নৈনিতাল ভ্রমন / Nainital tour

আমরা ৩০ জন পর্যটক গত ০৭/১০/২০২২ তারিখ হাওড়া স্টেশন থেকে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে রওনা দিলাম লালকুয়া এক্সপ্রেসে কুমায়ুনের উদ্দেশ্যে । পরেরদিন ১ ঘণ্টা দেরীতে অর্থাৎ সকাল ৮ টা নাগাদ পৌছালাম লালকুয়াতে । পাহাড়ের ঠাণ্ডা লালকুয়া অবধি এসে পৌঁছাইনি ঠিকই কিন্তু পাহাড়ের বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে এসে পৌছাল লালকুয়ার স্টেশনে । তার মধ্যেই চারটে টাটা সুমতে আমরা উঠে পড়লাম গন্তব্য নৈনিতাল।নৈনিতাল বাসস্ট্যান্ড থেকে আমাদের গাড়ি মলরোডে ঘুরতেই সামনেই দেখতে পেলাম ছবির মত পাহাড়ে ঘেরা নৈনিতাল লেক । মন ভরে গেল । নৈনিতাল সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২০৮৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল । তারই মধ্যে মল রোডের ঠিক ওপরে নৈনিতাল লেকের সামনে আমাদের গাড়ি এসে থামলো হোটেল শালিমারে । লালকুয়া থেকে নৈনিতাল পৌঁছাতে সময় লাগলো দুই ঘণ্টা মত । আমাদের হোটেল থেকে দেখা যাচ্ছিল আমাদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল পাহাড় আর তার পাদদেশে চোখের আঁকারের এক বিশাল লেক। বাইরে দারুণ বৃষ্টি । শুনলাম সারা উত্তরখণ্ড জুড়ে এই বৃষ্টির দাপট চলছে । চলবে আরও দুদিন । মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল । কেননা নৈনিতালে আমাদের দুদিনের প্রোগ্রাম । তারপর যাব রানিখেত হয়ে কৌশানি । বেড়াতে বেড়িয়ে ঘরে বসে থাকতে কার মন চায় , তাই ছাতা মাথায় বেড়িয়ে পড়লাম নৈনিতাল দর্শনে । বৃষ্টির দাপটের সাথে আমাদের ছাতা লড়াই করতে পারছিল না । তাই বাধ্য হয়েই কিনে ফেললাম রেইনকোট । মল রোডের বাঁদিকে লেক আর ডান পাশে দোকানের সারি । জমজমাট জায়গা । বৃষ্টির মধ্যেই অনেককে দেখলাম লেকের জলে নৌকাবিহার করতে । এটি বোটিং, পিকনিক এবং সন্ধ্যায় হাঁটার জন্য একটি আদর্শ স্থান। নৈনিতাল হ্রদ সাতটি ভিন্ন চূড়া দ্বারা বেষ্টিত । হ্রদটি দুটি স্বতন্ত্র অংশে বিভক্ত, উত্তরের অংশকে মল্লিতাল বলা হয় এবং দক্ষিণাঞ্চলকে তালিতাল বলা হয়। হ্রদটি সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। Boating Charges- 160 for half round for Row boat/ 210 for full round for Row boat / 210 per hour for Paddle boat। কাছেই রয়েছে উত্তরাখণ্ডের অন্যতম পূজনীয় ধর্মীয় স্থান নয়না দেবী মন্দির । নয়না দেবী মন্দির ভারতের 51টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি। রিকশা বা হেঁটে সহজেই যাওয়া যায়। আবহাওয়া খারাপ থাকায় নৌকায় চড়ে সূর্যাস্ত দেখা আমাদের হোল না । হোটেলে ফিরে সবাই মিলে চা আর  নাস্তার সাথে আড্ডা দিয়ে আনন্দ করে কাটালাম । পরেরদিন ব্রেকফাস্ট করেই বেড়িয়ে পড়লাম নৈনিতালের প্রধান আকর্ষণ সাতটি তাল দর্শনে যার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভিমতাল । সাতটি লেক হোল - Bhimtal, Sattal, Naukuchiatal, Khurpatal, Malwatal, Harishtal and Lokhamtal । সাত তালে সাতটি কোনা আর নৌকুচিতালে নয়টা কোনা ।আমরা যখন নৌকুচিতালে পৌছালাম তখন বৃষ্টিটা একটু ধরেছে । তাই আমরাও ওখানে নৌকাবিহারে নেমে পড়লাম । পাহাড়ের কোলে বিশাল লেক , ২০০ ফুটের উপর গভীরতা তাই নৌকাবিহার করতে বেশ রোমাঞ্চ লাগছিল । সবকটা লেক দেখে ফিরতে ফিরতে দুপুর হয়ে গেল ।বৃষ্টির দাপট আরও বাড়তে লাগলো । তাই বাধ্য হয়েই ফিরে আসতে হোল হোটেলে । আবহাওয়ার প্রতিকূলতা ও সময়ের অভাবে দেখা হয় নাই চক্ষু মিলিয়া  - টিফিন টপ, প্যাঙ্গোট এবং কিলবারি পাখি অভয়ারণ্য , নয়না পিক , ইকো কেভ গার্ডেন, Pt GB Pant High Altitude Zoo, গার্নি হাউস, স্নো ভিউ পয়েন্ট। ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখলাম । তবে না দেখার কষ্ট আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছিল উত্তরাখণ্ডের প্রায় সমস্ত তুষার আবৃত চূড়া আমাদের চোখের সামনে  পরিষ্কার হয়ে দেখা দিয়েছিল । হয়ত এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ উত্তরাখণ্ডের বাতাসের যত জলকণাকে পৃথিবীর বুকে নামিয়ে এনেছিল, তাই উত্তরাখণ্ডের প্রত্যেকটা চূড়া যেমন নন্দা দেবী( ভারতবর্ষের ২য় উচ্চতম শৃঙ্গ ) , নন্দা কোট , ত্রিশূল , পঞ্চচুল্লি , কামেট( ভারতবর্ষের ৩য় উচ্চতম শৃঙ্গ ), চউখাম্বা আমরা খুব ভালভাবে পরবর্তীকালে দেখতে পেয়েছিলাম  ।পরের দিন অর্থাৎ ১০/১০/২০২২  আমাদের গন্তব্য ছিল রানিখেত হয়ে কৌসানি ।    

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s