সেদিন ঘরে বসে আড্ডা দিতে দিতেই ঠিক হয়ে গেল পরেরদিনের প্রোগ্রাম । আমাদের লক্ষ পশুপতি ছাড়িয়ে নেপালের কন্যাম , তারপর জোড় পুখরী , লেপচা জগত হয়ে কার্শিয়াং দিয়ে শিলিগুড়ি ফিরে আসা । ফোনেই গাড়ি ঠিক হয়ে গেল । ভোর সাতটায় বেড়িয়ে পড়লাম । শুকনা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটে চলল শিলিগুড়ি থেকে ৪৭ কিমি দূরে মিরিকের উদ্দেশে । মিরিকে আমাদের থামার উদ্দেশ্য ছিল শুধু প্রাতরাশের জন্য ।মিরিকে জগজিৎ হোটেলে আমরা আমাদের প্রাতরাশ সারলাম । যেহেতু মিরিক আমাদের অনেকবার দেখা তাই সময় নষ্ট না করে আমরা এগিয়ে চললাম ওখান থেকে ১৬ কিমি দূরে ভারত , নেপাল সীমান্তে অর্থাৎ পশুপতি নগরে । ওখান থেকে আমাদের লক্ষ ১৮ কিমি দূরে নেপালের ইলাম জেলার পর্যটন কেন্দ্র কন্যাম। ভারতীয় চেকপোস্ট আমাদের সবার আধার কার্ড ও গাড়ির কাগজপত্র দেখে নেপালীয় চেকপোস্টে যেতে বলল । ওখান থেকে ভারতীয় টাকার ৩৫০ টাকা (নেপালি ৫০০ টাকা ) দিয়ে গেটপাস বানিয়ে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলল পশুপতি মার্কেট ছাড়িয়ে কন্যামের দিকে । পথে পড়ল ছোট এক টিলার ওপর বিরাট এক বুদ্ধ মূর্তি । নেপালের বিভিন্ন গ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এসে পৌছালাম কন্যামে । সারা পাহাড় জুড়ে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছে চা বাগান পর্যটকদের জন্য । রয়েছে বেশ কটা সুন্দর দেখতে রিসোর্ট । রোদ আর মেঘের লুকোচরি কন্যামকে আর আকর্ষিত করে তুলছিল ।কন্যাম ঘিরে নানারকমের পসরা সাজিয়ে বসে ছিল ওখানকার মানুষ । এই মনোরম পরিবেশে সারাদিন কোথা দিয়ে কেটে যাবে বোঝাই যাবে না । তবে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে ভারতীয় ভূখণ্ডে ফিরে আসতে হবে । যেহেতু আমাদের আরও বেশ কটা জায়গা যাওয়ার ইচ্ছা তাই কন্যামকে বিদায় জানিয়ে আমরা চললাম পশুপতি নগর থেকে ১০কিমি দূরে সীমানা । যেখান থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে সান্দাকফু , ফালুত , মেঘমা , মানেভঞ্জন পরিষ্কার দেখা যায় । সীমানা ছাড়িয়ে আমরা ৬ কিমি দূরে জোড়পুখরি মানে জোড়া লেক দেখতে চললাম । ওখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা খুব সুন্দর দেখা যায় । জোড়পুখরিতে থাকার সুবন্দোবস্ত আছে । পাশাপাশি দুটো ছোট লেকের পরিষ্কার জলে খেলে বেড়াচ্ছে নানা রকমের মাছ আর সঙ্গে রয়েছে কিছু হাঁস ।ওখান থেকে ৬ কিমি দূরে সুখিয়াপোখরি হয়ে পৌঁছে গেলাম লেপচাজগত । রাস্তায় মানেভঞ্জন যাওয়ার রাস্তা দেখলাম । ওখান থেকে সবাই সান্দাকফু যায় । জোড়পুখরি থেকে মানেভঞ্জন মাত্র ৮ কিমি । দার্জিলিং থেকে ১৪কিমি দূরে পাহাড়ে ঘেরা ওক , পাইন, ফার ও রডোডেনড্রনে মোড়া এই লেপচাজগত মানে লেপচা আদিবাসীদের গ্রাম এখন পর্যটকদের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে । অনেক Home stay আছে থাকার জন্য । এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রাজকীয় রুপ দেখার মত । প্রচুর দেবদারু আর ইউক্যালিপটাসের গাছ দেখলাম ।শুনেছি প্রচুর পাখি আসে এখানে । জঙ্গলের আলো আঁধারের শান্ত রুপ মনের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রশান্তির সৃষ্টি করে যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না ।বেশ কিছুক্ষণ লেপচাজগতে কাটিয়ে ঘুম হয়ে আসলাম কার্শিয়াং । ঘড়িতে তখন ৫.৩০ বাজে । আমরা অনুভব করতে লাগলাম যে আমাদের খিদে পেয়েছে । শিলিগুড়ি যাওয়ার রাস্তার উপরেই ঢুকে গেলাম লাঞ্চ কাম ডিনার করতে কার্শিয়াং ডাইরিতে । খাওয়া দাওয়া সেরে রোহিণী হয়ে ফিরে আসলাম শিলিগুড়ি । সারাদিনের আনন্দ আমাদের ক্লান্তিকে জয় করেছিল ।