ঘরের মধ্যে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে গল্প করছে ।
লালা – কিরে তাপস ? তোর চা করা হোল ? আমার চায়ে চিনি দিস না কিন্তু ।
বানী – আমার চায়েও না । আমাদের সুগার নেই তবুও আমরা দুজনে অনেকদিন চায়ে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি ।
তাপসী – আমরাও । direct চিনি যত কম খাওয়া যায় । চিনির খরচা আমাদের এখন অনেকটা কমে গেছে । সবার জন্য চিনি ছাড়াই চা কর।
( ভিতরে রান্না ঘরে তাপসকে দেখা যায় চা বানাতে ) তাপস – চা রেডি । সবার জন্য চিনি ছাড়াই করেছি । ( তাপস চা নিয়ে ঘরে ঢোকে )
( তাপসের হাত থেকে চায়ের ট্রে নামিয়ে নেয় তাপসী । তারপর সবাইকে এক এক করে দেয় )
তাপসী – বানী , লিপি কোথায় গেল রে ?
বানী – ঐ তো জানলার ধারে ভাবুক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
( লিপি জানলা দিয়ে একমনে বাইরে তাকিয়ে আছে ।)
লালা – আরে , কি ব্যাপার লিপি ?জানলা দিয়ে একমনে উদাস নয়নে বাইরে তাকিয়ে কি দেখছো ?
লিপি – এই যতদূর চোখ যায় দেখছি আর ভাবছি আমাদের প্রিয় এই দুটি চোখ পেয়েছি বলে এই সুন্দর পৃথিবীটাকে দু চোখ ভরে দেখতে পাচ্ছি ।
তাপস – ঠিক । আমাদের পাঁচটা ইন্দ্রিয়র মধ্যে অন্যতম ইন্দ্রিয়ই তো হল এই চোখ।( তাপস বসতে বসতে বলে )
লালা – অথচ, দেখ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই চোখের উপযুক্ত যত্ন নিতে আমরা ভুলে যাই।
তাপসী -ওরে লিপি, এদিকে আয় । চা তোকে ডাকছে তো । ( লিপি ওদের সাথে যোগ দেয়)
বানী – ( বানী চা নিয়ে লিপির দিকে যেতে যেতে ) দেখ এটা তো মানতে হবে যে আমাদের চোখের দৃষ্টি আছে বলে আমরা প্রানভরে সব দেখতে পাচ্ছি ।
তাপসী – একবার তাদের কথা ভাবতো , যাদের চোখ থাকা স্বত্বেও দৃষ্টিহীন ।
তাপস – কিছুই তো দেখতে পায় না তারা ।পৃথিবীটা তাদের কাছে শুধুই অন্ধকার ।
লালা – অন্ধকারে আমাদের হাঁটতে যেমন লাগে , আমার মনে হয় দৃষ্টিহীনদেরও সবসময়ই তেমন লাগে ।
লিপি – (সবার কাছে আসতে আসতে ) ঠিক ।দৃষ্টিহীন হয়ে বেঁচে থাকা বড়ই কষ্টের । চোখ ছাড়া জীবন ভাবাই যায় না ।
বানী – তাইতো আমাদের সবসময় চোখকে বেশি করে মুল্য দেওয়া উচিৎ । চোখের ভালমতো যত্ন নেওয়া উচিৎ ।
লালা – হাঁ , একদম ছোটবেলা থেকে চোখের যত্ন নেওয়া সবার শেখা উচিত যাতে সারাজীবন চোখ দিয়ে সব কিছু ভালমতো দেখতে পারা যায় ।
তাপসী – জানো , অনেককে দেখেছি হাত না ধুয়ে চোখে হাত দিতে বা অপরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে
লিপি – তারা বুঝতেই পারছে না যে , যেকোন মুহূর্তে তাদের চোখের কি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে
বানী – চোখ যে কত বড় সম্পদ সেটাই তারা বোঝেই না নাহলে নোংরা হাত চোখে দেয়
তাপস – আরে , রাত্রে শোবার আগে প্রতিদিন পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ ভাল করে ধুয়ে নেওয়া উচিৎ যাতে সারাদিনে চোখে যত ময়লা জমে সব পরিষ্কার হয়ে যায় ।
লিপি – চোখ ভাল রাখতে এটা প্রতেকের করা উচিত, তাইনা, বল ?
