বাগেশ্বর ও মুন্সিয়ারি / Bageshwar & Munsiyari

পরের দিন অর্থাৎ ১২/১০/২০২২ তারিখ সকালের জলখাবার খেয়ে চললাম সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২২০০ মিটার উঁচুতে মুন্সিয়ারিতে । পথে পড়লো গোমতী ও সরযূর সঙ্গমে পুণ্য শৈবতীর্থ বাগেশ্বর। রামায়নে সরযূ নদীর কথা পড়েছি , তাই চোখের সামনে সরযূ নদী দেখে মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠলো । বাগেশ্বর প্রাকৃতিক পরিবেশ, হিমবাহ, নদী এবং মন্দিরের জন্য পরিচিত ।বাগেশ্বর থেকে আরও ১২৬ কিমি অর্থাৎ প্রায় ৫ ঘণ্টার পথ মুন্সিয়ারি । পিথোরাগড় জেলার কুমায়ন অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত গৌরীগঙ্গার তীরে পঞ্চচুল্লির কোলে এই মুন্সিয়ারি।আমাদের গাড়ীগুলো ছুটে চলেছে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে । রোমাঞ্চকর যাত্রা ।  অনেক নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে রামগঙ্গা ।পথে পড়ল বিরথি ফলস । তারপর এই পথের সর্বোচ্চ উচ্চতায় প্রায় ৯৫০০ ফুট উপরে  কালামুনি টপে পৌছাতেই চোখের সামনে উদয় হোল পঞ্চচুল্লি যেন হাত বাড়ানো দূরত্বে। এরপর ধীরে ধীরে নামতে লাগলাম মুন্সিয়ারির দিকে । এই ছোট শহরটির গুরুত্ব সেই প্রাচীন কাল থেকেই। লবণ ও অন্যান্য সামগ্রী তিব্বতে রপ্তানি করা হত এবং তিব্বত থেকে বিভিন্ন রকমের ভেষজ ঔষধি ও পশম উল আমদানি করা হত। মুন্সিয়ারি জোহার ভ্যালীর মুখ্য পথ অর্থাৎ সদর দরজা। এই পথ দিয়েই মিলম, রালাম ও নামিক নামক তিন তিনটি গ্লাসিয়ারে পৌঁছনোর দ্বার। মিলম গ্লাসিয়ার থেকে উত্তরাখণ্ডের অন্যতম মুখ্য নদী গৌরিগঙ্গার উৎপত্তি, পরে জৌলজিবি নামক একস্থানে কালি নদীর সাথে মিশে যায়। বহু প্রাচীন কালে এই অঞ্চল ছিল মূলত: শোউকা/রঙ উপজাতির মুল উৎস, এই জনজাতির লোকজন ভুটিয়া নামেও সুপরিচিত। এই শতাব্দী পুরনো মানুষেরা তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্য করতেন। ১৯৬২ সালে ইন্দো-চিন যুদ্ধের পরই ভারত-তিব্বত সীমা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার একটু আগেই আমরা মুন্সিয়ারি পৌঁছে গেলাম ।হোটেলে পৌঁছেই  নন্দাদেবী, নন্দাকোট, রাজারম্ভার এবং পঞ্চচুল্লির মত শৃঙ্গের যে দৃশ্য দেখতে পেলাম , তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। শুনলাম ডিসেম্বর , জানুয়ারিতে এখানে বরফ পড়ে। পরেরদিন সকালে গেলাম নন্দাদেবী মন্দির, টেবিটান হেরিটেজ মিউজিয়াম (পাংতের মিউজিয়াম) দেখতে । নন্দাদেবী মন্দির থেকে পঞ্চচুল্লি খুব সুন্দর দেখা যায় । এখানে পাহাড়ের ঢালে পাইন, দেওদারের সবুজ সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। গ্রামছোঁয়া পাহাড়ের গায়ে চাষও হচ্ছে ধাপ কেটে অন্য পাহাড়ের মতো । ফিরে আসলাম হোটেলে । খাওয়া দাওয়া সেরে বসে রইলাম পঞ্চচুল্লির দিকে তাকিয়ে । কেননা পঞ্চচুল্লির বুকে সূর্যাস্তের রংবদলের দৃশ্য দেখার মতো। মুন্সিয়ারি ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না , কিন্তু তবুও যেতে হবেই। পরেরদিন যাব আলমোড়া ।শুধু একটাই দুঃখ থেকে গেল কারণ মোনালের দেখা পেলাম না , তবে রাস্তায় হিমালয়ান গ্রিফনের দেখা পেয়েছি । মোনাল উত্তরাখণ্ডের পাখি তৎসহ নেপালের রাষ্ট্রীয় পাখি।  

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s