একপারে অতীতের নবদ্বীপ আর আরেকপারে আজকের মায়াপুর, মাঝখানে হুগলী নদী তার আপন গতিতে বয়ে চলেছে । অবশ্য একা হুগলী নদী নয় তার সাথে মিশেছে জলঙ্গি নদী । আর যেখানে জলঙ্গি নদী এসে হুগলী নদীতে মিশেছে তার পাশের নগরের নাম আজকের মায়াপুর । এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল শ্রী চৈতন্যদেবের ভক্তদের পুন্যভুমি । চৈতন্যদেবের জন্মস্থানকে কেন্দ্র করে এই দুই স্থানে গড়ে উঠেছে অনেক মন্দির । তার মধ্যে উল্লেকযোগ্য হোল International Society of Krishna Consciousness বা ISKON দ্বারা ১৯৬৭ সালে প্রভুপাদের উদ্যোগে নির্মিত শ্রী শ্রী চন্দ্রোদয় মন্দির।কলকাতা থেকে ১৩০ কিমি দূরে মায়াপুর । তাই ২৩/০৩/২০২২ সকালসকালমন্দিরে পৌছানোর ইচ্ছা নিয়ে ভোড় ৬ টায় গড়িয়া থেকে আমরা চারজন গাড়ি নিয়ে বেড়লাম বাইপাস ধরে বারাসাত অতিক্রম করে, national highway ধরে , কৃষ্ণনগর পেরিয়ে, কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বাঁদিকে ঘুরে আরও ১১ কিমি মত গেলে মায়াপুর ইস্কন মন্দিরে পৌছানো যাবে । কলকাতা থেকে ট্রেনে কৃষ্ণনগর হয়ে বা নবদ্বীপ হয়েও মায়াপুর যাওয়া যায় । এছাড়া বাসে কলকাতা থেকে সোজা মায়াপুর যাওয়া যায় ।ISKON কলকাতা থেকেও মায়াপুর মন্দির যাওয়ার বাস পাওয়া যায় ।
বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর অবধি national highway এর রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে আমাদের মায়াপুর পৌছাতে ৫ ঘণ্টা লেগে গেল । তাই আসার সময় নবদ্বীপ – ডানকুনি হয়ে ফিরলাম । সুন্দর রাস্তা ।
ব্রেকফাস্ট যেহেতু আমাদেরে সাথেই ছিল তাই খাওয়ার জন্য আমাদের সময় নষ্ট হয়নি । মায়াপুর ISKON মন্দিরে ঢুকতেই গাড়ির পারকিং বাবধ ১২০ টাকা দিতে হোল । ঢুকলেই ২৪ ঘণ্টার জন্য পারকিং ১২০ টাকা । যেহেতু প্রধান শ্রী শ্রী চন্দ্রোদয় মন্দির প্রতিদিন দুপুর ১ টা থেকে বিকাল ৪ টা অবধি বন্ধ থাকে , তাই আমরা গাড়ি পারকিংএ রেখে তাড়াতাড়ি চললাম বিগ্রহ দর্শনে । মন্দিরের বাইরে নোটিশে লেখা আছে যে মোবাইল, কোন ক্যামেরা , ল্যাপটপ , ব্যাগ নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করা যাবে না । আর লেখা আছে মাস্ক ছাড়া মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ । জুতো আর বাকি জিনিষ রাখার আলাদা counter আছে । পয়সা লাগে না তবে দান বাক্স রাখা আছে । অনেককেই দেখলাম দান বাক্সে টাকা ফেলতে । হাত ধোয়ার জায়গা রয়েছে পাশে । যথারীতি আমরাও হাত ধুয়ে মন্দিরে প্রবেশ করলাম । মন্দিরের দুই স্থানে দুই রকমের দারুন সুন্দর বিগ্রহ আছে । একদল ভক্ত হরিনাম করে চলেছে । তবে দেখলাম বেশীরভাগ দর্শনার্থীর মুখে মাস্ক নেই । আর কয়েকজনকে কাপড়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়েও ঘুরতে দেখলাম। মন্দিরের ভিতরে নানাবিধ সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে । তাই এক গেরুয়া বসন ধারি মায়াপুরবাসিকে জিজ্ঞেস করলাম লেদারের money bag নিয়ে প্রবেশ করা যায় কি ? শুনলাম কোন আপত্তি নেই । বললেন money bag allow না করলে লোকে জিনিষ কি করে কিনবে ? দুপুর ১২ টার সময় আবার ১৫ মিনিটের জন্য মন্দিরের বিগ্রহকে পরদা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হোল । পাশেই তৈরি হচ্ছে আসাধারন দেখতে বিশাল আরেক মন্দির । যেটা নাকি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় Vedic temple । বিশাল এরিয়া নিয়ে মায়াপুরের এই কর্মকাণ্ড ।আর এই কর্মকাণ্ড ঘুরে দেখার জন্য ইস্কন পরিচালিত বেশ কটা টোটো আর গরুর গাড়ি আছে। নিজেদের গাড়ি নিয়ে ঘোরা যাবে না । বেশ কটা বিভিন্ন দামের Guest House আছে যেখানে টাকার বিনিময়ে থাকা যায় । মন্দির প্রাঙ্গণে ঝাল মুড়ি, মোমো, ধোসা , ইডলি থেকে শুরু করে সব পাওয়া যায় । বিভিন্ন দামে প্রসাদ খাওয়া যায় ।বিভিন্ন প্রসাদের বিভিন্ন দাম । এক এক প্রসাদের বিতরন এক এক জায়গায় ।
আছে ২০০ গরু নিয়ে বিশাল গোশালা এবং বিক্রি হচ্ছে ওখানকার গরুর দুধে তৈরি নানা খাদ্যদ্রব্য ।আছে Full dome Theatre যেখানে শ্রীকৃষ্ণের ওপর ৩০ মিনিটের সিনেমা দেখান হয় । ৪০ টাকা করে টিকিট । তার পাশে আছে রাধা মাধব মন্দির ।
যেহেতু ‘গোবিন্দা’ রেস্তরেন্ত দুদিনের জন্য বন্ধ ছিল তাই আমরা আরেকটা রেস্তরেন্তে ৯৫ টাকা দিয়ে প্রসাদের থালি কিনে খেলাম । ছিল ভাত ,ডাল , আলুর চপ , রাজমা , পনীরের তরকারি আর গোলাপ জামুন । বসে খাওয়ার ভাল ব্যবস্থা । দেখলাম গদাভবনে এক বিশাল প্রসাদ হল যেখানে একসাথে ১০০০ জন মাটিতে বসে খেতে পারে । একদিকে বেশ কিছু টেবিল রাখা আছে সেখানেও অনেকে খাচ্ছে ।খাওয়া দাওয়া সেরে , মন্দির পরিক্রমা করে আমরা চললাম কিছুটা দূরে জলঙ্গি আর হুগলী নদীর মোহনা দেখতে । দেখলাম নদী পথে অনেককেই ওপারে নবদ্বীপ যেতে ।ওটাই মায়াপুরের ফেরিঘাট । মায়াপুর ছেড়ে আমরা এগিয়ে চললাম কৃষ্ণনগরের দিকে লক্ষ্য পুতুল পট্টি ও ৩০০ বছরের বেশি পুরানো রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজবাড়ী । তারপর নবদ্বীপ হয়ে ডানকুনি দিয়ে ১৬ ঘণ্টা বাইরে কাটিয়ে ফিরে আসলাম নিজ গৃহে ।