লালা – আমরা জানি কম্পিউটার, টিভি ও মোবাইল দেখার সময় চোখের পাতা কম পিটপিট করে ।
তাপস – তাই প্রতেক ৩০ সেকেন্ড পর পর চোখের পাতা পিটপিট করানো উচিত তাহলে চোখ ভাল থাকে । কি তাইতো ?
লিপি – তোমরা ২০ -২০-২০ নিয়মটা জান ?
তাপসী – আমি T 20 জানি । কিন্তু ২০ -২০-২০ নিয়মটা কি, জানিনা ।
লালা – নিয়মটা হোল – কম্পিউটার, টিভি, মোবাইল দেখার সময় বা বই পড়ার সময় প্রতেক ২০ মিনিট অন্তর ২০ ফুট দূরে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকানো , তাইতো ?
তাপস –হাঁ , এই নিয়ম চোখের চাপ না বাড়তে খুব সাহায্য করে
বানী – সত্যি এই কটা নিয়ম মেনে চললে যদি চোখ ভাল থাকে তাহলে তো সবার মেনে চলা উচিত ।
তাপসী – আচ্ছা, চোখ ভাল রাখতে কি কি খাওয়া উচিত তোমাদের জানা আছে ?
তাপস – লাল নটে , পালং , সজনে
লালা – গাজর, ঘন সবুজ রঙের শাক ও সবজি
বানী – পেপে , আম ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল,
লিপি – বাদাম, মিষ্টিআলু , দুধ
তাপসী – ডিম, মাছ
তাপস – হাঁ , মাছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে , যেটা চোখের জন্য খুব উপকারী।
বানী – আরেকটা কথা । চোখকে নিয়েও মানুষ কুসংস্কার করতে ছাড়েনি
তাপসী – ঠিক বলেছিস । ডান চোখ নাচা বা বাচোখ নাচা নিয়ে কুসংস্কারের কথা বলছিস তো ।
বানী – হাঁ
তাপস – আরে চোখ লাফানো হচ্ছে একটি শারীরিক প্রক্রিয়া।
লিপি – মূলত পেশীর সংকোচনের কারণেই চোখের পাতা লাফায় বলে জানি । কি তাইতো ?
লালা – পরিমিত ঘুমের অভাব বা অন্য কোন কারণে ক্লান্তি থেকেও চোখের পাতা লাফানো শুরু হতে পারে। ঘুমের অভাবে চোখের পাতা লাফালে পরিমিত ঘুম হলেই সেরে যাবে।
তাপস – অনেক সময় চোখের স্ট্রেস থেকেও চোখের পাতা লাফায় এটাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত ।
লালা – একদম ঠিক বলেছিস । তবে মাঝে মাঝে চোখের পরীক্ষা করানো উচিত
লিপি – আরেকটা জিনিস ।
বানী – কি ? ডান চোখ বন্ধ করে একবার বাঁ চোখ দিয়ে দেখা , আরেকবার বাঁ চোখ বন্ধ করে ডান চোখ দিয়ে দেখা । দু চোখে ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে কিনা পরীক্ষা করা ।তাইতো ?
তাপসী – তাহলে তুই বলছিস young ছেলে মেয়েরা যে চোখ মারে সেটা ভাল । এক চোখ বন্ধ করে আরেক চোখে দেখতে পাচ্ছে কিনা তাহলে বুঝতে পারবে ।
তাপস – তাহলে young ছেলে মেয়েদের বলে দিতে হবে তোরা এবার থেকে দুচোখ মারবি ।
(সবাই হেসে ওঠে )
লিপি – এটা ছাড়াও চোখের জন্য একটা দারুন ব্যায়াম আছে ।
তাপস ও লালা – কি রকম , কি রকম ?
