অনেককেই মাঝে মাঝে বলতে শোনা যে তার মা কিছু করে না , তার মা একজন housewife । আবার অনেকে বলে যে তার বউ কিছু করে না , সে একজন housewife । অথচ আমরা যারা housewife সে উচ্চবিত্ত , মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যাই হোক না কেন জানি যে সংসারটাকে ভালমতো রাখতে গেলে সেই সকাল থেকে রাত অবধি কি নিদারুণ পরিশ্রম করতে হয় । যাদের স্বামীদের কাজের জন্য বাইরে থাকতে হয় , সেইসব গৃহিণীদের পরিশ্রম আরও বেশি । ধরা যাক যারা চাকরি করে তারা দৈনিক ১০ ঘণ্টা করে কাজ করলে পাঁচ দিনে হয় ৫০ ঘণ্টা , আর যদি ৬দিন কাজে যেতে হয় তাহলে হয় ৬০ ঘণ্টা । কিন্তু বিভিন্ন গবেষকদের মত অনুযায়ী একজন housewife সপ্তাহে ৯৮ ঘণ্টা কাজ করে কোন ছুটি ছাড়া । মার্কিন গবেষণায় উঠে এসেছে, বাড়িতে প্রত্যেক গৃহিণীর বাৎসরিক কাজের মূল্যমান ১ লাখ ১৭ হাজার ডলার বা এক কোটি টাকার বেশি। ২০২১ সালে চীনের এক আদালত যুগান্তকারী এক রায়ে একজন গৃহিণীকে তার ‘আনপেইড লেবার’ বাবদ সাড়ে ছয় লাখ রেনমিনবি (চীনের মুদ্রা) বা ৮৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে বলা হয় তাঁর সাবেক স্বামীকে। অথচ অনেককেই অবজ্ঞা সহকারে বলতে শুনি আমার মা বা বউ কোন কাজ করে না তারা just housewife । বরঞ্চ সবার গর্বের সাথে জোড় দিয়ে বলা উচিৎ যে আমার মা বা বউ আমাদের বাড়ির Domestic engineer, household CEO , director of child development, homemaker, family manager, home engineer, home economist, woman of the house, lady of the house আরও ইত্যাদি ইত্যাদি । আমার মার বা বউয়ের main occupation is caring for her family, managing household affairs, and doing housework । যেন নারীকে চাকরি বাকরি কিছু একটা করতেই হবে! যেন গৃহিনী হওয়া খুব অপমানের!।আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে গৃহিণী শব্দটি এখনো অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়নি বা সমাজব্যবস্থা ওভাবে ভাবতে শেখেনি তাই গৃহিণী আমরা পেশা হিসেবে ভাবতে পারি না। অথচ আমরা যারা housewife তারা আমাদের tax returns বা official documents এ পরিষ্কার ভাবে লিখতে পারি homemaker as our occupation। তার মানে এই নয় যে যেসকল গৃহিণীরা চাকরি করছে তারা ভুল করছে বা যারা housewife তারা ভুল করছে ।শুধু এটা বলতে চাই যে housewifeদের অবজ্ঞা নয় , তাদের নিয়ে গর্ব করা উচিৎ। আজ অনেক housewife এর নিরলস চেষ্টায় তাদের সন্তানরা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত । তাদের সন্তানরা যদি বলে যে আমার মা কিছু করে না , বাড়িতে থাকে ,তাহলে আমার মনে হয় ওই মায়েদেরকে অসন্মান করা হচ্ছে । অনেকেই ভাবেন যে নারীদের মুক্তি একমাত্র অর্থনৈতিক মুক্তিতে । অস্বীকার করছি না অর্থনৈতিক মুক্তির প্রয়োজনীয়তা আছে। তবে অর্থই নারী মুক্তির একমাত্র পথ তা যেমন নয় তেমনি গৃহিনী মানেই শৃঙ্খলিত তা নয়। আসলে, নারী মুক্তি একমাত্র নারীর ক্যারিয়ারের মাঝেই লুকায়িত না বরং নারীর প্রাপ্য সন্মান ও অধিকারে তা নিশ্চিত হয়, তার সংগী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে যথাযথ সন্মান করছেন কিনা তাতে। জাতীয় গৃহিণী দিবস বা হাউসওয়াইফ ডে প্রতি বছরের ৩ নভেম্বর উদযাপন করা হয়।আমার মনে হয় এই দিনটি আলাদাভাবে পালন না করে প্রতিদিন সবাই মিলেমিশে গৃহিণীর তত্ত্বাবধানে ঘরের কাজগুলো করলে একদিকে যেমন গৃহিণীর কায়িক শ্রম কিছুটা লাঘব হয়, তেমনি পারিবারিক সম্পর্কগুলোও আরও গাঢ় হয়। গৃহিণীর কাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলায়। বিশেষত বাড়ির শিশুদের এই ব্যাপারে ছোটবেলা থেকেই উদ্বুদ্ধ করা উচিত।
পরিশেষে বলতে হয় – কাব্য করে অনেকেই বলে “ সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে” । কিন্তু রমণী নিজে সুখে না থাকলে কীভাবে সবাইকে সুখে রাখবেন, সেটা যদি সবাই ভেবে দেখে তাহলেই সংসার সুখের হবে ।