটেলে থাকে তারাই শুধু রাজবাড়ির অন্দরে প্রবেশ করতে পারে । বাকি পর্যটকদের ভিতরে প্রবেশ করার বা রাজবাড়ির হোটেলে খাওয়ার  অনুমতি নেই ।যদিও আমরা এখানে থাকিনি কিন্তু আমরা অনুমতি পেয়েছিলাম রাজবাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার ও রাজবাড়ির হোটেলে খাওয়ার কেননা আমাদের এক নিকট আত্মীয়ের সাথে ভাল পরিচয় ছিল বর্তমান রাজার বংশধরের । এরপর আমরা দেখে নিলাম শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে ডুলুং নদীরতীরে গভীর জঙ্গলের মধ্যে কনকদুরগা মন্দির । দেবী এখানে অশ্বারোহিনী চতুর্ভূজা এবং মূর্তিটি অষ্টধাতুর । কনকদুরগা মন্দিরের কাছেই রয়েছে চিল্কিগড় রাজবাড়ি। ঐতিহাসিকতার দিক থেকে কনক দুর্গা মন্দির আর এই চিল্কিগড় রাজবাড়ী খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিল্কিগড় রাজবাড়ি থেকে আসার পথে দাঁড়ালাম কেন্দুয়াতে । এটি একটি পাখীরালয়। প্রচুর পরিযায়ী পাখির ভিড় হয় এখানে। কয়েক মাস এখানে থাকে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা হয়। তারপর তারা চলে যায়।এইসব দেখতে দেখতে সূর্য ডুবে গেল আর আমরা রওনা হলাম আই আই টি , খড়গপুরের দিকে । আত্মীয়দের সান্নিধ্যে বর্ষশেষের দিনটা উৎযাপন করতে ।

পরের দিন অর্থাৎ বছরের প্রথম দিন সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম ২১০০ একর জায়গা নিয়ে ১৯৫১ সালে স্থাপিত এই খড়গপুর আই আই টি দর্শনে । প্রায় ২২০০০ লোকের বাস এই ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে। এই ক্যাম্পাসে আছে  গেস্ট হাউস, হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, স্কুল, বাজার, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি মোট কথা বাসিন্দাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনের সবকিছু রয়েছে এই ক্যাম্পাসের ভিতর । এছাড়া এখানকার আরেকটা বড় আকর্ষণ হল হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প। ১৯৩০ সালে এই হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প স্থাপিত হয়। ১৯৩১ সালে সন্তোষ কুমার মিত্র ও তারকেশ্বর সেনগুপ্ত নামে দুই স্বাধীনতা সংগ্রামী এই ক্যাম্পেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সুভাষচন্দ্র বসু তাদের মৃতদেহ সংগ্রহ করতে এখানে আসেন।অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই খড়গপুর আই আই টি ক্যাম্পাসের মধ্যে । অনেকক্ষণ সময় নিয়ে সবাই মিলে ক্যাম্পাসের চারিদিক ঘোরা শেষ করে আত্মীয়দের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দারুন সুন্দর দুটো দিন কাটিয়ে ফিরে আসলাম নিজ গৃহে ।  

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s