রানীক্ষেত, কৌসানি, বৈজনাথ / KOUSANI, RANIKHET, BAIJNATH

পরের দিন অর্থাৎ ১০/১০/২০২২ তারিখ সকালের প্রাতরাশ সেরে আমরা নৈনিতালকে বিদায় জানিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই রওনা হলাম রানীক্ষেতের উদ্দেশ্যে । রানীক্ষেত , নৈনিতাল থেকে ৫৮ কিমি । যেতে লাগে ২ ঘণ্টা মতো  । পথে পড়লো কাইঞ্চি ধাম যেটা একটি বিখ্যাত হনুমান মন্দির 1960 সালে নিম করোলি বাবা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।বাইরে তখনও অঝোরে বৃষ্টি পড়ে চলেছে । আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে রানীক্ষেতের দিকে ।রানীক্ষেত একটি শৈল এবং সেনানিবাস শহর যার  উচ্চতা  সমুদ্রতল থেকে ১,৮৬৯ মিটার নৈনিতালের থেকে কিছুটা কম।যখন আমাদের গাড়ি রানীক্ষেত এসে পৌছাল তখন বৃষ্টি বেশ কিছুটা ধরেছে । রাস্তায় পড়লো বিশাল গলফ্‌ কোর্স । যেখানেই ইংরেজরা থেকেছে সেখানেই তৈরি হয়েছে একটা করে গলফ্‌ কোর্স।এছাড়াও পথে পড়ল কালিকা তথা কালীর মন্দির। রানীক্ষেত থেকে কৌসানি আরও ৫৮ কিমি তার মানে আরও দু ঘণ্টা । রানীক্ষেত থেকে কৌসানির দিকে এগোতেই আকাশটা হঠাৎ করে পরিষ্কার হয়ে গেল । চারিদিক রোদের আলোয় ঝলমলিয়ে উঠল । আর আমরা সবাই আনন্দে গাড়ির থেকে নিচে নেমে আসলাম । তিনদিন পর রোদ দেখার যে কি আনন্দ তা সবাইকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল । সবার হাতের ক্যামেরা গর্জে উঠলো । এগিয়ে চললাম কৌসানি দিকে । অবশেষে আমরা ঝকঝকে আবহাওয়ার মধ্যে এসে পৌছালাম পর্যটকদের কাছে ভারতের ছোটোখাটো সুইৎজারল্যান্ড এই কৌসানিতে । সোমেস্বর, গারুর, কাত্যুরি উপত্যকা ঘেঁষে পাইন গাছে বেষ্টিত এই হিল স্টেশন যার উচ্চতা 1870 মিটার।আমাদের গাড়ি এসে দাঁড়ালো হোটেল সাগরের সামনে । হোটেলের ঘরে পৌছাতেই জানলা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি চোখের সামনে ত্রিশুল, নন্দা দেবী এবং পঞ্চচুল্লির  মতো হিমালয়ের চূড়াগুলি। যেন হাত বাড়ালেই ধরতে পারবো । পড়ন্ত আলোয় পঞ্চচুল্লির চূড়াগুলি মনে হচ্ছিল জ্বলছে ।চোখের সামনে ভারতবর্ষের ২য় উচ্চতম শৃঙ্গ নন্দা দেবীকে এত পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবো সেটা ছিল আমার কল্পনার অতীত । বারান্দা থেকে যেতে ইচ্ছাই করছিল না । মনে হচ্ছিল শুধু তাকিয়েই থাকি । ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামলো । দুদিন আগে পূর্ণিমা গেছে তাই বিশাল চাঁদ উঠলো আকাশে ।চাঁদের আলোয় নন্দা দেবী, ত্রিশুল আরও নাম না জানা পিকের যে মনোরম দৃশ্য চোখের সামনে ফুটে উঠল তা সারা জীবন মনে থাকবে । 
পরেরদিন প্রাতরাশ সেরে বেড়িয়ে পরলাম কৌসানি থেকে ১৬ কিমি দূরে বৈজনাথ শহরে গোমতী নদীর তীরে শিবকে উৎসর্গীকৃত একটি মন্দির দেখতে । প্রাচীন মন্দিরে মধ্যযুগীয় ভাস্কর্য সহ বিভিন্ন শৈলীর খোদাই করা চিত্র অলংকৃত হয়েছে।বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ফিরে আসলাম হোটেলে যেহেতু যাওয়ার সময় পথে দেখে নিয়েছিলাম কৌসানির শাল ফ্যাক্টরি ও চা বাগান । বিকাল বেলা একটা ছোট্ট ট্রেক করে অর্থাৎ পাহাড়ে হাঁটতে হাঁটতে চললাম অনাসক্তি আশ্রম বা গান্ধী আশ্রম দেখতে ।১৯২৯ সালে গান্ধি এসে এখানে কিছুদিন ছিলেন , তাই একে গান্ধী আশ্রমও বলে । ওপর থেকে হিমালয়ের ছুড়াগুলো খুব ভাল দেখা যায় । ওর আশেপাশে দেখলাম বেশ কিছু ভাল হোটেল আছে। ব্যস আমাদের কৌসানি ভ্রমন শেষ হোল । পরেরদিন মুন্সিয়ারি যাত্রা । 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s