পরের দিন অর্থাৎ ১৪/১০/২০২২ সকালে মুন্সিয়ারি থেকে আবার কালামুনি টপ হয়ে সেই রোমাঞ্চকর রাস্তা ধরে বিরথি ফলস হয়ে রওনা দিলাম উদ্দেশ্য আলমোড়া । আলমোড়া সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১৬৪২ মিটার উচ্চতায় একটি সেনানিবাস শহর । মুন্সিয়ারি থেকে আলমোড়া ১৯৭ কিমি, সময় লাগে প্রায় সাত ঘণ্টা ।বাঘেশ্বর অবধি একই রাস্তা তারপর গোমতী নদীকে বাঁদিকে রেখে এগিয়ে যেতে হয় । সন্ধ্যার একটু আগে আমরা এসে পৌছালাম আলমোড়া । নৈনিতালের মতো আলমোড়া একটি জমজমাট শহর । রয়েছে মল ও বড় বড় নানা ধরনের দোকান । এই প্রথম উত্তরাখণ্ডে আলমোড়াতে টোটো গাড়ি চলতে দেখলাম । হোটেল পৌঁছে চলে গেলাম আলমোড়ার বাজার দেখতে । অনেকটা জায়গা নিয়ে নানা পসরা সাজিয়ে রয়েছে সারি সারি দোকান। দোকান ঘুরে পছন্দ মতন জিনিষ কিনে ফিরে আসলাম হোটেলে । কথায় কথায় জানতে পারলাম 1903 সালে রবিন্দ্রানাথ ঠাকুর তার গুরুতর অসুস্থ মেয়ে রেণুকার সাথে আলমোড়াতে সেন্ট মার্কের বাড়িতে ছিলেন। তিনি এখানে গীতাঞ্জলি লেখা শুরু করেন। 1961 সালে সেন্ট মার্কস হাউসের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ঠাকুর ভবন।
পরেরদিন সকালে হোটেলের ছাদে যেতেই চোখের সামনে দেখতে পেলাম নন্দা দেবী , ত্রিশূল , কামেট ( ভারতের ৩য় উচ্চতম শৃঙ্গ ) আরও নাম না জানা সব বরফে ঢাকা চূড়া । শরৎ কালের আকাশ । আকাশটা পুরো নীল , তার মাঝে বিক্ষিপ্ত সাদা মেঘ এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে । সামনে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে হিমালয় , আর সাদা চূড়াগুলি সূর্যের আলোতে সোনালি হয়ে উঠেছে । যতদিন বেঁচে থাকবো এই দৃশ্য ভুলতে পারবো না । আমাদের হোটেলের সামনে দেখলাম একটা ফুটবল ময়দান আর বাস্কেট বল খেলার জায়গা । অনেককেই দেখলাম প্রাকটিস করতে । হোটেল থেকে বেড়িয়ে পরলাম রাস্তায় । সকাল সকাল পাহাড়ের রাস্তায় হাঁটতে খুব ভাল লাগছিল । প্রান ভরে অক্সিজেন নিচ্ছিলাম ।কিছুটা যেতেই ডান হাতে দেখলাম রামকৃষ্ণ মিশন । ঢুকে পড়লাম ভিতরে । পরিবেশটা বেশ ভাল , তাই বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ফিরে আসলাম হোটেলে । কেননা আমাদের রওনা হতে হবে ১০৭ কিমি দূরে লালকুয়া স্টেশনে যেখান থেকে সন্ধ্যা বেলা আমাদের ট্রেন ।দুপুরের খাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে আমরা রওনা দিলাম লালকুয়া । ভীমতালকে বাঁদিকে রেখে নৈনিতালকে বিদায় জানিয়ে আমরা এসে পৌছালাম লালকুয়া । পথে পড়ল কুমায়ুনের সবচেয়ে বড় মার্কেট হলদিওয়ানি মার্কেট , কিন্তু সময়ের অভাবে আমাদের যাওয়া হোল না । সন্ধ্যা ৭ টা ২৩ মিনিটে আমাদের ট্রেন ছাড়ল হাওড়া অভিমুখে । আমাদের কুমায়ুন ভ্রমন শেষ হোল ।