লিপি – এইভাবে চোখ ঘোরালে চোখের ভাল ব্যায়াম হয় ।( সাথী দেখাতে থাকে )
তাপস – তাহলে তো ট্যারা মেরে দেখাটাও চোখের জন্য ভাল । তাইতো ?
লালা – ওরে এই বয়সে এসব কথা এতো জোড়ে বলিস না ।
(সবাই জোড়ে জোড়ে হেসে ওঠে )
বানী – এই এক মিনিট , এক মিনিট , আমি একটা সিরিয়াস কথা বলবো ?
তাপসী ও লিপি – কহ নারী
বানী – না মানে আমি বলছিলাম আচ্ছা আমরা সবাই চক্ষুদান করতে পারি না ?
লিপি – এ তো অতি উত্তম প্রস্তাব । মরে যাওয়ার পর আমদের চোখ যদি কাউকে দৃষ্টি দিতে পারে তার থেকে আর ভাল কি হতে পারে ।
তাপসী – আমি একদম রাজি । মরণোত্তর চক্ষুদান তো একটি মহৎ সেবা।এ ব্যাপারে সবার এগিয়ে আশা উচিৎ ।
লালা – অনেকের ধারণা মৃত্যুর পর চোখ নিয়ে নিলে মুখের চেহারা নষ্ট হয়ে যায় । একদম ভুল ধারণা । কর্নিয়া নেয় তো শুধু, তাই চোখের চেহারা স্বাভাবিক থাকে ।
তাপস – বয়স, লিঙ্গ ও রক্তের গ্রুপ নির্বিশেষে যে কেউ চোখ দান করতে পারে। যারা চশমা বা লেন্স ব্যবহার করে বা যাঁদের চোখের অপারেশন হয়েছে তাঁরাও চোখ দান করতে পারে।
বানী – আচ্ছা কারও যদি ডায়াবেটিস , উচ্চ রক্তচাপ বা হাঁপানি থাকে তাহলে কি তারা চোখ দান করতে পারবে ?
লালা – পারবে । এইডস, হেপাটাইটিস বি বা সি, জলাতঙ্ক, টিটেনাস, ম্যালেরিয়ার মত অন্ত্রের সংক্রমণ যাঁদের আছে তাঁরা শুধু চোখ দান করতে পারবে না।
তাপসী – কিন্তু কিভাবে চোখ দান করব ?
তাপস – নিকটবর্তী কোন আই ডোনেশন ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করতে হবে ও একটি অঙ্গীকার ফর্ম ফিল আপ করতে হবে।
লিপি – তাহলে এটাই ঠিক হোল যে আমরা সবাই খুশি মনে চোখ দান করবো এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের বলে যাব।
সবাই ( ক্যামেরার দিকে ঘুরে) – আর আপনারা ?
সবার নাম ভেসে আসে আর নিচের লেখা গানটা চলতে থাকে ।
চোখের তারায় আলোয় ভরা এ বিশ্ব সংসার ,
আলোর অভাবে সেথায় শুধুই গভীর অন্ধকার।
অন্ধকারকে কাটিয়ে আলোর দিশা দেখাও,
দৃষ্টিহীনে দৃষ্টি দিয়ে এগিয়ে চলা শেখাও ।।
সুন্দর এই জগতটাকে যারা দেখতে নাহি পারে
দুঃসহ সেই মনের ব্যাথা জ্বলছে তাদের অন্তরে ।
দৃষ্টিহীনে দাও আলো এই যে মোদের প্রার্থনা
চক্ষুদানে দূর কর সব দৃষ্টিহীনের যন্ত্রণা ।।